স্বাধীনতার ৫২ বছর হলেও দেশের আইন প্রণয়নের বাতিঘর জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী কাল। ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল যাত্রা করা সংসদে এ পর্যন্ত ১১টি সরকার প্রতিনিধিত্ব করেছে। এ সময়ে ১৩ মেয়াদে সংসদ নেতার দায়িত্ব পালন করেন ৯ জন। ৯ মেয়াদে বিরোধী দলে নেতৃত্ব দেন ৫ জন। ১৭ মেয়াদে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেছেন ১১ জন। সংসদে মেয়াদ ৫ বছর হলেও সর্বশেষ ৪টি সংসদ ব্যতীত আগের কোনো সংসদ পূর্ণ মেয়াদ পালন করতে পারেনি। জাতীয় সংসদের ৫০ বছর উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশন বসছে বৃহস্পতিবার। বিশেষ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ স্মারক বক্তৃতা দেবেন। এছাড়া ১৪৭ বিধিতে সাধারণ প্রস্তাব এনে তা গ্রহণ করা হবে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল সংসদের প্রথম বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে আমরা সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছি। এ কারণে ৭ এপ্রিল সংসদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।
স্পিকার আরও বলেন, ‘৫০ বছরের এই বিশেষ সময়টিকে উদযাপনের জন্য কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। তারমধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- একটি বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ৭ এপ্রিল বিশেষ অধিবেশনের কার্যক্রম হবে। সেখানে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আসবেন। তিনি স্মারক বক্তৃতা দেবেন।
স্পিকার বলেন, পরবর্তী অংশে ১৪৭ বিধিতে সাধারণ আলোচনার জন্য সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাব তুলবেন। প্রধানমন্ত্রী সেটি
উত্থাপন ও বক্তব্য রাখার পর সব সদস্য এ আলোচনায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। আলোচনায় আমরা প্রবীণ সদস্য বিশেষ করে ১৯৭৩ সালের সংসদের সদস্যদের অভিজ্ঞতা শুনবো। পরে প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হবে।
জানা গেছে, বিশেষ অধিবেশনের আলোচনাগুলো লিপিবদ্ধ করা হবে। তা একত্রিত করে বই আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বিশেষ অধিবেশন ছাড়াও বছরব্যাপী কিছু কিছু অনুষ্ঠান থাকবে। প্রবীণ সংসদ সদস্যের সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পারস্পরিক একটি মতবিনিময়ের আয়োজন পরিকল্পনা চলছে। সেখানে সনিয়র সংসদ সদস্যরা তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন। এছাড়া বাজেট অধিবেশনের পরে আন্তর্জাতিক একটি সম্মেলনও করা হবে। সেখানে অন্য দেশের কিছু স্পিকারসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
জানা গেছে, প্রথম সংসদ অধিবেশন বসে ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল। ২ বছর ৬ মাস মেয়াদের সেই সংসদে সংসদ নেতা ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। এই সংসদের মেয়াদ ছিল ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর পর্যন্ত। দ্বিতীয় সংসদ বসে ১৯৭৯ সালের ১ এপ্রিল, ২ বছর ১১ মাসের এই দ্বিতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হয় ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ। সংসদ নেতা ছিলেন জিয়াউর রহমান। তৃতীয় সংসদের মেয়াদ ছিল ১৯৮৬ সালের ১০ জুলাই থেকে ১৯৮৭ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এক বছর ৫ মাসের এই মেয়াদে সংসদ নেতা ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। চতুর্থ সংসদেও মেয়াদ ছিল ১৯৮৮ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর। এই মেয়াদেও সংসদ নেতা ছিলেন এইচএম এরশাদ। পঞ্চম সংসদের মেয়াদ ছিল ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল থেকে ১৯৯৫ ২৪ নভেম্বর। সংসদ নেতা ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।
ষষ্ট সংসদের মেয়াদ ছিল ১৯৯৬ সালের ১৯ মার্চ থেকে ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ। ১২ দিনের এই সংসদে নেতা ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। সপ্তম সংসদের মেয়াদ ছিল ১৯৯৬ সালের ১৪ জুলাই থেকে ২০০১ সালের ১৩ জুলাই। প্রথম বারের মতো ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ করা এই সংসদের নেতা ছিলেন শেখ হাসিনা। অষ্টম সংসদের মেয়াদ ছিল ২০০১ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০০৬ সালের ২৭ অক্টোবর। এই মেয়াদে সংসদ নেতা ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।
নবম সংসদের মেয়াদ ছিল ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। সংসদ নেতা ছিলেন শেখ হাসিনা। দশম সংসদের মেয়াদ ছিল ২৯ জানুয়ারি ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি। এই মেয়াদেও সংসদ নেতা ছিলেন শেখ হাসিনা। ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি থেকে চলমান একাদশ সংসদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি। চলমান সংসদের নেতা শেখ হাসিনা।
জানা গেছে, সর্বোচ্চ সংসদ নেতা ও বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালনের রেকর্ড রয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি ৪ মেয়াদে ১৯ বছর সংসদ নেতার দায়িত্ব পালন করছেন। তিন মেয়াদে ছিলেন বিরোধী দলের নেতা।