আগামী জুলাই থেকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হিসাবায়নে আইএমএফের পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে এ পদ্ধতিতে রিজার্ভ হিসাবায়ন শুরুও করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সংস্থাটির পক্ষ থেকে জুনের মধ্যে নিট রিজার্ভ রাখার যে শর্ত দেয়া হয়েছিল সেটি বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জিং হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দলের বৈঠকে এসব বিষয় উঠে আসে।
বাংলাদেশকে দেয়া ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ সহায়তার শর্ত পূরণের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনার জন্য মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় আসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) স্টাফ কনসালটেশন মিশন। আট সদস্যের এ মিশনে নেতৃত্বে আছেন সংস্থাটির এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ। যদিও তিনি কয়েক দিন পর যোগ দেবেন বলে জানা গেছে। বাকি ৭ সদস্য গতকাল দিনভর অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে।
জানা যায়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অর্থে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ), গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ), লং টার্ম ফাইন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি (এলটিএফএফ) শীর্ষক কয়েকটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া রিজার্ভ থেকে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ বিমানকে ঋণ দেয়া হয়েছে।
বর্তমানে ইডিএফে ৫ দশমিক ২ কোটি, জিটিএফে ২০ কোটি, এলটিএফএফে ৩ কোটি ৮৫ লাখ এবং সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে ৬৪ কোটি ডলার ও বাংলাদেশ বিমানকে ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কারেন্সি সোয়াপের আওতায় শ্রীলংকাকে দেওয়া হয়েছে ২০ কোটি ডলার।
আইএমএফের ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন (বিপিএম-৬) ম্যানুয়াল অনুযায়ী, এসব দায় রিজার্ভ হিসেবে বিবেচিত হবে না। সংস্থাটির ভাষায় এগুলো নন লিকুইড সম্পদ বা ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড সিকিউরিটিজ। তাই রিজার্ভ থেকে এসব অর্থ বাদ দিয়ে প্রকৃত রিজার্ভ দেখানোর পরামর্শ দিয়ে আসছে আইএমএফ।
এ ছাড়া আইএমএফের সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে আরও আছে- সুদের হারের সীমা তুলে দেওয়া, ডলারের একক রেট নির্ধারণ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির ভূমিকা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জ্বালানিতে ভর্তুকি কর্তন, ঋণের যথাযথ ব্যবহার, খেলাপি হ্রাস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শে কার্যকরী পরিবর্তন এবং এসব প্রতিষ্ঠানের পর্ষদের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ব্যাংক কোম্পানি আইন সংস্কার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, আইএমএফের ‘স্টাফ ভিজিট একটি নিয়মিত কাজ। সদস্য সব রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির আলোকে সংস্থাটি সংস্কার নিয়ে বৈঠকের মাধ্যমে নিয়মিত তদারকি করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অর্থনৈতিক সূচকগুলোর হালনাগাদ তথ্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব প্রয়োজনে কিছু রিফর্ম (সংস্কার) নিয়ে কাজ করছি। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার একাধিক রেট একটিতে নিয়ে আসা, সুদহার বাজারমুখী করা ও রিজার্ভ হিসাব আইএমএফের বিপিএম৬ পদ্ধতিতে করার বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। রিজার্ভ হিসেবে আমাদের গ্রস হিসাবটিও থাকবে।
আইএমএফে পদ্ধতিতে রিজার্ভ হিসাবায়ন করলে কোনো ঝুঁকি দেখছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো আমরা রিজার্ভ নিয়ে কোনো ঝুঁকিতে নেই। সামনে বিশ্ব্যাংক, জাইকাসহ কয়েকটি সংস্থার ঋণ নিয়ে আলোচনা পাইপলাইনে রয়েছে। আকু পেমেন্ট ছাড়া আগামী জুনের মধ্যে আমাদের বড় কোনো দায় নেই। তাই এখনো কোনো সমস্যা দেখছি না।
চাপে থাকা রিজার্ভ স্বস্তিদায়কে ফেরাতে আমদানিতে যে কড়াকড়ি করা হয়েছে, তা আগামীতেও অব্যাহত রাখা হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মেজবাউল হক আরও বলেন, আমরা আমদানিতে মার্জিন বাড়িয়েছি অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে। কোনো পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করতে মার্জিন-বাড়ানো হয়। আবার কমানো হয়। সবই অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার অংশ। যখন যেটা প্রয়োজন হয় বাংলাদেশ ব্যাংক নিচ্ছে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আইএমএফ গত মার্চে ২২.৯৪৭ বিলিয়ন ডলার নিট রিজার্ভ রাখার ফ্লোর নির্ধারণ করেছিল, যা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। আগামী জুনে এই ফ্লোর বাড়িয়ে ২৪.৪৬২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার শর্ত রয়েছে সংস্থাটির। কিন্তু জুনেও এই ফ্লোরে রিজার্ভ উন্নীত করা চ্যালেঞ্জিং হবে বলে আইএমএফকে জানানো হয়েছে।