প্রচ্ছদ ›› জাতীয়

তীব্র গরম, বিদ্যুৎ বিড়ম্বনা, জনগণ দিশাহারা

আশরাফুল ইসলাম রানা
২০ জুলাই ২০২২ ১০:২৩:২৮ | আপডেট: ৩ years আগে
তীব্র গরম, বিদ্যুৎ বিড়ম্বনা, জনগণ দিশাহারা

সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিদিন এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টা লোডশেডিং হবার কথা থাকলেও মঙ্গলবার লোডশেডিং শিডিউলের প্রথম দিনেই দেখা গেছে বিশৃঙ্খলা। দেশের কোথাও কোথাও এই লোডশেডিংয়ের সময় ১ ঘণ্টার পরিবর্তে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছে।

দেশজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ আর তার উপর যেনো মড়ার উপর খাড়ার ঘাঁ এই লোডশেডিং। এর মধ্যে চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ ছিলো না। দেশের অন্যান্য জেলা যেমন; দিনাজপুর, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, যশোর, চট্টগ্রাম, ভোলা, কুমিল্লা ও সিলেটেও কিছু সময় পরপরই ঘটেছে লোডশেডিং বিড়াম্বনা।

অবশ্য বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খানিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ হুঁশিয়ারি ব্যক্ত করেছেন, যেসব শপিংমল রাত আটটার পর খোলা থাকবে সেগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে।

বিভিন্ন জেলার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিজনেস পোস্টকে জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ প্রবাহ গড়ে প্রায় ৪ ঘণ্টারও বেশি বন্ধ থাকায় তাদের ফ্যাক্টরির উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এর ফলে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও শপিংমলগুলোর জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে নিরবিচ্ছিন্নভাবে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া।

জানা গেছে; বিদ্যুতের অভাবে দেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু কিছু এলাকায়র কৃষকরা তাদের সেচ পাম্প ঠিকমতো চালাতে পারেননি। ফলে বাধাগ্রস্ত হয়েছে কৃষি কাজ।

মঙ্গলবার বিকেলে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার আবদুল হাদী জানান; সারাদিনের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহ ছিলো মাত্র ৫ ঘণ্টা। তীব্র গরম আর বিদ্যুৎ সংকটে দিশাহারা হয়ে পড়েছে জনগণ।

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার আল নোমান বলেন; হাটাজারি উপজেলায় প্রায় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ ছিলো না। যে কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ও ক্লিনিকগুলো প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। 

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রহমান বিজনেস পোস্ট’কে বলেন; বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে রাজধানীর বাইরের ফ্যাক্টরিগুলো।

তবে বিদ্যুৎ শক্তির বৈশ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে সাময়িকভাবে আমাদের লোডশেডিং মেনে নিতে হবে। তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন; যাতে ভবিষ্যতে আর লোডশেডিং-এর সময়সীমা বর্ধিত করা না হয়।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ফাউন্ডেশনের জন্য বিদ্যুতের এ ঘাটতি ভীষণ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ১ ঘণ্টার লোডশেডিং সহনীয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মির্জা নূরুল গণি শোভন বলেন; যদি এর সমসয়সীমা বাড়ে তবে রপ্তানি বাণিজ্য ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসা ভেঙে পড়বে।

এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. সেলিম উদ্দিন বিজনেস পোস্ট’কে বলেন; দেশের বিভিন্ন জেলায় লোডশেডিংয়ের এ বিষয়টি তার কানেও এসেছে।

তিনি বলেন; আমরা যে পরিমাণ বিদ্যুৎ পাই সেই পরিমাণ সরবরাহ করি। বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় এ ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। 

অবশ্য ডিপিডিসি মঙ্গলবার থেকে রাজধানীতে লোডশেডিং শুরু করেছে। ঢাকায় ১ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং কোথাও হয়নি বলে খবর পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেলিম উদ্দিন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, রাত ৮টার পর দোকানপাট ও শপিংমল বন্ধের এ সরকারি সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে মনিটর করবে বিদ্যুৎ বিভাগ।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি মঙ্গলবার রাত থেকে এ ক্যাম্পেইন শুরু করেছে, যদি কোনো শপিংমল রাত আটটার পর খোলা থাকে তবে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে।  

তিনি সবাইকে অনুরোধ করেন এ বিষয়ে সরকারকে সহায়তা করার জন্য।

বিদ্যুৎ সংকটের কারণে সারাদেশে ভয়াবহভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বৈশ্বিক বাজারে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে যথেষ্ট কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে। 

বিদ্যুৎ বাঁচাতে সরকার সোমবার এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং এর ঘোষণা দিয়েছে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে এই লোডশেডিং-এর হার আরও বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।

সরকারের দাবি এ সঙ্কটের পেছনে মূল দায়ী রাশিয়া ইউক্রেন-যুদ্ধ। তবে বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সংকটের মুখে পড়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।