প্রচ্ছদ ›› জাতীয়

দেশে জ্বালানি তেলের ঘাটতি নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৮ জুলাই ২০২২ ০৯:২১:১১ | আপডেট: ৩ years আগে
দেশে জ্বালানি তেলের ঘাটতি নেই

দেশের জ্বালানি তেলের সরবরাহ ও মজুতের কোনো ঘাটতি নেই। এখনো ছয় মাসের তেল মজুত রয়েছে। এমনকি শনিবার আরও ৩০ হাজার টন ডিজেল আসবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।

যেসব দেশের জ্বালানি খাত আমদানিনির্ভর তাদের ওপরই ঝড় যাচ্ছে বেশি। বাংলাদেশের জ্বালানি খাত যেহেতু আমদানিনির্ভর, সেহেতু নেতিবাচক প্রভাব এড়াতে সরকার আগাম সতর্কতা হিসাবে জ্বালানি সাশ্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জ্বালানি তেল সাশ্রয়ে কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। ফলে সারাদেশে হচ্ছে লোডশেডিং।

সরকারের সাশ্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণের পর থেকেই নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়ছে দেশে। দেশের ডলারের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে, তেলের মুজদ কমে যাচ্ছে, শ্রীলংকার মতো অবস্থা হবে এমন প্রচারণা চালিয়ে মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলছে একটি মহল।

বুধবার বিপিসি চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ বলেন, দেশে জ্বালানি তেলের কোনো ঘাটতি নেই। রাজধানীসহ দেশের পেট্রলপাম্পে ডিজেল ও অকটেনের সরবরাহ স্বাভাবিক এবং স্থিতিশীল রয়েছে। অথচ দেশে পেট্রল ও অকটেনের মজুদ নিয়ে গত মঙ্গলবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব রটানো হয়েছে। পেট্রলপাম্পে তেল সরবরাহ কমানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তেল নেওয়ার ক্ষেত্রেও কোনো সীমা বেঁধে দেওয়া

আরও পড়ুন- ‘রেমিট্যান্স, রপ্তানি ও আমদানি বাড়ছে’

হয়নি। এখনো দেশে ডিজেল মজুদ আছে ৩২ দিনের। জেট ফুয়েলের মজুদও আছে ৪৪ দিনের। সাইক্লিক অর্ডারে জ্বালানির আমদানির নিশ্চয়তা আছে, এ নিয়ে কোনো সংকট নেই। বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বিপিসির চুক্তি অনুযায়ী জ্বালানি তেলের সরবরাহ লাইন এখনো স্বাভাবিক আছে। সরকার চাইছে, দেশে জ্বালানি তেলের ব্যবহার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমাতে। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।

এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে যে নেতিবাচক গুঞ্জন চলছে সে বিষয়ে গতকাল কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস।

তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ কিছুটা কমলেও তাতে ঝুঁকি নেই। আমাদের সংকট যেটা সবাই বলছে, রিজার্ভ নিয়ে সবারই এক ধরনের মাথাব্যথা হয়ে গেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যখন ২১ থেকে ২০ বিলিয়ন হয়েছিল তখন মানুষের ধারণা ছিল এত টাকা দিয়ে কী হবে? এমনকি ২০১৯ সালেও আমাদের ৩০ বা ৩১ বিলিয়ন রিজার্ভ ছিল, কারও কোনো চিন্তা ছিল না। ৪০ বিলিয়ন পার হওয়ার পর মনে হচ্ছে যেন একটু এদিক-ওদিক হলেই দেশের ভিত্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

এদিকে জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে গুজব নিয়ে গণমাধ্যমে একটি ব্যাখ্যা পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, একটি স্বার্থান্বেষী মহল জ্বালানি তেলের মজুদ নিয়ে অসত্য ও মনগড়া তথ্য প্রচার করছে, যা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। আমরা দৃঢ় প্রত্যয়ে বলছি, বিপিসির আওতাধীন কোম্পানিগুলোর ডিপোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জ্বালানি তেল মজুদ রয়েছে। বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের কোনো ঘাটতি বা সংকট নেই। সংকটের কোনো আশঙ্কাও নেই। ইতোমধ্যে আগামী ছয় মাসের জন্য প্রয়োজনীয় তেল আমদানির প্রক্রিয়া পাইপলাইনে আছে।

আরও পড়ুন- বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অর্থায়নে আগ্রহী জেবিআইসি

বুধবার পর্যন্ত ডিজেল মজুদ রয়েছে চার লাখ ৩১ হাজার ৮৩৫ টন। দৈনিক গড় বিক্রি ১৩ হাজার ৬০৭ টন। সেই হিসাবে ৩২ দিনের মজুদ আছে। এ ছাড়া জেট পুয়েল মজুদ রয়েছে ৪৪ দিনের ও ফার্নেস ওয়েল মজুদ রয়েছে ৩২ দিনের। অর্থাৎ দেশে এখনো যথেষ্ট পরিমাণ জ্বালানি তেল মজুদ রয়েছে। পেট্রল পুরোটাই এবং অকটেনের প্রায় ৪০ ভাগ বাংলাদেশ উৎপাদন করে।

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, চলতি জুলাই মাসে ৯টি জাহাজ থেকে ইতোমধ্যে ২ লাখ ৫৫ হাজার টন ডিজেল, ২টি জাহাজে প্রায় ৪৩ হাজার টন জেট ফুয়েল, একটি জাহাজ থেকে ২৪ হাজার ৬৭৭ টন অকটেন এবং দুটি জাহাজ থেকে ৫৩ হাজার ৩৫৮ টন ফার্নেস অয়েল গ্রহণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন- ব্যাংকের ব্যয় সংকোচন, গাড়ি কেনাও বন্ধ

আগামী মাসের জন্যও বিপিসি ৮টি তেলের জাহাজের অর্ডার করা হয়েছে। যার মধ্যে দুই লাখ ১৮ হাজার টন ডিজেল, একটি জাহাজে ২৫ হাজার টন জেট ফুয়েল, একটি জাহাজে ২৫ হাজার টন অকটেন আসবে।

সেই সাথে আগামী ছয় মাসের আমদানি পরিকল্পনা অনুসারে বাংলাদেশে আসবে জ্বালানি তেল। এর ৫০ ভাগ জি-টু-জি টুক্তির মাধ্যমে এবং বাকি ৫০ ভাগ উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে তেল কেনার অর্ডার করা হয়েছে। ফলে ঘাটতি হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।