আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারে নিউজপ্রিন্টের মৃল্যবৃদ্ধি, পরিবহন খরচসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিনের পত্রিকার দাম ২ টাকা বাড়লো। শনিবার থেকে আমাদের সময়ের দাম ৭ টাকা।
কোভিড পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরুর মুহূর্তে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বড় ধরনের বাধা হিসেবে আবির্ভূত হয়। এ যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। করোনা ও যুদ্ধের মিলিত প্রভাবে বিশ্বের নিউজপ্রিন্টের উৎপাদনে ধস নামে। এক হিসাবে দেখা গেছে, ২০১৭ সালে বিশ্বে যে পরিমাণ নিউজপ্রিন্ট উৎপাদন হতো করোনা ও যুদ্ধের কারণে ২০২২ সালে অনেক কমে গেছে। স্বাভাবিকভাবে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দামও বেড়েছে।
গত এক বছরেই নিউজপ্রিন্টের দাম বেড়েছে শতভাগেরও বেশি। নিউজপ্রিন্টের পাশাপাশি ২০ থেকে ৩০ শতাংশ হারে বেড়েছে সংবাদপত্র শিল্পের অন্যান্য উপকরণ যেমন-কালি, প্লেট ইত্যাদির দাম। এর ফলে সংবাদপত্রের উৎপাদন ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে।
সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নোয়াব বাজেট ঘোষণার আগে সংবাদপত্রের বিদ্যমান সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন ধরনের আরোপিত কর প্রত্যাহার বা কমানোর দাবি জানায়। কিন্তু বাজেটে এ বিষয়ে কোনো সাড়া দেখা যায়নি। সংবাদপত্রের ওপর আরোপিত কর এখন ৩০ শতাংশ। অথচ সংবাদপত্রের মতো রুগ্ন শিল্পের ওপর কর ১০ শতাংশের বেশি হওয়ার কথা নয়। সংবাদপত্রের প্রধান কাঁচামাল নিউজপ্রিন্ট। কিন্তু কাস্টমস প্রসিডিউর কোড তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকায় নিউজপ্রিন্টের আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে, নিউজপ্রিন্টের ওপর বর্তমানে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক দিতে হয়। এ ছাড়া এআইপি ও এটি দিতে হয় ১০ শতাংশ। আবার সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন আয়ের ওপর উৎসে কর রয়েছে ৪ শতাংশ। সব মিলিয়ে সংবাদপত্র শিল্প এক নজিরবিহীন সংকটকাল অতিক্রম করছে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দুটি পথ- এক. সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানো। দুই. উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে মূল্য সমন্বয় করা। বাস্তবতা বিবেচনায় আগামীকাল শনিবার থেকে আমাদের সময় ৫ টাকা থেকে ২ টাকা বৃদ্ধি করে ৭ টাকা করা হলো। দার্শনিক আর্থার শোপেনহাওয়ার (১৭৮৮-১৮৬০) বলেছেন, সংবাদপত্র হলো- ‘সেকেন্ড হ্যান্ড অব ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি’ অর্থাৎ বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম দ্বিতীয় হাত। প্রিয় পাঠক, আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা এক্ষেত্রে একান্ত কাম্য। এ শিল্প টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার।