চট্টগ্রামে কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় জেলার ১৩ উপজেলা ও মহানগরীসহ মাছ চাষের ১৩ হাজার ৩৭৯টি পুকুর এবং ১২৬টি মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে। অবকাঠামোসহ সব মিলিয়ে বন্যায় মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে ৭০ কোটি টাকা।
বন্যার পানি নেমে যাবার পর ক্ষয়ক্ষতি অনুসন্ধান করে এ তথ্য জানায় জেলা মৎস্য অধিদপ্তর।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসের জরিপ কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বন্যায় প্লাবিত চট্টগ্রামের ১৩ হাজার ৩৭৯টি পুকুরের আয়তন ৩ হাজার ৭৪৬ হেক্টর। আর ভেসে যাওয়া ১২৬টি মাছের ঘেরের আয়তন ১৮৯ হেক্টর। এসব পুকুর ও ঘের থেকে মাছ ভেসে গেছে ৪ হাজার ১৫৪ টন। সেই হিসাবে এই বন্যায় শুধু মৎস্য খাতেই ৬৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
গত ১ আগস্ট থেকে চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। ৪ আগস্ট নগরী ও জেলায় বন্যা দেখা দেয়। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি অবনতি হতে থাকে। এরমধ্যে ৭ আগস্ট পর্যন্ত চার দিন টানা জলাবদ্ধতা ছিল নগরীতে।
অপরদিকে, জেলার ১৫ উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলায় এখনও কিছু কিছু এলাকায় বন্যায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৪ উপজেলা। সেগুলো হলো- সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, পটিয়া ও চন্দনাইশ।
চার উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য চাষ হয় প্রায় ১০ হাজার পুকুরে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা।
সাতকানিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. হাসান আহসানুল কবির বলেন, সাম্প্রতিক বন্যায় চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার মৎস্য প্রজেক্ট ও পুকুর ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও এ ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।
বন্যায় চট্টগ্রামের ১৩ উপজেলায় মৎস্যখাতে ক্ষতি ৭০ কোটি টাকা
পটিয়া উপজেলার সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা সুজাত কুমার চৌধুরী বলেন, পটিয়া উপজেলায় মোট ৮ হাজার পুকুর রয়েছে। ‘বন্যায় ৪ হাজার পুকুর ও মৎস্য খামারের মাছ ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা।’
চন্দনাইশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসান আহসানুল কবির বলেন, ‘এ উপজেলায় বন্যায় ২ হাজার ৫৩৭টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এরমধ্যে ১০ লাখ মাছের পোনাও আছে। অবকাঠামোসহ প্রাথমিকভাবে এ উপজেলায় মৎস্য খাতে ক্ষতি ১২ কোটি টাকা। তবে এ ক্ষতি আরও বাড়তে পারে।’
তবে অন্য তিন উপজেলার চেয়ে তুলনামূলক কম ক্ষতি হয়েছে লোহাগাড়া উপজেলায়। এ উপজেলায় ৩ হাজার ২৪টি প্রজেক্ট এর মধ্যে ভেসে গেছে ৫০০টি। যার ক্ষতি প্রায় ৫ কোটি টাকা।
শুধু মাছ নয়, অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিভিন্ন কৃষি প্রকল্পেও।
চন্দনাইশের ক্ষতিগ্রস্ত তরুণ উদ্যোক্তা মো. হারুন বলেন, ‘স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় আমার ব্রয়লার মুরগির খামার ডুবে মারা গেছে ১ হাজার মুরগি। পুকুর ভর্তি মাছ ছিল। প্রায় চার লাখ টাকার বেশি মাছ বন্যার পানিতে চলে গেছে। আমার বেশ কিছু সবজি খেতও ছিল। সেগুলো একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যা আমাকে একেবারেই পথে বসিয়ে দিয়েছে।’
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ‘এ বন্যায় জেলার ১৫ উপজেলার মধ্যে সীতাকুণ্ড ও ফটিকছড়ি উপজেলায় মৎস্যখাতে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। জেলার বাকি ১৩ উপজেলা ও মহানগরীতে মৎস্য চাষে অনেক ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় অনেক পুকুর ও মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চন্দনাইশ উপজেলায়।’
তবে সরকারি হিসাবের চেয়ে বন্যায় মৎস্য সেক্টরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চাষিরা।
মাছ চাষে জড়িত তিন উপজেলার একাধিক কৃষক জানান, বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব। সরকারি হিসেবে যে পরিমাণ ক্ষতি দেখানো হয়েছে তার সঙ্গে বাস্তবতার ভিন্নতা রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে। এত বড় আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তারা সরকারের প্রতি সহায়তার আহ্বান জানান।
সূত্র: ইউএনবি