শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, আমরা যদি পণ্যে ও সেবার মান ধরে রাখতে পারি, তাহলে বৈশ্বিকক বাণিজ্যে আমাদের পণ্যের রপ্তানি সম্প্রসারণে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। দেশীয় অর্থনীতির সম্প্রসারণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের আস্থা বৃদ্ধিকল্পে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড নিরলসভাবে কাজ করছে বলে তিনি অভহিত করেন।
বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস-২০২৩ উপলক্ষে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড (বিএবি) এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) যৌথভাবে আয়োজিত ‘ভবিষ্যৎ বিশ্ব বাণিজ্যে অ্যাক্রেডিটেশন’ বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি মন্তব্য করেন।
ঢাকা চেম্বার অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা এবং ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মোঃ সামীর সাত্তার বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএবি’র মহাপরিচালক মোঃ মনোয়ারুল ইসলাম।
শিল্প মন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং পরিবেশ প্রভৃতি শিল্পখাতের সাথে অ্যাক্রেডিটেশন বেশি মাত্রায় জড়িত।
তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের উৎপাদিত পণ্যের রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে আমাদেরকে পণ্যের অ্যাক্রেডিটেশন বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে গুণগত মানসম্পন্ন অবকাঠামো নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, ভবিষ্যতে ব্যবসা-বাণিজ্যের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অ্যাক্রেডিটেশনের কোন বিকল্প নেই এবং বৈশ্বিকক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে উদ্যোক্তাদেরপণ্যের মান বাজায়ে রাখার উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের সক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়ানোর উপর জোরারোপ করেন। তিনি জানান, ইতোমধ্যে ১২৪টি প্রতিষ্ঠানকে অ্যাক্রেডিটেশন সনদ প্রদান করা হয়েছে। শিল্প সচিব বলেন, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আমাদের উদ্যোক্তাদের ব্যবসায় ব্যয় হ্রাস ও সময় বাঁচাতে সহায়তা করবে।
তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের ২১টি পণ্যের অ্যাক্রেডিটেশন সনদ ভারতের ‘ইন্ডিয়া ন্যাশনাল অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড লিমিটেড (এনএবিএল)’ হতে গ্রহণ করতে হয়। সচিব আরো বলেন, বিএবি সম্প্রতি হালাল পণ্যের অ্যাক্রেডিটেশন প্রদান উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যেটি এখাতের পণ্য রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মোঃ সামীর সাত্তার বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশ একটি আমদানি নির্ভর দেশ হতে ক্রমেই রপ্তানিমুখী দেশে পরিণত হচ্ছে এবং ২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৪১.৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তিনি বলেন, বৈশ্বিকক বাণিজ্যে নিজেদের পণ্যের আন্তর্জাতি স্বীকৃতির ক্ষেত্রে অ্যাক্রেডিটেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ২০২৬ পরবর্তী সময়ে আমাদের স্থানীয় উৎপাদিত পণ্যের কমপ্লাইয়েন্স বজায় রাখার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা পালন করবে এবং এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও জিএসপি প্লাস সহ অন্যান্য বিষয়ে বাণিজ্য সুবিধা আদায়ে আমাদেরকে অ্যাক্রেডিটেশনের উপর আরো বেশি হারে জেরারোপ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শিল্পখাতে আমাদের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি টেকসই পরিবেশ তৈরিতে অ্যাক্রেডিটেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড (বিএবি)’র মহাপরিচালক মোঃ মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বিশ্ব এখন জোর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দিকে এবং এর ফলে নিত্য-নতুন প্রযুক্তির দুয়ার উন্মোচিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সাথে সামঞ্জস্য রেখে নতুন শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও মুক্ত বাজার অর্থনীতির প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে বাণিজ্যের সম্প্রসারণের পাশাপাশি সচেতন ভোক্তাদের মাঝে পণ্য ও সেবাকে টিকেয়ে রাখতে অ্যাক্রেডিটেশনের কোন বিকল্প নেই তিনি মত প্রকাশ করেন।
তিনি জানান, অ্যাক্রেডিটেশন পণ্য ও সেবা ভুক্ত সকল দেশে বিনা বাধায় প্রবেশ করতে পারে, যা বৈদেশিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। বিএবি মহাপরিচালক বলেন, আন্তর্জাতিক অ্যাক্রেডিটেশন ফোরামের সদস্যপদ অর্জনের লক্ষ্যে বিএবি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।