প্রচ্ছদ ›› জাতীয়

‘উচ্চ তাপমাত্রায় বছরে ৬০০ কোটি ডলার ক্ষতি হচ্ছে ঢাকার’

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৩ অক্টোবর ২০২২ ১০:২৩:২৭ | আপডেট: ২ years আগে
‘উচ্চ তাপমাত্রায় বছরে ৬০০ কোটি ডলার ক্ষতি হচ্ছে ঢাকার’

কার্বন নিঃসরণ ছাড়াও প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংসের ফলে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে বৈশ্বিক তাপমাত্রা। সর্বত্রই যেন গরমে হাঁসফাঁস করছে প্রতিটি প্রাণ। উচ্চ তাপমাত্রার কারণে প্রতিবছর শ্রম উৎপাদনশীলতা হারাচ্ছে ঢাকা। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৬০০ কোটি ডলার। এছাড়াও ঢাকার বার্ষিক শ্রম উৎপাদনের ৮ শতাংশের বেশি ‘অপচয়’ হচ্ছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘অ্যাড্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রিজিলিয়ান্স সেন্টারের’ ‘হট সিটিস, চিলড ইকোনমিস : ইমপ্যাক্টস অব এক্সট্রিম হিট অন গ্লোবাল সিটিস’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে ঢাকাসহ বিশ্বের ১২ শহরে উচ্চ তাপমাত্রার সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়েছে। ঢাকা ছাড়া বাকি ১১ শহর হলো- এথেন্স (গ্রিস), ব্যাংকক (থাইল্যান্ড), বুয়েন্স আইরেস (আর্জেন্টিনা), ফ্রিটাউন (সিয়েরা লিওন), লন্ডন (যুক্তরাজ্য), লস অ্যাঞ্জেলেস (যুক্তরাষ্ট্র), মিয়ামি (যুক্তরাষ্ট্র), মন্টেরেই (মেক্সিকো), নয়াদিল্লি (ভারত), সান্তিয়াগো (চিলি) ও সিডনি (অস্ট্রেলিয়া)। ১২ শহরে ২০২০ সালে গড় ক্ষতির পরিমাণ ছিল চার হাজার ৪০০ কোটি ডলার।

বলা হয়েছে, উচ্চতাপের কারণে অন্য যে কোনো শহরের তুলনায় ঢাকার মানুষের শ্রম উৎপাদনশীলতা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাপমাত্রা কমাতে উদ্যোগ না নিলে ২০৫০ সাল নাগাদ এ ক্ষতি ১০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। আর ব্যবস্থা না নিলে ২০৫০ সাল নাগাদ এই ক্ষতির পরিমাণ ৮ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা শহরের ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ এলাকায় ইতোমধ্যে উচ্চ তাপমাত্রা ও উচ্চ আর্দ্রতা দেখা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন এ পরিস্থিতিকে আগামীতে আরও ভয়াবহ করে তুলবে। ঢাকার তাপ নগরের মধ্যেই কেন্দ্রীভূত থাকে। কিছু এলাকায় জনঘনত্ব বেশি।

অন্যদিকে সবুজ পরিসরের অভাব রয়েছে। ঢাকায় এ ধরনের এলাকা বাড়ছে। শহরের এ এলাকাগুলোর তাপমাত্রা পার্শ্ববর্তী গ্রামাঞ্চলের চেয়ে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

বেশি তাপমাত্রা রয়েছে, এমন এলাকার উদাহরণ দিতে প্রতিবেদনে ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের কথা বলা হয়েছে। এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ। এখানকার অধিকাংশ ঘরবাড়ির ছাদ টিন দিয়ে তৈরি। ফলে এ এলাকার তাপমাত্রা কাছাকাছি এলাকার তুলনায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এলাকায় ঘরের ভেতরে আরও বেশি তাপ অনুভূত হয়। বসবাসের এ ধরনের পরিস্থিতি ঢাকাবাসীর উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকায় শ্রমনিবিড় অর্থনৈতিক তৎপরতা বেশি। তাপমাত্রা কমানোর ব্যবস্থা এখানে কম। ফলে ঢাকা উচ্চতাপের প্রভাবের জন্য অস্বাভাবিক ঝুঁকিপূর্ণ। নিম্নআয়ের কর্মীরা বিশেষভাবে উচ্চতাপের সংস্পর্শে আসে। তারা অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত হয়। অনিয়ন্ত্রিত উষ্ণায়নের কারণে তৈরি পোশাক, পরিবহন ও খুচরা ব্যবসা খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ঢাকা শহরে প্রায় চার লাখ হকার রয়েছেন। এদের বড় অংশ গ্রাম থেকে শহরে এসেছেন। শ্রমিক হিসেবে তাদের দক্ষতা কম। বেশিরভাগ হকারের স্থায়ী দোকান নেই। তারা মূলত ফুটপাতে উন্মুক্ত স্থানে নানা ধরনের পণ্য বিক্রি করেন। জরিপমতে, তাপপ্রবাহ চলার সময় ৯ শতাংশ হকার ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ আয় হারান। আর প্রায় ২৫ শতাংশ হকার ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ আয় হারান।