প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাড়াতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে তাঁর সরকার।
দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য সরকারের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে তাঁরা পায়রা বন্দরের উন্নয়ন করবেন। সরকার দেশে উন্নয়নের অদম্য গতিকে অব্যাহত রাখতে চায়। সেজন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করে একটি সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে বলে জনান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সকালে পিরোজপুরের বেকুটিয়ায় কচা নদীর ওপর বহুল আলোচিত ১ হাজার ৪৯৩ মিটার ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি একটি দেশের অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমরা এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ করে যাচ্ছি।’
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তাঁর সরকারের উদ্যোগের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা চাই দেশের উন্নয়নের গতি অব্যাহত থাকুক। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত ছিল। কারণ তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক খরস্রোতা বড় বড় নদী পাড়ি দিয়ে জীবিকা ও চিকিৎসার জন্য রাজধানীতে আসতে হোত।
তিনি বলেন, আমি ’৯৬ সালে বরিশালের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগের জন্য শিকারপুর-দোয়ারিকা সেতু নির্মাণ করে দেই এবং কীর্ত্তনখোলার ওপর ব্রীজ নির্মাণের কাজ হাতে নেই। গাবখান ব্রীজও তাঁর সরকারেই করা। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নেও একের পর এক সেতু তাঁর সরকার করে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিরোজপুরের বেকুটিয়ায় কচা নদীর উপর বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু উদ্বোধনের ফলে ঢাকার সঙ্গে পিরোজপুরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। জনগণ পিরোজপুরের তাজা পেয়ারা এবং আমড়া রাজধানীতে বসেই পাবে। এই অঞ্চলের শীতল পাটিও বিখ্যাত। জেলার বাসিন্দারা অন্যান্যদের পাশাপাশি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন করতে পারে যা জেলা ও অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনে ব্যাপক অবদান রাখবে।
২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ৮৯৪.০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু’ নির্মাণ করে।
চীন সরকার সেতুটির জন্য প্রকল্প সহায়তা হিসেবে ৬৫৪ দশমিক ৮০ কোটি এবং বাংলাদেশ সরকার ২৩৯ দশমিক ৮০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। সেতুটি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, মংলা সমুদ্র বন্দর এবং দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ৭১৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে ৪-লেন বা তার উপরে উন্নীত করার মাধ্যমে সারাদেশে মহাসড়কের মোট দৈর্ঘ্য ২২,০০০ কিলোমিটারে উন্নীত করেছে, পাশাপাশি ৬শ’ কিলোমিটার মহাসড়ককে ৪-লেন বা তার উপরে লেনে পরিণত করার কাজ চলছে।
তিনি বলেন, সরকার ঢাকায় মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প, গাজীপুর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার র্যাপিড বাস ট্রানজিট, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল এবং ১০ লেনের টঙ্গী সেতু নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে আমাদের অর্থনীতি আরও গতি পাবে।
