চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই ঢাকার বায়ুদূষণ ছাড়িয়ে গেছে গত দুবছরের রেকর্ড। এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ঢাকার গড় বায়ুমান সূচক ছিল ১৭৮.৬৫, যা ২০২১-২২ সালে ছিল ১৫৯.০৮ ও ১৬২.৮৪। ২০১৬-২৩ সাল পর্যন্ত গত আট বছরের ঢাকার বায়ুমান সূচকের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানিয়েছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে পাওয়া এই সময়ের বায়ুমান সূচক বিশ্লেষণ করেছে ক্যাপস।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ক্যাপস এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে ‘বায়ুমান উন্নয়ন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারের দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় তারা। এতে সহ-আয়োজক ছিল পরিবেশ উদ্যোগ, ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি), বিএনসিএ এবং সিএলপি। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তা ছিলেন ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।
এতে জানানো হয়, ক্যাপস ৬৪ জেলার বায়ুমান বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা করে। এর মধ্যে ৫৪ জেলার বায়ুমানই জাতীয় নির্ধারিত দৈনিক মানমাত্রায় ৬৫ মাইক্রোগ্রামের চেয়ে খারাপ। আর অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার উপস্থিতিক্রমে গাজীপুর, ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জ দূষণের শীর্ষে অবস্থান করছে।
গবেষণায় দেখা যায়, ২০২১ ও ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি দূষণ লক্ষ করা যায়, যার ধারাবাহিকতা ২০২৩ সালেও পরিলক্ষিত হয়। ২০২১-২৩ সালের গড় বায়ুমান সূচক ছিল যথাক্রমে ১৫৯ দশমিক শূন্য ৮, ১৬২ দশমিক ৮৪ এবং ১৭৮ দশমিক ৬৫। আবার সবচেয়ে কম
গড় বায়ুমান সূচক পাওয়া যায় ২০১৭ ও ২০২০ সালে, যা যথাক্রমে ১৪৬ দশমিক ০৯ এবং ১৪৩ দশমিক ৩৭।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত রাজধানীর ১০টি স্থানের বায়ুমানের উপাত্তের বিশ্লেষণে দেখা যায়, শাহবাগ এলাকার বায়ু সবচেয়ে বেশি দূষিত ছিল। এ সময়ে ওই এলাকার বায়ুতে উপস্থিত বস্তুকণার বার্ষিক গড় ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৯১.৪ মাইক্রোগ্রাম, যা আদর্শমানের (১৫ মাইক্রোগ্রাম) চেয়ে ৬ গুণ বেশি। আর সর্বনিম্ন বায়ুদূষণ ছিল সংসদ ভবন এলাকায়। সেখানে বস্তুকণার গড় উপস্থিতি ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৫৯.৪ মাইক্রোগ্রাম, যা আদর্শমান থেকে প্রায় ৪ গুণ বেশি। অন্যান্য এলাকার মধ্যে মতিঝিলে ৭৯.৪, আগারগাঁওয়ে ৭৪.৪, আবদুল্লাহপুরে ৭৪, ধানমন্ডি-৩২ এ ৭৩.৬, মিরপুর-১০ এ ৭২.৭, গুলশান-২ এ ৭১.২, আহসান মঞ্জিলে ৭০.৬ এবং তেজগাঁওয়ে ৬৭ মাইক্রোগ্রাম গড় বায়ুমান সূচক ছিল।
ড. মজুমদার বলেন, দেশের বায়ুমান উন্নয়নে নবায়নযোগ্য শক্তি একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে। সে জন্য ভবিষ্যতে বায়ুদূষণের মারাত্মক প্রভাব হ্রাসের জন্য নতুন প্রণীত বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০২২ এ কমপক্ষে পূর্ববর্তী মান প্রতিঘনমিটারে ১৫ মাইক্রোগ্রাম বজায় রাখা, তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে সহযোগিতা প্রদানকারী দেশগুলো নিজ দেশে যেভাবে ইমিশনের মানমাত্রা মেনে চলে একইভাবে বাংলাদেশেও বজায় রাখা, কম সালফারযুক্ত ডিজেল আমদানি ও ব্যবহার নিশ্চিত করা, পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-২০২৩ এ সব কয়লা, তেল ও গ্যাসভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্লান্টকে পূর্বের মতো লাল শ্রেণিভুক্ত রাখা এবং প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক কপ২৬-এর ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে উৎপাদনে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।