বিশ্বখ্যাত দুবাইয়ের ফুলের পার্ক মিরাকল গার্ডেনের আদলে সেজেছে চট্টগ্রামের ডিসি ফ্লাওয়ার পার্ক। এক সময় মাদকসেবীদের আখড়া হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সীতাকুণ্ডের সাগর উপকূলীয় ফৌজদারহাট সেই ডিসি পার্কে নানান রঙের ফুল ছড়াচ্ছে সৌরভ।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) উদ্বোধন হচ্ছে মাসব্যাপী ফুল উৎসব। লক্ষাধিক ফুল গাছের সমারোহে দ্বিতীয়বারের মতো এই পার্কে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী এই উৎসব। উৎসবে দর্শনার্থীদের জন্য থাকছে ১২৭ প্রজাতির বাহারি ফুলের সমারোহ। উৎসবে এবার বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে থাকছে ঘুড়ি উৎসব, পিঠা উৎসব, নৌকা প্রদর্শনী, চিত্র প্রদর্শনী, মিউজিক ফেস্ট।
চট্টগ্রাম শহরের কাছেই বন্দর লিংক রোডের ফৌজদারহাট অংশে এই জায়গাটি এক সময় ছিল মাদকসেবীদের আখড়া। পরে ১৯৪ একর জায়গা উদ্ধার করে এখানে পার্ক গড়ে তুলেছে জেলা প্রশাসন। নামকরণ করা হয় ‘ডিসি পার্ক’। এরইমধ্যে পার্কটি নগরবাসীর আগ্রহের জায়গায় পরিণত হয়েছে।
চারদিকে তাকালেই চোখে পড়বে লাল, হলুদ, বেগুনি, সাদা, গোলাপিসহ বাহারি রঙের নানা প্রজাতির ফুলের দেখা। শুধু রঙেই নয়, ফুলের এই বৈচিত্র্যে ও সাজানোর নানা কৌশল দর্শনার্থীদের নজর কাড়বে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জানান, জেলা প্রশাসনের নিজস্ব উদ্যোগে তৈরি করা এ ডিসি পার্কে শুরু হচ্ছে ফুল উৎসবের দ্বিতীয় আসর। বৃহস্পতিবার মাসব্যাপী এ ফুল উৎসবের উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব মো. মাহবুবুর রহমান। এবারের ফুল উৎসবে রাতের আলোকসজ্জা পার্কটি আরও আর্কষণীয় হয়ে উঠবে বলে জানান তিনি।
এখানে থাকছে দেশি-বিদেশি ১২৭ প্রজাতির গাছের লক্ষাধিক চারায় ফুলের স্বর্গরাজ্য। ডিসি পার্কের বাগানের মাঝখানে বিশালাকার পুকুর। তাতে চলছে কায়াকিং। সন্ধ্যায় চালানো হবে পানির ফোয়ারা। ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, ম্যাগনোলিয়া, শিউলি, হাসনাহেনা, কামিনী, বেলি, চেরিসহ দেশি-বিদেশি ফুলের সুবাসে মৌ মৌ করছে চারপাশ। মাঠজুড়ে নানা নকশায় লাগানো
হয়েছে ফুলগাছ। এছাড়াও থাকছে ১৫ প্রজাতির টিউলিপ, নৌকাবাইচ, ১০০ চিত্রশিল্পীর আর্ট প্রদর্শনী, নৌকা প্রদর্শনী, বইমেলা, ভায়োলিন-শো, ঘুড়ি উৎসব, পিঠা উৎসব, পুতুল নাচসহ প্রতি সন্ধ্যায় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। থাকবে শিশুদের রাইড, ওয়াকওয়ে, সানসেট ভিউ পয়েন্ট, কবুতর শেড, কিডস জোন ও বিশেষ সেলফি কর্নার। ইতোমধ্যে দর্শনার্থীরা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় করেছেন এখানে।
উল্লেখ্য, ১০ বছরের বেশি সময় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সাগর উপকূল ঘিরে ফৌজদারহাটের ১৯৪ একর জায়গা অবৈধভাবে দখলে রেখেছিল একটি চক্র। সেখানে গড়ে উঠেছিল মাদকের রাজ্য। দেড় বছর আগে জেলা প্রশাসন জায়গাগুলো উদ্ধার করে তৈরি করে ডিসি পার্ক। উচ্ছেদের এক মাসের মাথায় প্রথমবারের মতো গত বছর সাত দিনব্যাপী ফুল উৎসবের আয়োজন করেছিল জেলা প্রশাসন। এতে মানুষের সাড়া পড়ে যায়। তাই এ বছরও ডিসি পার্কে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত হচ্ছে ফুল উৎসব।
সরেজমিন সেখানে দেখা যায়, বিস্তৃত পরিসরের ডিসি পার্কের ছায়াঘেরা একটি আঙিনায় চলছে আলো-ছায়ার লুকোচুরি খেলা। এখানে তৈরি করা হয়েছে একটি শেড। সেখানে রয়েছে বিদেশি টিউলিপ। টিউলিপের কলিগুলো দিচ্ছে উঁকি। লাল, হলুদ, গোলাপি, সাদা রঙের টিউলিপ শোভা ছড়াচ্ছে। সঙ্গে আছে লাল-হলুদ রঙের মিলিত টিউলিপ। এমন সব বর্ণিল এবং দৃষ্টিনন্দন ফুল নিয়ে আয়োজন করা হচ্ছে ব্যতিক্রমী এই ফুল উৎসব। এখানে ১২৭ প্রজাতির ফুলের পরিচিতি থাকবে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাসব্যাপী শুরু হতে যাওয়া মেলা উদ্বোধন করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। চট্টগ্রামের দুই মন্ত্রী বিভিন্ন ইভেন্টে থাকবেন। বইমেলায় থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী নওফেল। মাসব্যাপী এ উৎসব শেষ হবে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি। এবার প্রত্যেক দর্শনার্থীর পার্কে প্রবেশের জন্য ৩০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মাসব্যাপী ফুল উৎসব ঘিরে নানা আয়োজন চলছে। ডিসি পার্কটিকে আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে নানা কাজ করা হয়েছে। এবার নেদারল্যান্ডস থেকে বীজ এনে ফোটানো হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার টিউলিপ ফুল। উৎসবে প্রদর্শনীর জন্য থাকবে চট্টগ্রামের চিত্রশিল্পীদের প্রায় ২০০টি চিত্রকর্ম। উৎসবে আসা দর্শনার্থীদের নিজেদের ছবির ক্যারিকেচার আঁকার ব্যবস্থাও থাকবে। আয়োজন করা হবে ঘুড়ি উৎসব, আতশবাজি, পুতুলের নাচ ও জাদু প্রদর্শনী। এ ছাড়া প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার শিল্পীদের পরিবেশনায় থাকবে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, 'মাদকের রাজ্যকে ফুলের রাজ্যে পরিণত করা হয়েছে। গত বছর প্রথমবারের মতো ফুল উৎসবে লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে। মানুষের উৎসাহ দেখে এ বছর বৃহৎ পরিসরে মাসব্যাপী ফুল উৎসব শুরু করতে যাচ্ছি আমরা।’
ইফা ল্যান্ড স্কিপ গার্ডেন কোম্পানির দ্বারা নির্মিত ডিসি পার্ক সম্পর্কে ইজারাদার কাউচার আল হোসাইন বলেন, দুবাইয়ের মিরাকল গার্ডেনের আদলে হচ্ছে পার্কটি, গত ২ মাস আগে থেকে ফুল সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। কেননা হঠাৎ করে এতগুলো ফুল পাওয়া সম্ভব নয়। ফুল উৎসবের জন্য দিনরাত আমাদের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ডিজাইনের কাজ শেষ হয়েছে। ফুল দিয়ে বানানো হয়েছে বিশেষ ঝর্ণা, গিটার। কাঠের নৌকার নিচে ফুল দিয়ে ডিসি পার্ক লেখা হয়েছে।