প্রচ্ছদ ›› জাতীয়

জলবায়ু অর্থায়ন ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের কম হওয়ার সুযোগ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
২২ অক্টোবর ২০২২ ২০:২৯:৪৩ | আপডেট: ২ years আগে
জলবায়ু অর্থায়ন ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের কম হওয়ার সুযোগ নেই

জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে নিজেদের কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করেনি উন্নত রাষ্ট্রগুলো। ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্র এবং অঞ্চলসমূহকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য আনুষ্ঠানিক একটি পদ্ধতিও দরকার। এ লক্ষ্যে অর্থায়ন ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের কম হওয়ার সুযোগ নেই।

শনিবার সকালে রাজধানীতে এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আসন্ন কপ-২৭ এ বাংলাদেশের ভূমিকাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সরকারের প্রণিত কর্মকৌশলে নাগরিক সমাজের মতামত যুক্ত করার উদ্দেশ্যে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) এবং কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান।

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন সিপিআরডি’র নির্বাহী প্রধান জনাব মো: শামসুদ্দোহা।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবেলায় অভিযোজন স্বল্পতার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি কমাতে জলবায়ু অর্থায়নের নিম্নপ্রবাহকে বাড়াতে হবে। অবিলম্বে বৈশ্বিক কার্বন উদগীরণ হ্রাসকরণের লক্ষ্যমাত্রা যথেষ্ট পরিমাণে বাড়াতে না পারলে পৃথিবীর পরিস্থিতিকে আর নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না।

বর্তমান বাস্তবতায় জলবায়ু অর্থায়ন ১০০ বিলিয়ন ডলার কোনভাবেই যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, জলবায়ু অর্থায়নের নতুন লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। এই ফান্ডটি কোনভাবেই এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের কম হওয়ার সুযোগ নেই।

জলবায়ু অর্থায়ন ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের চাহিদা মতন হওয়া জরুরি বলে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, উন্নত বিশ্বের চাপিয়ে দেয়া ঋণ প্রবাহের আগ্রহ না দেখিয়ে, ন্যায্যতাভিত্তিক অনুদানের জন্য বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোকে জোর দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, কপ-২৭-তে আমাদের সামনে আসা সুযোগগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। এজন্য বাংলাদেশের একটি সমন্বিত কর্মকৌশল তৈরি করতে হবে, আমরা নাগরিক সমাজ সেই বিষয়ে সাহায্য করতে চাই।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দক্ষিণাঞ্চলসহ সারাদেশেই ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, এই বিষয়গুলো বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার আহবান জানান তিনি।

আলোচনা সভায় বিশেষ অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় সংসদের সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি ও তানভীর শাকিল জয়।

ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, জলবায়ু সমঝোতা আলোচনায় একটি সমন্বয়হীন প্রক্রিয়ায় চলছে। এজন্য একটি যথাযথ সমন্বিত ব্যবস্থা প্রণয়নের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।

নাগরিক সমাজ, নীতিনির্ধারক, গবেষক সমাজের মধ্যে একটি সমন্বয় তৈরি করা জরুরি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

অধিক ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোর জন্য আলাদা অর্থায়ন কাঠামোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, গবেষক-নাগরিক সমাজের মধ্যে একটি জোটবদ্ধ কর্মসূচি থাকা দরকার। এছাড়াও সংসদ সদস্যদেরও দায়িত্ব আছে, নাগরিক সমাজ এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে যে কথাগুলো আসছে সেগুলো নিয়ে সংসদের ভিতরে বাহিরে কথা বলতে হবে।

সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয় বলেন, নাগরিক সমাজের সাথে সবসময় মধুর সম্পর্ক থাকে না। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের মতো একটি জায়গায় নীতিনির্ধারক এবং নাগরিক সমাজের মাঝে কোনো রকম দূরত্ব থাকা উচিৎ নয়।

এ বারের সমঝোতা সম্মেলনে একজনও সংসদ সদস্য যুক্ত নয় বলে, দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে অন্যতম একটি বড় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে জলবায়ু অভিবাসী। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে কথা বলে যাচ্ছি। কিন্তু দুঃখজনক হলো বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছ থেকে এ বিষয়ে আমরা যথাযথ উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি না।

তানভীর শাকিল জয় বলেন, জলবায়ু অর্থ দিয়ে এবং গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড দিয়ে অনেক প্রকল্প করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো বেশিরভাগ প্রকল্পই অর্থ অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়।

এছাড়াও আলোচনা করেন- পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ, ডিয়াকোনিয়া’র কান্ট্রি ডিরেক্টর খোদেজা সুলতানা লোপা, এসডিএসের নির্বাহী পরিচালক রাবেয়া বেগম, ক্লাইমেট ব্রিজ ফান্ডের প্রধান ড. গোলাম রাব্বানি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল আওয়াল খান, ইপসা’র প্রধান নির্বাহী জনাব মো: আরিফুর রহমান, কোস্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক আমিনুল হক, সুইজারল্যান্ড এম্বাসির প্রোগ্রাম ম্যানেজার শিরিন লিরাসহ সরকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মর্কতা-কর্মচারীবৃন্দ।

ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ বলেন, নাগরিক সমাজ এবং নীতিনির্ধারকদের মাঝে একটা বড় ধরণের গ্যাপ রয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও নাগরিক সমাজের কাছে আসার আগ্রহ কম দেখা যায়।

সংসদীয় স্থায়ী কমিটির উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদেরও দায় আছে, আপনারা নাগরিক সমাজের সাথে বিভিন্ন আলোচনা বাড়াতে জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে বাধ্য করতে পারেন।

ক্লাইমেট ব্রিজ ফান্ডের প্রধান জনাব ড. গোলাম রাব্বানি বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়নের অন্তত ৫০ শতাংশ হওয়া উচিৎ অভিযোজন ফান্ড, কিন্তু আমরা সেটি পাচ্ছি না। বর্তমান ক্লাইমেট ফাইনান্সিং-এর ৭০ শতাংশ হয়ে যাচ্ছে ঋণ, যেটি ক্লাইমেট ফাইনান্সিংকে ঋণ নির্ভর করে দিচ্ছে, এটি বন্ধে আমাদের চাপ প্রদান করতে হবে।