প্রচ্ছদ ›› জাতীয়

সিদ্দিকবাজারের বিস্ফোরণ

প্রকৌশল মূল্যায়ন ছাড়া ভবন ব্যবহার করা যাবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৩ মার্চ ২০২৩ ১২:২৭:৪২ | আপডেট: ২ years আগে
প্রকৌশল মূল্যায়ন ছাড়া ভবন ব্যবহার করা যাবে না

পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় পুরো ভবনের বিশদ প্রকৌশলগত মূল্যায়ন (ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট) না হওয়া পর্যন্ত ধসে পড়া ভবন ব্যবহার না করতে সুপারিশ করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এছাড়া ভবনের সামনের সড়কে যানবাহন চলাচলে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করারও সুপারিশ করেছে। ঘটনা তদন্তে রাজউকের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করা হয়েছে।

সোমবার তদন্ত প্রতিবেদনটি রাজউকের চেয়ারম্যানের দপ্তরে জমা দেবে কমিটি।

গত ৭ মার্চ মঙ্গলবার গুলিস্তানে বিআরটিসির বাস কাউন্টারের কাছে সিদ্দিকবাজারে কুইন্স স্যানিটারি মার্কেট হিসেবে পরিচিত ৭ তলা ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ভবনটির বেজমেন্ট, প্রথম ও দ্বিতীয় তলা বিধ্বস্ত হয়। বিস্ফোরণের ঘটনায় ২৪ জনের মৃত্যু হয়।

ঘটনার পর পরই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ভবনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে।

প্রতিবেদনে সুপারিশ: প্রথমত, ভবনটি ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট করতে হবে। যেহেতু অত্যন্ত ব্যস্ত সড়কের পাশেই ভবনটি তাই শর্ত দিয়ে বাসসহ হাল্কা যানবাহন চলাচল করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বাসসহ অন্যান্য হাল্কা যানবাহন চলাচল করতে পারবে। তবে রাত ১০টার পর থেকে সকাল ৬টার আগ পর্যন্ত বড় ট্রাক বা লরি চলাচল করা থেকে বিরত রাখতে বলেছে তদন্ত কমিটি।

এছাড়া আপাতত ভবনটি দাঁড়িয়ে থাকার জন্য প্রপিং করার বিষয়টি তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে ডিইএ করতে বলা হয়েছে। এটি ভবন মালিক নিজ খরচে অন্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করবে বলেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আগামী ৬ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ সনদ দাখিল করতেও বলা হয়েছে।

সে সনদে যে নির্দেশনা আসবে তা প্রতিপালন করবে রাজউক। তাতে ভবনটি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলতে হতে পারে আবার মেরামত করে ব্যবহার উপযোগী করা হতে পারে। সাধারণত মেরামত খরচ ৩০ শতাংশের উপরে গেলে সে ভবনটি ভেঙে ফেলার পরামর্শ দেয় রাজউক। এক্ষেত্রে ডিইএ রিপোর্ট পেলেই বোঝা যাবে ভবনটি ভাঙতে হবে নাকি মেরামত করতে হবে।

এই রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত সিদ্দিকবাজারের ধসে পড়া ভবনটিতে কেউ বসবাস করতে পারবে না। আগামী ৬ মাসের মধ্যে এসব কাজ করতে বলা হয়েছে রাজউকের তদন্ত প্রতিবেদনে।

তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব রংগন মণ্ডল বলেন, আজই তদন্ত রিপোর্ট দেয়া হবে। বাসসহ হাল্কা যানবাহন চলাচলে কিছু বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। এছাড়া পূর্ণাঙ্গ ডিইএ রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত ভবনটি ব্যবহার করা যাবে না।

কমিটির অন্য সদস্য আবদুল লতিফ হেলালী বলেন, ভবনটি এই মুহূর্তে ব্যবহার করা যাবে না। ডিইএ রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না ভাঙতে হবে নাকি মেরামত করতে হবে। এখন প্রপিং করেই রেখে দেয়া হয়েছে।

এদিকে সিদ্দিকবাজারের ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় তিতাসের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) শামসুদ্দিন আল আযহার। রোববার দুপুরে ভবন বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে এই অভিযোগ করেন তিনি। এর আগে দুপুরে তিতাস গ্যাসের ১৮ সদস্যের গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান তিতাসের জিএম বলেন, ‘তিতাস গ্যাসের কারণে যদি এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটত তাহলে ভবনে আগুন লেগে যেত, যা আশপাশে ছড়িয়ে পড়ত। সুতরাং এ ঘটনায় তিতাস গ্যাসের লাইন থেকে বিস্ফোরণের কোনো সম্ভাবনা নেই।’

রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটিতে প্রোপিংয়ের কাজ চালাচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। প্রোপিংয়ের কাজ নির্বিঘ্ন করতে ভবনের সামনের রাস্তা দুই দিক দিয়ে বন্ধ রেখেছে পুলিশ।

অন্যদিকে সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় ভবনের মালিকসহ তিনজনকে দুই দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল রবিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আহমেদ এ আদেশ দেন। কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলেনÑ ভবন মালিক ওয়াহিদুর রহমান, তার ভাই মতিউর রহমান এবং মোতালেব মিন্টু।

গত ৯ মার্চ একটি জিডিমূলে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে ডিবি পুলিশ। আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই ঘটনায় রাজধানীর বংশাল থানায় দায়ের হওয়া মামলায় উল্লিখিত আসামিদের গতকাল গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হলে ১৪ মার্চ শুনানির দিন ধার্য করেন আদালত।