আন্দামান সাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে রূপ নিয়েছে। এটি এখন বাংলাদেশের দিকে মুখ করে দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। বরিশাল ও চট্টগ্রামের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে। ফলে দেশের সমুদ্রবন্দরে ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত বাড়িয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিস।
রোববার রাতে গভীর নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮০ কিমি দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯৫ কিমি দক্ষিণে অবস্থান করেছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ায় পর এর গতিপথ বদলে যেতে পারে। আন্দামান সাগরে বিশাল মেঘমালা তৈরি হয়েছে, তার প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলসহ বেশির ভাগ এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার গতিতে ঝোড়ো হাওয়া বইছে। আজ রাত ও আগামীকালের মধ্যে বৃষ্টির পরিমাণ ও বাতাসের গতি বাড়তে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে প্রথমে গভীর নিম্নচাপ এবং পরে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এ পরিণত হয়ে আজ সন্ধ্যা ৬টায় পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে অগ্রসর হতে পারে। এর ফলে ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি এবং বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুদ্ধ রয়েছে।
এদিকে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানান, কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত ৭৩০ কিলোমিটার জুড়েই এটি আঘাত আনতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সরকার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে। এ সময় অমাবস্যা থাকার কারণেই তিন থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত উঁচু জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
তিনি বলেছেন, বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপটি রবিবার সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তাতে ১৯টি জেলা ঝুঁকিতে। এতে তিন থেকে পাঁচফুট জলোছ্বাস হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি আকারে বড়ো হলেও দুর্বল হবে।সিত্রাং সুপার সাইক্লোনে রূপ নেবে না।
ঝুঁকিতে থাকা উপকূলীয় ১৯ জেলার মধ্যে- বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, কক্সবাজার, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর এবং গোপালগঞ্জ।
ঘূর্ণিঝড়ের নাম রাখা হয়েছে ‘সিত্রাং’। এই ট্রপিক্যাল সাইক্লোনের আনুষ্ঠানিক নামকরণের দায়িত্ব ছিল থাইল্যান্ডের। দেশটি ঘূর্ণিঝড়ের নাম রেখেছে ‘সিত্রাং’। ভিয়েতনামিজ ভাষায় এর অর্থ ‘পাতা’।