প্রচ্ছদ ›› জাতীয়

খড়ের ঘর ছেড়ে পাকা ঘরে যাবে আলেয়া

মো. সাইদুর রহমান
০৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:০২:২৬ | আপডেট: ২ years আগে
খড়ের ঘর ছেড়ে পাকা ঘরে যাবে আলেয়া

স্বামী হারা আলেয়া বেগম (৫০) একমাত্র মেয়ে জেসমিন আক্তারকে নিয়ে চলছে ২২ বছর ধরে জীবন যুদ্ধের সংসার। ছিল না ঠিক মত মাথা গোঁজার ঠাঁই। নুয়ে পড়া খড়ের ঘরটিতে ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে চলছিল তাদের সংসার। ছিল না মেরামত করার সামর্থ।

স্বামী মারা যাওয়ার পর অসহায় হয়ে পড়া আলেয়ার দুচোখে জুড়ে আসে অন্ধকার। অসহায় আলেয়ার উপায় না থাকায় নিতে হয়েছে ঋণ। কিন্তু মা মেয়ের হাতের কাজ করে সামান্য আয়ে সে ঋণের কিস্তি টাকা পরিশোধ হতো না। ফলে বাধ্য হয়েই থাকতে হয়েছে জীর্ণশীর্ণ কুড়ের ঘরে।

কিন্তু মাত্র দুই মাসে আগে পিএইচপি ফ্যামিলি ও পসকো ইন্টারন্যাশনালের চোখে পড়ায় ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় আলেয়ার। সরকার থেকে পাওয়া ২ গন্ডা জমিতে তৈরি হয়েছে আধা পাকা বাড়ি। প্রথমে আলেয়া বেগম বিশ্বাস না হলে; এখন থাকছেন স্বপ্নের ঘেরে।

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের ৪ নং চর ওয়াপদা ইউনিয়নের বাসিন্দা আলেয়া বেগম জানান, মা মেয়ের কল্পনাতেও ছিল না, আমরা যে পাকা বাড়ি পাব। কেউ তো অসহায়ের দিকে ফিরেও তাকায় না। সেখানে পাকা বাড়ি তো স্বপ্ন। কথাগুলো বলতে বলতে আলেয়া বেগমের চোখে পানি চলে আসে। পাশে থাকা মেয়ে জেসমিন তাকে জড়িয়ে ধরেন৷ পাকা বাড়ি পাওয়ার পরও কেন কাঁন্না করছেন জানতে চাইলে হাসিমুখে আলেয়া বলেন, এটা আনন্দের কান্না। এই কান্নাতে সুখ আছে। সুখে পানি চলে এসেছে চোখে।

একই এলাকার আরেক হতদরিদ্র জ্যোৎসা বেগমও (৫৫) তেমন একটি নতুন ঘর পেয়েছে। সরকার থেকে পাওয়া জমিতে নতুন ঘরে তিন সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন। সে জায়নামাজ, পাটি বানিয়ে বিক্রি করে সংসার চালয়।

পাকা বাড়ি পাওয়া ওই এলাকার মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ (৪৫) জানান, গাছ থেকে নারিকেল পাড়তে গিয়ে মেরুদণ্ডে আঘাত পান। তারপর থেকে তার কর্মক্ষমতা হারিয়ে পেলেন। স্থানীদের সহায়তায় দুই মেয়ে এক ছেলেকে নিয়ে কোনমতে দিনাতিপাত করলেও বন্যায় ভেঙ্গে যায় ঘরটি মেরামত করতে পারেনি। এখন নতুন পাকা বাড়ি পেয়ে তিনি খুশি।

সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান পসকো ইন্টারন্যাশনাল ও বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় শিল্প গ্রুপ পিএইচপি ফ্যামিলির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনের প্রচেষ্টায় নোয়াখালীর সুবর্ণচরের ৪ নং চর-ওয়াপদা ইউনিয়নের ১১টি পাকা ঘর তৈরি করে হতদরিদ্র পারিবারের কাছে হস্তান্তর করেন।

এই দুই প্রতিষ্ঠান ১১টি দরিদ্র পরিবারের জন্য লোহা, কংক্রিট ও রঙিন ঢেউটিন দিয়ে তৈরি ৬০০ বর্গফুটের ঘর তৈরি করে দিয়েছে। তিন কক্ষের প্রতিটি ঘরে দুটি শোবার কক্ষ, মাঝখানে একটি বসার কক্ষ, সামনে একটি বারান্দা এবং একটি বাথরুম রাখা হয়েছে। এই কাঠামোর বাইরে আছে একটি রান্নাঘর।

নিজের জমি আছে তেবে দরিদ্রতার কারণে বাড়ি নির্মাণের সামর্থ নেই এমন ১১টি পরিবারকে বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছে এই দুই প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি ঘর নির্মাণ করতে খরচ পড়েছে চার লাখ ৭০ হাজার টাকা। ঘর নির্মাণে পিএইচপির রঙিন ঢেউটিন ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে গুণগত মান ও স্থায়িত্ব অক্ষুণ থাকে। এর আগে গত ডিসেম্বরে একই এলাকায় ৫টি ঘর তৈরি করে হস্তান্তর করা হয়েছিল।

পিএইচপি ফ্যামিলির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, পসকো’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আমি যৌথভাবে এলাকাটি পরিদর্শন করি। সেখানকার মানুষের দুরবস্থা দেখে আমরা হতাশ হই। তাই মানবিক বিবেচনায় এই চরের বাসিন্দাদের ক্রমানয়ে ঘর তৈরি করার মনস্থির করি। এখন পসকো’র সহযোগিতায় ১১ পাকা ঘর তৈরি করে বাসিন্দাদের বুঝিয়ে দিয়েছি। আমি ও আমার পিএইচপি ফ্যামিলি সৌভাগ্যবান ও আনন্দিত, চরের অসহায় মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ পেয়েছি।

ইকবাল হোসেন বলেন, সরকারের একার পক্ষে সারা দেশে দরিদ্র জনগণের আবাসন নিশ্চিত করা কঠিন। তাই আমরা সরকারকে সহায়তা করতে এ উদ্যোগ নিয়েছি। পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সমাজের অসহায় মানুষকে সেবা করতে ভালোবাসেন। তারই ধারাবাহিকতায় সুবর্ণচরে হতদরিদ্রের জন্য ঘর তৈরি করে হস্তান্তর করেছি।

কোরিয়ার পসকো ইন্টারন্যাশনাল সদর দপ্তর থেকে বার্তায় মি. ড্যানিয়েল বলেন, আমরা আমাদের মূল্যবান এবং কৌশলগত অংশীদার পিএইচপি ফ্যামিলির সাথে এই কার্যক্রমটি চালিয়ে যেতে চাই। এবং অদূর ভবিষ্যতে স্টিল হাউসের নতুন সরবরাহে আমাদের কার্যক্রমের স্তর উন্নত করতে চাই। যেসব পরিবারকে নতুন স্টিল হাউস হস্তান্তর করা হল তাদের ও তাদের পরিবারের সকলের প্রতি শুভকামনা রইলো। পিএইচপি ফ্যামিলির ইকবালের প্রতি আমার আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।

পাকা বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় শিল্প গ্রুপ পিএইচপি ফ্যামিলির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান পসকো ইন্টারন্যাশনালের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট সন চুল কিম, পসকো-বাংলাদেশের হেড অফ কমার্সিয়াল আহাসানুল আলম, সিনিয়র ম্যানেজার ডেনিয়াল লি, কান্ট্রি ম্যানেজার এস জে কং, নোয়াখালী রুরাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির ( এনআরডিএস) এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আব্দুল আউয়াল, সুবর্ণচরের ৪ নং চর ওয়াপদা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান ভুইয়াসহ দরিদ্র পরিবারের সদস্যারা।