প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশের মানুষ যখনই কোনো বিপদে পড়ে সবার আগে তারা আশ্রয় খোঁজে পুলিশের কাছে। কাজেই পুলিশ জনগণের বন্ধু। এটা সব সময়ই চলে আসছে এবং সেটাই প্রতিষ্ঠা করা একান্তভাবে দরকার।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের জান-মাল রক্ষা ও দেশের শান্তি রক্ষায় সব সময়ই পুলিশ তার জীবন দিয়ে প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং ধ্বংসাত্মক কাজ রুখে দিয়েছে।’
মঙ্গলবার ‘স্মার্ট পুলিশ স্মার্ট দেশ, শান্তি প্রগতির বাংলাদেশ’ এ প্রতিপাদ্যে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২৪’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
‘পুলিশ বাহিনী মানুষের আস্থা বিশ্বাস অর্জন করবে এটাই সব সময় কাম্য’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ, করোনায় সব সময় পুলিশ বাহিনী বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। কোভিডের কারণে কেউ মারা গেছেন, আত্মীয় স্বজন লাশ ফেলে চলে গেছেন কিন্তু পুলিশ বাহিনী তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, কাফন-দাফন, সৎকারের ব্যবস্থা করেছে। ফোন করলে রাতে খাবার পৌঁছে দিয়েছে। পুলিশ সব সময় মানুষে পাশে থেকে সেবা করে থাকে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিগত ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সারাদেশে হরতাল-অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও ও আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে নিরীহ মানুষ হত্যা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করে। পুলিশ সদস্যরা জীবন বাজি রেখে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড রুখে দিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘বরাবরের মতোই সেই অপশক্তি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচাল এবং গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। আপনারা দেখেছেন ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর হতে তারা কি নির্মমভাবে পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলামকে হত্যা করেছে। তারা ট্রেন ও বাসে আগুন দিয়ে নির্মমভাবে নিরীহ মানুষ হত্যা, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর এবং প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারপতিদের বাসভবনে হামলা চালিয়েছে। ৩০ জনেরও বেশি সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করেছে। রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালেও ককটেল নিক্ষেপ করেছে। কিন্তু ধৈর্য ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে পুলিশ সদস্যগণ এসব পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন, এজন্য আমি আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আমরা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে পদক্ষেপ নেই। আমরা জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করি। পুলিশ, র্যাবসহ সকল আইন-শৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করি। গত ১৫ বছরে আমরা পুলিশের উন্নয়নে বহুমুখী কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পুলিশে এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) এবং কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) গঠন করেছি। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও দমনে গঠন করা হয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), হাইওয়ে পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ পুলিশ, এন্টি টেররিজম ইউনিট, স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন, এমআরটি পুলিশ।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তায় আর্মড পুলিশের ২টি এবং র্যাবের ১টি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশে ইতোমধ্যে ডিএনএ ল্যাব, আধুনিক ফরেনসিক ল্যাব, এবং আধুনিক রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাইবার অপরাধ এবং এর সঙ্গে যুক্ত ফাইন্যানসিয়াল ক্রাইম, মানি লন্ডারিং ইত্যাদি অপরাধসমূহ মোকাবিলায় ‘সাইবার পুলিশ সেন্টার স্থাপন’ করা হয়েছে। এছাড়া, ডিএমপির সিটিটিসি-সহ পুলিশের অন্যান্য ইউনিটও সাইবার অপরাধ দমনে কাজ করছে। পুলিশে একটি পূর্ণাঙ্গ সাইবার পুলিশ ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশের ব্যবস্থাপনায় জনপ্রিয় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ গত ছয় বছরে প্রায় সোয়া পাঁচ কোটি কল রিসিভ হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় সোয়া দুই কোটি সেবা প্রত্যাশীকে জরুরি সেবা প্রদান করা হয়েছে। জরুরি সেবা ৯৯৯ কে আরও সমৃদ্ধ করা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পুলিশ বাহিনী আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘের নেতৃত্বে বিভিন্ন জায়গায় শান্তিরক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। এমনকি এই শান্তিরক্ষায় কাজ করতে গিয়েও অনেক পুলিশ কর্মকর্তার জীবন দিতে হয়েছে।