প্রচ্ছদ ›› জাতীয়

‘এত আতঙ্কে সেন্টমার্টিনবাসীকে কখনও দেখিনি’

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৩ মে ২০২৩ ১৭:৩০:৪৮ | আপডেট: ২ years আগে
‘এত আতঙ্কে সেন্টমার্টিনবাসীকে কখনও দেখিনি’
প্রতীকী ছবি

তৈয়ব উল্লাহ। বয়স ৩৪। ৬ পুরুষ থেকে বাস করছেন সেন্টমার্টিন দ্বীপে। ছোট থেকে নানা ঝড়-ঝঞ্জা প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে বড় হলেও ঘূর্ণিঝড় মোখা’র আগমণীতে আতঙ্ক সেটি ভর করেছে তৈয়বের মনে। তৈয়বের ভাষায়, সেন্টমার্টিন এখন আতঙ্কিত জনপদে পরিণত হয়েছে।

সমুদ্রের মাঝখানে যাদের জন্ম ও বাস। প্রাকৃতিক ঝড়-ঝঞ্ঝা যাদের নিত্যসঙ্গী প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে যাঁদের জীবন চলা, তারাও আজ ভয়ে কাবু হয়ে গেছে।

পেশায় ব্যবসায়ী তৈয়ব বাবা-মা, ভাই-ভাবীর সাথে সেন্টমার্টিনে বাস করছেন। বিজনেস পোস্টের সাথে অলাপকালে সেখানকার গতকাল ও আজকের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন- “মসজিদে নামাজ শেষে মোনাজাতে সহজে আমার কান্না আসে না। শেষবার কেঁদেছিলাম প্রায় ৮ বছর আগে আমার দাদিমার মৃত্যুর পর।

কিন্তু গতকাল জুমার নামাজের পর, ইমাম সাহেব যখন মোনাজাত ধরলেন। সবাই হাউমাউ করে কান্না শুরু করে। চোখের পানি ধরে রাখা কঠিন ছিল। মৃত মানুষের বাড়ির মতো সবার কান্না যেন ভেতর থেকে মোচড় দিয়ে উঠছিলো। এতো আতঙ্কে দ্বীপবাসীকে কখনো দেখিনি।

মুরব্বিরা যেভাবে মোনাজাতে বিলাপ করছিলেন। সেটি সত্যিই আতঙ্কিত হবার মতো ঘটনা। দ্বীপের মানুষের মনে ভয় ঢুকেছে 'সিত্রাংয়ের' সময় থেকে। সামান্য ঘূর্ণিঝড়ের সময় যেভাবে জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল। বড় ঘূর্ণিঝড় হলে তা যে আরো ভয়াবহ হবে সেটাই সবার ধারণা।

গত তিনদিন ধরে ট্রলার, স্পিডবোট করে হাজারের উপর মানুষ জন্মভূমি সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফ চলে গেছে।
যারা যেতে পারে নাই বা যায়নি তারা যথেষ্ট আতঙ্কে আছে সেটা বুঝতে পারি জুমার নামাজের মোনাজাতে। আতঙ্কিত হবার অন্যতম কারণ। ঘূর্ণিঝড় মোখার সম্ভাব্য গতিপথ সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও আশেপাশের এলাকা। কিন্তু দ্বীপে পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নেই। নেই টেকসই বেড়িবাঁধ।

প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ পাথরের বাঁধ নড়বড়ে হয়েছে ১৯৯১ ও ১৯৯৪ সালের ঘূর্ণিঝড়ে। আর ভাঙণে বিলীন হয়ে গেছে বালিয়াড়ি ও কেয়াবন। অবিবেচকের মতো কাটা হয়েছে গাছ। অনিয়ন্ত্রিতভাবে তৈরি হয়েছে স্থাপনা। সবমিলিয়ে সেন্টমার্টিন এখন 'আতঙ্কের জনপদ!'

জানা গেছে, বাসবাসকারীদের প্রায় হাজারের বেশি মানুষ নিরাপত্তার জন্য গত ২ দিনে সেন্টামার্টিন ছেড়েছেন। আর যারা ভেবেছিলেন পরে যাবেন সাগর উত্তাল হয়ে নৌ-যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রয়ে গেছেন সেখানেই। অনেকে আবার বাইরে গিয়ে কোথায় কীভাবে থাকবেন সেই শঙ্কায় ছাড়তে পারেননি আবাসভূমি। 

সন্টমার্টিনের হোটেল ও রিসোর্টগুলো আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করায় বর্তমানে সবাই আশ্রয় নিয়েছেন সেখানে। বাসিন্দাদের মনে বিরাজ করছে আতঙ্ক।

ঘূর্ণিঝড় মোখা’র কারণে চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৮ নম্বর এবং কক্সবাজার উপকূলে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া মোংলা সমুদ্রবন্দরে জারি করা হয়েছে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত।

রোববার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি।

শুক্রবার রাত থেকেই কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম জেলায় বিপদাপন্ন জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা শুরু হয়েছে। সবচেয়ে বিপদের সম্মুখীন সেন্ট মার্টিন দ্বীপে অবস্থানরত মানুষের নিরাপত্তায় গতকালই সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। সেখানে অবস্থানরত অন্তত ৮ হাজার ৫০০ মানুষকে সর্বোচ্চ জলোচ্ছ্বাস মাত্রার সুপার সাইক্লোন মোকাবেলায় সক্ষম ৩৭টি অবকাঠামোয় নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে।

এর আগে শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ স্বাক্ষরিত বিশেষ বিজ্ঞপ্তি-১৪-তে জানানো হয়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।

যা আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে রোববার (১৪ মে) সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তবে শনিবার (১৩ মে) সন্ধ্যা থেকে কক্সবাজার ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় 'মোখা' এর অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।

বিশেষ বার্তায় আরও বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‌‘মোখা’র অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

এ ছাড়া উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

এ অবস্থায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

বার্তায় আরও বলা হয়েছে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ১৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।