বাংলাদেশ এবং বিশ্বজুড়ে যে অর্থনৈতিক সংকট চলছে তা ২০২৪ সালের আগে কাটবে না বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালাগ (সিপিডি) এর ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, বৈদেশিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বিনিময় হার এবং মূল্যষ্ফীতিতে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা দ্রুত শেষ হবে না।
মঙ্গলবার অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘ইআরএফ সংলাপ’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
দেবপ্রিয় বলেন, দেশের অর্থনীতি সংকটে নেই, তবে চাপে আছে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে এখন যে অস্থিরতা চলছে, তা সহসাই কাটবে না। ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত এ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থাকবে।
‘যারা বলছেন শিগগিরই সংকট কেটে যাবে, তারা চটজলদি রাজনৈতিক চিন্তা থেকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন। এতে বাজারে অস্থিতিশীলতা ও আস্থাহীনতা তৈরি হয়।’
জ্বালানি তেলের দাম ৪৭ শতাংশ বাড়িয়ে ৪ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় বলেন, অনৈতিক অব্যবস্থাপনার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সুদের হার না বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জিডিপির অভিলাষ পূরণ করা নিয়ে সরকার কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দে আছে। এজন্য সুদের হার এখনো বাড়াচ্ছে না। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।’
ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, পুঁজিবাদের বিকাশে সব দেশেই লুণ্ঠন হয়। বাংলাদেশে প্রথমে আর্থিক খাতে লুণ্ঠন হয়েছে। পরে হয়েছে পুঁজিবাজারে। এখন সরকারি প্রণোদনায় অতি মূল্যায়িত প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠান লুণ্ঠন করছে।
তবে উন্নত বিশ্বে এসব লুণ্ঠনের পর কিছু সংস্কার হয়ে বিচার ব্যবস্থা, প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। বাংলাদেশে তা দেখা যাচ্ছে না। এখানে প্রতিযোগিতার চেয়ে সংযোগকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফলে জবাবদিহিতার জায়গা দুর্বল হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে প্রধান রাজনৈতিক শক্তির।
জবাবদিহিতার দুর্বলতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হওয়ার ফলে জনসাধারণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত না হওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
গেল এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ সময়ে আমরা নিম্ন আয় থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ে উন্নীত হয়েছি। এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য নির্বাচিত হয়েছি। সফলভাবে এমডিজি বাস্তবায়ন করেছি, এসডিজি বাস্তবায়নে এগিয়েছি।’
তবে এই অগ্রগতি আগামী দিনগুলোতে টেকসই হবে না যদি চারটি বিচ্যুতি সরকার দূর করতে না পারে। তার মতে ওই চারটি বিচ্যুতি হলো, জিডিপির অনুপাতে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ ও কর আহরণ বৃদ্ধি না পাওয়া, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের অভাব এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বৈষম্য।
‘এসব বিচ্যুতি সঠিকভাবে মোকাবিলা করা না গেলে পরবর্তী উত্তরণ পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। একইসঙ্গে যে অর্জন হয়েছে সেটিও টেকসই হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’–বলেন এই অর্থনীতিবিদ।
রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি শারমিন রিনভী। ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।