২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের যাত্রাকে মসৃণ করতে এদেশে বিনিয়োগের জন্য বিশ্বের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আপনারা আসুন, বিনিয়োগ করুন, বাংলাদেশ সবসময় প্রস্তুত আপনাদের আগমনের জন্য। বাংলাদেশকে নিজের দেশ মনে করেই বিনিয়োগ করুন।’
শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট-২০২৩’ এর উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির সহযোগিতায় (বিডা) এফবিসিসিআই এই সম্মেলনের আয়োজন করছে।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উচ্চ আয়ের উন্নত, সমৃদ্ধ এবং উদ্ভাবনী স্মার্ট দেশ হিসেবে বিনির্মাণের জন্য আমাদের অভিযাত্রায় যুক্ত হতে আমি আপনাদের উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।"
বাংলাদেশ এখন ২০২৬ সাল নাগাদ এলডিসি থেকে বের হয়ে যাবার জন্য ৫ বছর প্রস্তুতিমূলক সময় পার করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ আমাদের দেশের জন্য একইসঙ্গে অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করবে, আবার অনেকগুলো চ্যলেঞ্জও আমাদের মোকাবেলা করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা কঠোর বাণিজ্য প্রতিযোগিতাসহ নানান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সক্ষমতাও অর্জন করবো। আমি দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে এসব সুযোগ কাজে লাগাতে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য আহবান জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো হতাশার কথা শুনতে চাইনা। এখন থেকে নিজেদেরকে তৈরি করতে হবে। যেসব চ্যালেঞ্জ সামনে আছে, সেগুলো আমরা মোকাবেলা করবো ইনশাল্লাহ।’
উত্তরণ-পরবর্তী পরিবেশে চ্যালেঞ্জসমূহ মেকাবেলায় তাঁর সরকার ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাবে বলেও কথা দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯-এর অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বাণিজ্যিক অবরোধ ও পাল্টা অবরোধ বাংলাদেশের মত উন্নয়নকামী দেশগুলোকে কঠিন সমস্যার মুখোমুখি করেছে। এমনকি উন্নত দেশগুলোও হিমসিম খাচ্ছে।
নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধিসহ মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসার উপায় খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে বলেন। অন্যথায়, ব্যবসায়ীরা নিজেদের বাজার হারাবেন বলেও সতর্ক করেন তিনি।
সরকার প্রধান বলেন, সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছি। সমৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে আমাদের বর্তমান প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করতে হবে, যেখানে ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিজ্ঞা নিতে হবে যে, আমরা কোনোমতেই ব্যর্থ হবো না। যেকোনো ক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই সফল হব, প্রতিবন্ধকতার উত্তরণ ঘটাতে হবে। কারণ, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনকারি একটি দেশ, আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবেই আমাদের দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করে বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে চাই। তাই সকলের সহযোগিতা আমাদের একান্তভাবে দরকার।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রী ড.মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবি, ভুটানের শিল্প, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী কর্মা দরজি, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উপ-মহাপরিচালক রাষ্ট্রদূত জিয়াংচেন ঝাং, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা রাখেন।