উদ্ভাবন অর্থনৈতিক খাতে বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে জিম্বাবুয়ের প্রতিষ্ঠান মিউজিক ক্রসরোডস।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৬ জুন) প্যারিসের ইউনেস্কো সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে বিজয়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এ.কে. আব্দুল মোমেন।
বৈচিত্রময় সাংস্কৃতিক বহিঃপ্রকাশ সংক্রান্ত ইউনেস্কো ২০০৫ কনভেনশন-এর সাধারণ পরিষদের সভার উদ্বোধনী দিনের কার্যসূচির শেষে আয়োজিত পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজয়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ছাড়াও ইউনেস্কোর সংস্কৃতিবিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা ও সহকারী মহাপরিচালক আর্নেস্তো অতোনে-সহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ইউনেস্কোতে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধির পাশাপাশি সাধারণ পরিষদে যোগদানকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিবৃন্দ, প্রবাসী বাংলাদেশিগণ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে ফ্রান্সস্থ বাংলাদেশের দূতাবাস-এর কূটনৈতিক উদ্যোগে এবং সকল সদস্য রাষ্ট্রের সম্মতিক্রমে এই পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
পরবর্তীতে, ২০২১ সালে ইউনেস্কো সদর দপ্তরে অনুরূপ একটি আয়োজনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা প্রথম বিজয়ী প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার তুলে দেন।
দ্বি-বর্ষভিত্তিক এই পুরস্কারের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা উদ্ভাবনী সাংস্কৃতিক উদ্যোগসমূহকে উৎসাহিত করা হয়।
শুভেচ্ছা বক্তব্যের শুরুতেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের অভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, আত্মত্যাগ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করেন এবং তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। একটি সদ্যস্বাধীন দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা আনয়নে বঙ্গবন্ধু’র তারুণ্যনির্ভর উদ্ভাবনী অর্থনীতির যে রূপরেখা প্রণয়ন করেছিলেন তা উদ্ধৃত করেন।
এই পুরস্কার প্রদানের ফলে বাংলাদেশের জাতির পিতার অর্থনৈতিক মুক্তির দর্শনকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সহকারী মহাপরিচালক আর্নেস্তো অতোনে তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে এই পুরস্কার প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন এবং বিশ্ব অর্থনীতির উন্নয়নে উদ্ভাবনী চর্চার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
ইউনেস্কোর সংস্কৃতিবিষয়ক এই শীর্ষ কর্মকর্তা আরও বলেন, এই পুরস্কার প্রদানের ফলে তরুণ সমাজ উদ্ভাবনী অর্থনীতির দর্শনকে ধারণ করবে এবং তা চর্চার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বাস্তবায়নে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করবে।
বিচারকমন্ডলীর সভাপতি ইলান স্টিফেনস জানান, এ বছর বিশ্বের ১৯টি দেশ হতে পুরস্কারের বিবেচনার জন্য মোট ৮৪টি প্রতিষ্ঠানের আবেদন জমা পড়ে, যার প্রতিটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও অভিনব। তবে বিজয়ী প্রতিষ্ঠানকে তাদের উদ্ভাবনী চর্চা ও আন্তঃসাংস্কৃতিক সংযোগ স্থাপনে নারী ও তরুণদের সম্পৃক্ত করার জন্য পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
আলোচনা শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পুরস্কারের স্মারক বিজয়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির নিকট তুলে দেন। এ সময় ইউনেস্কোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং স্থায়ী প্রতিনিধি খন্দকার এম তালহা বিজয়ীকে সনদপত্র প্রদান করেন।
পুরস্কার প্রদান শেষে ফ্রান্স-প্রবাসী বাংলাদেশের একটি ব্যান্ডদল মনোমুগ্ধকর সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
আয়োজনের শেষভাগে আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে বিজয়ী প্রতিষ্ঠানের সম্মানে কূটনৈতিক রিসিপশন ও নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।