প্রচ্ছদ ›› জাতীয়

নভেম্বরে সড়কে ৪৬৩ দুর্ঘটনা, মৃত্যু ৫৫৪

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:৩১:৪৩ | আপডেট: ১ year আগে
নভেম্বরে সড়কে ৪৬৩ দুর্ঘটনা, মৃত্যু ৫৫৪
সংগৃহীত

চলতি বছরের নভেম্বর মাসে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৬৩টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত ৫৫৪ জন, আহত হয়েছেন ৭৪৭ জন। নিহতের মধ্যে ৭৮ জন নারী এবং ৭১ জন শিশু।

রোববার রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নভেম্বরের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নভেম্বরে ১৯৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২২৯ জন, যা মোট নিহতের ৪১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪১ দশমিক ৯০ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১২৩ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২২ দশমিক ২০ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৭৯ জন, অর্থাৎ ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ।

এ সময়ে ৩টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত, ৭ জন আহত এবং ২ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ৮টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত এবং ৪ জন আহত হয়েছেন।

৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ২২৯ জন (৪১ দশমিক ৩৩ শতাংশ), বাস যাত্রী ২৮ জন (৫ দশমিক ০৫ শতাংশ), ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-ড্রামট্রাক-মিক্সার মেশিন গাড়ি আরোহী ৩৪ জন (৬ দশমিক ১৩ শতাংশ), মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার যাত্রী ৫ জন (০ দশমিক ৯ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা) ৯৩ জন (১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র-ঘাসকাটা মেশিন গাড়ি) ৩১ জন (৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-প্যাডেল ভ্যান আরোহী ১১ জন (১ দশমিক ৯৮ শতাংশ) নিহত হয়েছে।

দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরণ

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৯২টি (৪১ দশমিক ৪৬ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ১৪৮টি (৩১ দশমিক ৯৬ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৭৪টি (১৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৪৩টি (৯ দশমিক ২৮ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৬টি (১ দশমিক ২৯ শতাংশ) সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরণ

দুর্ঘটনাগুলোর ৮১টি (১৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২০৬টি (৪৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১২৬টি (২৭ দশমিক ২১ শতাংশ) পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দিয়ে, ৩৮টি (৮ দশমিক ২০ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করে এবং ১২টি (২ দশমিক ৫৯ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-পুলিশভ্যান ২২ দশমিক ৯৮ শতাংশ, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ড্রাম ট্রাক-ডাম্পার ট্রাক-ট্যাঙ্ক লরি-মিক্সার মেশিন গাড়ি ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা) ১৬ দশমিক ১১ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন-(নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-পাখিভ্যান-টমটম-মাহিন্দ্র-পাওয়ারটিলার-ধান মাড়াইয়ের মেশিন গাড়ি-ঘাস কাটার মেশিন গাড়ি) ৭ শতাংশ এবং বাই-সাইকেল-প্যাডেল রিকশা-প্যাডেল ভ্যান ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৭৫৭ টি। (ট্রাক ১২৫, বাস ৯৫, কাভার্ডভ্যান ১৮, পিকআপ ৩০, পুলিশভ্যান ১, ট্রলি ১৫, লরি ৬, ট্রাক্টর ৮, ড্রাম ট্রাক ৭, ডাম্পার ট্রাক ৩, ট্যাঙ্কলরি ৩, মিক্সার মেশিন গাড়ি ২, মাইক্রোবাস ১০, প্রাইভেটকার ১২, অ্যাম্বুলেন্স ৩, মোটরসাইকেল ২১৭, থ্রি-হুইলার ১২২ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৫৩ (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-পাখিভ্যান-টমটম-মাহিন্দ্র-পাওয়ারটিলার-ধান মাড়াইয়ের মেশিন গাড়ি-ঘাস কাটার মেশিন গাড়ি) বাই-সাইকেল ৭, প্যাডেল রিকশা ১৪ এবং প্যাডেল ভ্যান ৬টি।

দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ

সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে ভোরে ৪ দশমিক ১০ শতাংশ, সকালে ৩০ দশমিক ০২ শতাংশ, দুপুরে ১৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ, বিকালে ১৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ, সন্ধ্যায় ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং রাতে ১৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ৩০ দশমিক ৬৬ শতাংশ, প্রাণহানি ৩১ দশমিক ৪০ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ, প্রাণহানি ১৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪ দশমিক ৯০ শতাংশ, প্রাণহানি ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ, প্রাণহানি ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৭ দশমিক ১২ শতাংশ, প্রাণহানি ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৪ দশমিক ১০ শতাংশ, প্রাণহানি ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৮ দশমিক ২০ শতাংশ, প্রাণহানি ৯ দশমিক ২০ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ, প্রাণহানি ৭ দশমিক ২২ শতাংশ ঘটেছে।

সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। ১৪২টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৭৪ জন। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ১৯টি দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি ২৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং ময়মনসিংহ জেলায় সবচেয়ে বেশি ২৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে মানিকগঞ্জ, নড়াইল, ঝালকাঠি, লালমনিরহাট ও রাঙ্গামাটি জেলায়। এই ৫টি জেলায় ১১টি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনও প্রাণহানি ঘটেনি।

রাজধানী ঢাকায় ১৮টি দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত এবং ২২ জন আহত হয়েছেন।

নিহতদের পেশাগত পরিচয়

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য ৬ জন, এনএসআই সদস্য ১ জন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক ১৪ জন, চিকিৎসক ২ জন, প্রকৌশলী ৩ জন, সাংবাদিক ৪ জন, আইনজীবী ৩ জন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ১ জন, বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৩ জন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৭ জন, ওষুধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ২৮ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ৩৪ জন, পোশাক শ্রমিক ৯ জন, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিক ২ জন, ইটভাটা শ্রমিক ২ জন, রঙ মিস্ত্রি ২ জন, রাজমিস্ত্রি ১ জন, কাঠমিস্ত্রি ২ জন, প্রবাসী ২ জন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ১৩ জন এবং ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী কলেজের ২ জন ছাত্রসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৮ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।