প্রচ্ছদ ›› জাতীয়

মার্চে শুরু হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আট লেনে উন্নয়নের বিস্তারিত সমীক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:৩৯:৫০ | আপডেট: ২ মাস আগে
মার্চে শুরু হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আট লেনে উন্নয়নের বিস্তারিত সমীক্ষা

২০১৩ সালে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক’কে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) ভিত্তিতে এক্সপ্রেসওয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলেও গত বছর প্রকল্পটি বাতিল করে সরকার। তবে দেশের অর্থনীতির ‘লাইফলাইন’খ্যাত মহাসড়কটিতে ইতোমধ্যে ধারণক্ষমতার বেশি যানবাহন চলাচল করছে। ফলে পিপিপি’র মাধ্যমে এক্সপ্রেসওয়ে না করে বিদ্যমান চার লেনবিশিষ্ট মহাসড়কটি আট লেনে প্রশস্তকরণ ও উভয় পাশে সার্ভিস লেন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যার বিস্তারিত নকশা ও সমীক্ষা আগামী মার্চে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

তবে পুরো মহাসড়ক আট লেন হবে না। যানবাহনের চাপের ওপর ভিত্তি করে কোথাও ছয় লেন, কোথাও আট লেন হবে। এর বাহিরে উভয় পাশে দুটি করে সার্ভিস লেন নির্মাণ হবে।

রোববার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আয়োজনে প্রকল্পটির প্রস্তাবিত ডিজাইনের উপর মতবিনিময় সভায় এসব কথা জানান সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী।

তিনি বলেন, ‘কোন এলাকায় ছয় লেন; কোন এলাকায় আট লেন হবে তা সমীক্ষায় নির্ধারণ করা হবে। এটি নির্ধারিত হবে যানবাহনের চাপের ওপর ভিত্তি করে। তবে এটি আমাদের ফাইনাল মিটিং নয়। আমরা সবগুলো স্টেকহোল্ডারদের সাথে বসবো। সবার পরামর্শ নেওয়া হবে। তারপর চুড়ান্ত ডিজাইন করা হবে।’

তবে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত ২৩২ কিলোমিটার মহাসড়কটি প্রশস্ত করতে কত টাকা খরচ হতে পারে এ বিষয়ে কোন তথ্য জানায়নি সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী।

তবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত ২৩২ কিলোমিটার মহাসড়কটি আট লেনে উন্নীত করতে খরচ হবে ৭৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। আলাদা তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশস্ত করা হবে মহাসড়কটি। একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে বৃহত্তর ঢাকা অংশের তিনটি জেলায় (ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ)। এ অংশে সড়কের দৈর্ঘ্য ৩৮ কিলোমিটার; যা বাস্তবায়নে খরচ হবে ৮ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। আরেকটি প্রকল্প হবে বৃহত্তর কুমিল্লা অংশের দুটি জেলায় (কুমিল্লা ও ফেনী)। এ অংশে সড়কের দৈর্ঘ্য ১২৫ কিলোমিটার। এটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৪৫ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা। আরেকটি বাস্তবায়িত হবে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অংশে; যেটি হবে মূলত ফেনী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত। এতে খরচ হবে ১৮ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। এই অংশের দৈর্ঘ্য ৬৯ কিলোমিটার।

তিনটি প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৭৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে ঋণ চাওয়া হচ্ছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা সরকার যোগান দেবে। ২০২৪ সালে শুরু হয়ে ২০২৯ সালে সড়ক প্রশস্তের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ)।

মূলত চলমান অর্থনৈতিক সংকটে প্রকল্পের পুরো টাকা সরকারি কোষাগার থেকে যোগান দেওয়া সম্ভব নয়। তাই উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হবে। একইসাথে ২৩২ কিলোমিটারের কাজ একটি প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করলে খরচ পড়বে বেশি। যা একসঙ্গে এত টাকা কোনো উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ঋণ দিতে রাজি হবে না। তাই প্রকল্পের জটিলতাও এড়াতে আলাদা তিনটি প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এদিকে মতবিনিময় সভায়, অন্যান্য আলোচকরা স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনা না করে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করার জন্য অনুরোধ করেন। একই সাথে শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক নিয়ে পরিকল্পনা না করে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত আট লেনে উন্নীত করার জন্য পরামর্শ দেন। মাতারবাড়ী মিরসরাই ইকোনোমি জোন ও মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর চালু হলে এই রাস্তা পর্যাপ্ত হবে না। তাই ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে।

এসময় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, আমাদের গভীর সমুদ্র বন্দর চালু হলে আট লেইনে হবে না। তাই চট্টগ্রাম থেকে রামগড় পর্যন্ত এই সড়কে দশ হাজার গড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করার জন্য বলেন। একই সাথে রামগড় স্থল বন্দর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ব্যবহার করে সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার ৩ ঘণ্টায় যাতায়াত করা যাবে। এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে আমাদের সময় ও অর্থ খরচ দুটোই কম হবে।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি আট লেনে উন্নীত করার দাবি জানিয়ে আসছি। আট লেনে উন্নীত হলে যানজট কমবে, খরচও কমবে। তবে চট্টগ্রাম ছাড়া সারা দেশে কোথায় ওয়েট স্কেল নেই। এটির কারণে দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় আমাদের পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। এটি সমাধান করা উচিৎ।

সভায় জানা যায়, নতুন প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জের মদনপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রামের বারইয়ারহাট থেকে সিটি গেট পর্যন্ত যেসব স্থানে যানজট তৈরি হতে পারে, সেসব স্থানে ওভারপাস করে দেওয়া হবে। যেসব স্থানে সড়ক বাঁকা, সেগুলো সোজা করা হবে। এটি সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প। প্রকল্পটিতে অর্থায়নে অনেক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা আগ্রহ দেখিয়েছে।

এর আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে ২০০৬ সালে একটি প্রকল্প নিয়েছিল সরকার। দুই দফা বাড়িয়ে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৬ সালে। প্রকল্পের খরচ ২ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা হয়। ওই প্রকল্পটি কুমিল্লার দাউদকান্দি টোল প্লাজা থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেট পর্যন্ত ১৯২ কিলোমিটার চার লেন সড়কটি ২০১৬ সালে চালু হয়।