বঙ্গোপসাগরে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে আজ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এজন্য দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
মঙ্গলবার রাতে আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ ফেসবুক পোস্টে জানান, মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে সৃষ্টি হওয়া সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি পরে গভীর ও গভীরতর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হবে। বুধবার দুপুরের আগেই ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি জানান, সুস্পষ্ট নিম্নচাপ কেন্দ্রে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪৩ থেকে ৫২ কিলোমিটার পরিমাপ করা হয়েছে। ওই নিম্নচাপ কেন্দ্রে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬৩ কিলোমিটার কিংবা তা অপেক্ষা বেশি হলে পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড় নামকরণ করা হবে। সুস্পষ্ট নিম্নচাপটি বর্তমানে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে উত্তরদিকে অগ্রসর হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা তা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
দুটি আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল বিশ্লেষণ করে তিনি দেখেছেন, ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনাই বেশি এবং ভোলা থেকে কক্সবাজার জেলার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে। ১২ মে ঘূর্ণিঝড়টি সর্বোচ্চ শক্তিতে থাকবে এবং ১৩ মে দিন শেষে বা ১৪ মে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।
এজন্য দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এটি মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৫৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৫৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৫৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে প্রথমে ১১ মে পর্যন্ত উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে ক্রমান্বয়ে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।
এদিকে ভারতের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বুধবার নিম্নচাপটি দক্ষিণ-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং আন্দামান সাগরের কাছাকাছি দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে। এরপর প্রথম দিকে বৃহস্পতিবার এটি উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে। এরপর গতিমুখ পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপকূলের দিকে আসবে।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের উপপরিচালক ড. মো. ছাদেকুল আলম বলেন, যদি এটি এখন উত্তর-পশ্চিম দিকে যায়, তবে বাংলাদেশ-মিয়ানমার উপকূলে আসবে। আর যদি আরও উত্তর দিকে যাওয়ার পর গতিমুখ পরিবর্তন করে তবে বাংলাদেশের উপকূলে আসবে। এক্ষেত্রে আগামী রবিবার উপকূলে উঠতে পারে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিসের আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। তবে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তাপপ্রবাহের বিষয়ে বলা হয়, রাজশাহী, নেত্রকোনা, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা এবং কুষ্টিয়া জেলাগুলোর ওপর তীব্র তাপপ্রবাহ এবং দেশের অন্য এলাকায় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ নামটি ইয়েমেনের দেওয়া। কফির জন্য বিখ্যাত স্থানীয় একটি বন্দরের নাম ‘মোখা’। কালক্রমে সেখানকার কফির নামকরণও করা হয়েছে ‘মোখা’।