মাটির তৈরি মটকা বা মটকি একসময়ের বহুল ব্যবহার ছিলো এদেশে। এটি ছিলো খাদ্যদ্রব্য বা প্রয়োজনীয় দ্রব্য রাখার পাত্র। সবার বাড়িতেই কমপক্ষে একটা থেকে দুইটা মটকি থাকত। কালের বিবর্তনে এই মটকি এখন খুব একটা দেখা যায়না।
এই প্রজন্ম তাই মটকির ব্যবহার সম্পর্কে অনেকটাই জানে না। এটি মাটি থেকে তৈরি করা এক প্রকার বিশালাকৃতির পাত্র, যা দেখতে অনেকটা কলসের মতো মনে হয়। এ জাতীয় পাত্রে সাধারণত চাল সংরক্ষণ করা হত।
সাধারণের পর্যবেক্ষণজাত বিশ্বাস হচ্ছে, মটকিতে রাখা চালে সহজে পোকা ধরে না এবং চালের গন্ধ ও স্বাদ দীর্ঘদিন অটুট থাকে। তাছাড়া মাটি থেকে তৈরি বলে এ জাতীয় পাত্রের সংস্পর্শে থাকার ফলেও চালে কোনো ক্ষতিকারক উপাদান মিশে না।
হিন্দু পরিবারগুলোতে মটকার মধ্যে বিভিন্ন মাঙ্গলিক চিহ্ন আঁকার প্রচলনও দেখা যায়।
বায়ু প্রতিরোধী হিসাবে কৃষিপণ্য সংরক্ষণে এটি একটি অন্যতম জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত পাত্র ছিল।
কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন গ্রামগুলোতে সাধারণত বছরে একবার মাত্র ধান থেকে চাল করে সারা বছরের জন্য সংরক্ষণে এসব মটকা ব্যবহার করা হত। অনেকদিন ব্যবহার করা যেত। এতে ধান, চালে পোকামাকড়ের আক্রমণ হতো না। ৯০ দশকে গৃহস্থের বাড়িতে এরকম অনেক বড় বড় মটকা ও গোলা ছিল। ওই সময় গৃহস্থরা এখনকার মত ধান চাল বিক্রি করতো না। ফসল উৎপাদন ছিল কম। বর্তমান সময়ে নানা ধরনের ফসল উৎপাদন হচ্ছে। গৃহস্থরা উৎপাদিত ফসল মাঠ থেকে ঘরে না তুলেই বাড়ির বাইরে থেকেই ব্যবসায়ীদের ঘরে দিয়ে আসছে।
ফলে এখন ধান সংরক্ষণের জন্য ওইসব মটকি ব্যবহার গৃহস্থদের তেমন প্রয়োজন হচ্ছে না।
এখন ইটের তৈরি বাড়িঘরের সংখ্যা বেড়েছে। শহরের মত করে গ্রামগঞ্জেও তৈরি করা হচ্ছে বাড়িঘর। ওইসব বাড়িঘরে গৃহস্থরা খাবার জন্য শুধু চাল সংরক্ষণ করে থাকে। সেটাও করে থাকে লোহার বা প্লাস্টিকের তৈরি ড্রামে। কালের বিবর্তনে বর্তমান সময়ে মানুষের জীবনের মানোন্নয়ন ঘটায় এবং ফসল উৎপাদনের ধরনের পরিবর্তন হওয়ায় সেগুলোর ব্যবহার না থাকায় প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব এ মটকি এখন বিলুপ্তপ্রায়। সূত্র- বাসস