‘জগতে কিছু মেয়ে থাকে যাদের চোখের পানি সবসময়ই একটি কারণ খুঁজতে থাকে। পেলেই হইছে, নেমে পড়বে টপটপ। এই শ্রেণীর মেয়েদের মন যে খুব নরম হয় তাও নয়। আবার যারা এই শ্রেণীর নয় তাদের মন যে খুব লৌহ কঠিন তাও নয়। কিন্তু তারা কাঁদবেই। তাদেরকে বাধাই বা কে দেয়, কাঁদুক না। কাঁন্নাতো একটি প্রাকৃতিক নৈতিক অধিকার।’
কথাগুলো ‘আদাভান’ উপন্যাসের দ্বিতীয় ভাগের একটি ক্ষুদ্র অংশ;যা মনে দাগ কেটে যায়।
‘সময়ের দাবীতে কিছু জিনিস আপডেট না করলে, সমাজে একেবারে খারাপ ধরনের উচ্ছিষ্ট হয়ে যেতে হয়। যার কোন গ্রহণযোগ্যতা থাকেনা। আবার একেবারে গ্রহণযোগ্যতা না থাকলে আপনার প্রয়োজনীয়তা কি!’
এটি বইয়ের পঞ্চম ভাগের একটি ক্ষুদ্র অংশ। উপন্যাসটিতে এমন আরও অনেক নির্দেশনামূলক বাস্তব কথা রয়েছে যা পাঠকে আকর্ষিত করবে।
‘আদাভান’ উপন্যাসের থিম এক কথায় অসাধারণ। এই গল্পের প্রধান চরিত্রটি অপ্রতিম। যার একদিকে রয়েছে জীবনযাপনে ছন্নছাড়া ও বৈষয়িক ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন ভাব। যা আচরণে বেখেয়ালী আবার রয়েছে আধ্যাত্মিক ক্ষমতা। মানুষের প্রতি রয়েছে প্রকৃত দরদ আর উপকার করতে অকুন্ঠ। আবার এ চরিত্রটিকে কেন্দ্র করে ঘটতে থাকে সমাজের বাস্তব ও চমকপ্রদ মজাদার ঘটনা।
এর মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে একদম নতুন ধারার গল্প। যা আপনাকে বাধ্য করবে গল্পের মধ্যে ঢুকে যেতে। অত্যন্ত সুন্দর ও সুকৌশলে তুলে ধরা হয়েছে আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের কালের খেয়া কিছু স্থাপনার অজানা তথ্য। যেখানে প্রাধান্য পেয়েছে পরি বিবির হাম্মামখানা, শাহবাগের বাগানবাড়ী, নাচঘর, বাদশাহী বাগান, ঢাকা গেট, বঙ্গবন্ধুর দাফন, রবীন্দ্রনাথের বিবাহ ও শ্বশুরবাড়িসহ বেশ কিছু ঘটনা ও স্থাপত্য।
গল্পের প্রয়োজনে হৃদয়গ্রাহীভাবে উঠে এসেছে বিখ্যাত সাহাবা আবু হুরায়রা (রাঃ) এবং শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর একটি ঘটনা। সেই সঙ্গে রয়েছে, সনাতন ধর্মের ভগবান শ্রী কৃষ্ণ ও কৃষ্ণচূড়ার সম্পর্ক, কচুরীপানার মাধ্যমে বাংলার অর্থনৈতিক মন্দা।
এছাড়াও পার্শ্ব চরিত্রর মধ্যে জন মিল্টন, নুরুদ্দিন, আব্দুল মজিদ আপনার পছন্দ হবেই।
গল্পে সমাজের বিভিন্ন অঙ্গতি, অনাচার, অন্যায়কে তুলে ধরে প্রতিবাদ করা হয়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ভয়ঙ্কর কিছুদিক তুলে ধরা হয়েছে যা পড়ার পর আপনার শরীরে শিহরন জাগাবে।
এই গল্পের সমাপ্তিটা একদমই অপ্রত্যাশিত। আমি এটিকে ৫ এর মধ্যে ৫.৭৫ রেট দেব।