প্রচ্ছদ ›› জাতীয়

চিংড়িতে জেলি আর রক্ত বরফে মাংস: সাবধান বাণীতেই মুক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৯ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:৪৭:৫২ | আপডেট: ২ years আগে
চিংড়িতে জেলি আর রক্ত বরফে মাংস: সাবধান বাণীতেই মুক্তি

চিংড়ি মাছে ব্যবহার হচ্ছে ক্ষতিকর জেলি আর ফ্রিজ ছাড়াই রক্তপানি মিশ্রিত বরফে সংরক্ষণ করে বিক্রি হচ্ছিল মাংস। রাজধানীর মিরপুর-১ কাঁচা বাজার ও মাছের বাজারে এমন দৃশ্য দেখতে পায় ভ্রাম্যমাণ আদালত।

সোমবার রাজধানীর এসব বাজারে সমন্বিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা। সেখানে নানা অসঙ্গতি ও অনিরাপদ পদ্ধতিতে মাছ-মাংস সংরক্ষণসহ আরও নানা খাদ্য পণ্য বিক্রিতে অনিয়ম দেখতে পান তারা। তবে অভিযানে কেবল ভৎসনা, সাবধান বাণী আর মুছলেকায় ছাড় পেয়েছেন অনিয়মনের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ফুড প্ল্যানিং অ্যান্ড মনিটরিং ইউনিট (এফপিএমইউ), জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এ সমন্বিত মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক (খাদ্যের বিশুদ্ধতা পরিবীক্ষণ ও বিচারিক কার্যক্রম বিভাগ) ড. সহদেব চন্দ্র সাহা।

সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর ১২টায় মাছের বাজারে অভিযানে যায় সমন্বিত মোবাইল কোর্ট। সেখানে নিরাপদ মাত্রা ছাড়িয়ে গলা-পচা বোয়াল মাছ বিক্রি করতে দেখা যায়। এরপর সেগুলো জব্দ করা হয়।

চিংড়ি মাছের একটি দোকানে দেখা যায়, কার্টনের ওপরে সাজানো চিংড়ি ভালো হলেও ত্রিপলে ঢাকা নিচে রাখা চিংড়ি মাছে জেলির উপস্থিতি পায় মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এজন্য দুই কার্টন চিংড়ি মাছ জব্দ করা হয়। মাছের দোকানটির মালিকের অনুপস্থিতিতে ভৎসনা করা হয় উপস্থিত বাজার পরিচালনা কমিটির সদস্যদের।

এছাড়া ফ্রেশ বিফ কাট সার্ভিস, হুমায়ুন মোল্লা গোশতো বিতান, মিনহাজ এন্টারপ্রাইজ নামক মুরগি ও গরু খাসির মাংসের দোকানের কর্মচারিদের ভৎসনা করা হয়। সঙ্গে শোনানো হয় সাবধান বাণী। দুজনের কাছ থেকে নেওয়া হয় লিখিত মুছলেকা। জব্দ করা হয় বিপুর পরিমাণ মাংস।

মুন্সিগঞ্জ জেনারেল স্টোর, নিউ সনিয়া জেনারেল স্টোরসহ অন্তত ১২টি দোকানে অভিযান চালানো হয়। সেখানে বিভিন্ন কোম্পানির পাইকারি পণ্য কিনে এনে নতুন করে প্যাকেজিং করা হলেও লেবেল ছাড়াই বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়। এজন্য মালিকদের নিয়ম-কানুনের কথা শোনান নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা। ভবিষ্যতে নিয়মের ব্যত্যয় রেখে পণ্য বিক্রি করা হলে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে মর্মে শোনানো হয় সাবধান বাণী।

অভিযান শেষে ঢাকা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বি এম মোস্তফা কামাল বলেন, মিরপুরে অগোছালো ও অনিরাপদভাবে খাদ্যপণ্যসহ মাছ-মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। এসব নিয়ে আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল। এরপর অভিযানে এসে আমরা অনেক ব্যত্যয় পেয়েছি।

তিনি বলেন, চিংড়ি মাছে জেলি ব্যবহার হয়েছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এসব খেলে যকৃত আক্রান্ত হতে পারে, ক্যান্সার হতে পারে, পেটের পীড়া হতে পারে। তাছাড়া ওজনও বেড়ে যায়, ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্থ ও প্রতারিত হন। সেগুলো আমরা জব্দ করেছি। বাজারে শিলং মাছ পেয়েছি, যা বিক্রি করা আইনগত দণ্ডনীয় অপরাধ। এই মাছ পরিবেশ অধিদপ্তর সংরক্ষণ করার জন্য সারাদেশে তাগিদ দিচ্ছে।

এমনকি মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় কাউকে জরিমানা করতেও দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে মোস্তফা কামাল বলেন, অভিযানের সময় অধিকাংশ দোকানে মূল মালিকের অনুপস্থিতি ছিল। আপাতত আমরা শুধু অভিযুক্তদের সাবধান করেছি।

বাজার সভাপতি কাজী রায়হান তপন বলেন, যেসব দোকানে নিয়মের ব্যত্যয় পাওয়া গেছে মোবাইল কোর্ট সেখান থেকে মালামাল জব্দ করেছে, ভর্ৎসনা করেছে। আমরা ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসবো। সচেতনতায় ট্রেনিং, নিয়ম-কানুন জানাবো।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।