মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ভাঙ্গা-মাওয়া-ঢাকা এক্সপ্রেসওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহতের ঘটনায় ইমাদ পরিবহনের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছে হাইওয়ে পুলিশ। রোববার রাতে শিবচর থানায় মামলাটি করেন শিবচর হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট জয়ন্ত সরকার।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বাসটির যান্ত্রিক ত্রুটি আর বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনা হয়েছে উল্লেখ করে ইমাদ পরিবহন কর্তৃপক্ষসহ অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেছে হাইওয়ে পুলিশ।
এর আগে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় ৫০ ফুট খাদে পড়ে দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ১৪ জন। পরে মৃত্যু হয় ছয়জনের।
আহতের সংখ্যা ৩০ জনের বেশি। এদের মধ্যে ২৫ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পাঁচ্চর রয়েল হাসপাতালসহ গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহতদের মধ্যে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত ১৫ জনের অবস্থা গুরুতর।
পুলিশের ধারণা, বাসের সামনের চাকা ফেটে কিংবা দ্রুতগতির কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। তবে একাধিক যাত্রীর অভিযোগ, দুর্ঘটনার আগে চালক বেপরোয়া গতিতে বাস চালাচ্ছিলেন।
দুর্ঘটনার সঠিক কারণ জানতে গতকাল মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পল্লব কুমার হাজরাকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা ওই কমিটিকে দুই কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে নিহতের পরিবারপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা ও আহতদের পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) রহিমা খাতুন।
এদিকে,ইমাদ পরিবহনের এই বাসটির (ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-৩৩৪৮) চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ছিল। ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর এক দুর্ঘটনার পর বাসটির রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করা হয়। এর পরও বাসটি যাত্রী পরিবহন করে আসছিল।
আগের দুর্ঘটনার পর বাসটি জব্দ অবস্থায় ছিল। গত ৪ ডিসেম্বর আদালত থেকে মুক্ত হওয়ার পর বাসটি মেরামত করে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে সায়েদাবাদ-খুলনা রুটে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছিল।
বাসটি গত ১৭ নভেম্বর রাতে গোপালগঞ্জ সদর এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দিলে তিনজন মারা যান। আহত হন ১৫ জন।
বিআরটিএর তথ্যমতে, ভারতের অশোক লেল্যান্ড কোম্পানির বাসটি তৈরি হয়েছে ২০১৭ সালে। এর নিবন্ধন নেওয়া হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। নিবন্ধনে উল্লেখ করা হয়, বাসের আসনসংখ্যা ৪০টি। এরপর প্রায় প্রতিবছরই ফিটনেস সনদ নেয়া হয়। তবে সর্বশেষ গত ১৯ জানুয়ারি বাসটির ফিটনেস সনদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এটি ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে খুলনা পর্যন্ত চলাচলের জন্য অনুমতি (রুট পারমিট) নেয়া হয়েছিল।