ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিস্তা সমস্যা সমাধানে আগ্রহী। কিন্তু ভারতের ভেতরেই এ নিয়ে সমস্যা আছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চার দিনের ভারত সফরের আগে ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। এএনআইয়ের হয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্মিতা প্রকাশ।
রোববার তাদের ওয়েবসাইটে এ সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। এতে বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলোর পাশাপাশি তিস্তা চুক্তির প্রসঙ্গটি আসে।
তিস্তা নদীর পানিবণ্টন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক যে, এখনও এটি ঝুলে আছে। আমাদের এখানে ভারত থেকে পানি আসে, তাই ভারতের আরও উদারতা দেখাতে হবে। কারণ, এতে উভয় দেশই লাভবান হবে। কখনও কখনও পানির অভাবে আমাদের জনগণও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে তিস্তায় পানি না পেয়ে আমরা ফসল রোপণ করতে পারিনি এবং আরও অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই আমি মনে করি এর সমাধান হওয়া উচিত। অবশ্য আমরা দেখেছি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী এই সমস্যাটি সমাধাসে আগ্রহী, কিন্তু সমস্যাটি আপনাদের দেশেই। তবু আমরা আশা করি এটি সমাধান হবে এবং এটি সমাধান করা উচিত।’
তিনি বলেন, দুই দেশ গঙ্গা নদীর পানি ভাগ করে নিয়েছে। কিন্তু শুধু গঙ্গার পানিই আমরা ভাগাভাগি করেছি। এই পানির বিষয়ে আমরা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু আমাদের আরও ৫৪টি নদী আছে। এগুলো নিঃসন্দেহে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা, তাই এসবের সমাধান হওয়া উচিত।
এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ থাকলেও সেগুলো এমন কিছু নয়, যা পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান করা যাবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক যে আমরা;আপনি জানেন, আমরা ভাটির দেশ। তাই ভারত থেকে পানি আসছে। তাই ভারতের আরও উদারতা দেখাতে হবে। কারণ, এতে উভয় দেশই লাভবান হবে। তাই মাঝে মাঝে এই পানির প্রয়োজনে আমাদের জনগণকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিশেষ করে তিস্তার কারণে। এর কারণে চাষাবাদে সমস্যা হয়। আরও অনেক সমস্যা তৈরি হয়। তাই আমার মনে হয়, এ সমস্যার সমাধান করা উচিত।’
আরও পড়ুন- তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ভারতের ওপর নির্ভর করছে: প্রধানমন্ত্রী
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদি) এ সমস্যা সমাধানে আগ্রহী। কিন্তু সমস্যাটা আপনাদের (ভারতের) দেশের ভেতরে। তাই আমার মনে হয়, এর সমাধান হওয়া উচিত।’
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে হওয়া গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির কথা সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু গঙ্গার পানি ভাগাভাগি করি। এর জন্য আমরা চুক্তি করেছি। কিন্তু আমাদের আরও ৫৪টি নদী আছে। হ্যাঁ, তাই এটা একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। তাই এটি সমাধান করা উচিত।’
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার এখন নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেছি। এই সমস্যা সমাধানে প্রতিবেশী ভারত মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার মানবিক দিকটি বিবেচনা করে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার যত্ন নিচ্ছে। বর্তমানে রোহিঙ্গার আমাদের জন্য বড় একটি বোঝা। ভারত বড় একটি দেশ, সেখানে থাকার জায়গা অনেক হলেও কিন্তু দেশটিতে খুব বেশি রোহিঙ্গা নেই। আর আমাদের দেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয়ে আছে। এই সমস্যাটি সমাধানে ভারত ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শুধু মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিই। তাদের সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে করোনা মহামারির সময়ে টিকার আওতায় এনেছি। আমাদের পরিবেশকে বিপজ্জনক করে তুলছে। রোহিঙ্গাদের কিছু অংশ মাদকপাচার, অস্ত্র ব্যবসা, নারী পাচারসহ নানান সহিংসতায় জড়িয়ে পরিবেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। তারা যত দ্রুত দেশে ফিরবে আমাদের এবং মিয়ানমারের জন্য মঙ্গলজনক।