২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট বাজেটের ৩৪.৩৭ শতাংশ নারী উন্নয়নে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নারী উন্নয়নে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকার জেন্ডার বাজেট উপস্থাপন করেছেন। এ অর্থবছরে নারী উন্নয়নে বরাদ্দ বেড়েছে ৩২ হাজার ১১০ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে নারী উন্নয়নে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিলো ২ লাখ ২৯ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে ২৭টি মন্ত্রণালয় ও ১৭টি বিভাগের জন্য পৃথক জেন্ডার বাজেট উপস্থাপন করেন।
বাজেট বক্তৃতায় মন্ত্রী বলেন, জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদনে নারী স্বার্থকে সামনে রেখে বাজেট প্রক্রিয়ার সর্বস্তরে জেন্ডার সমতার বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে নারী উন্নয়নে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং সরকারি উদ্যোগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। তিনি নারী উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দের পাশাপাশি বরাদ্দকৃত অর্থের যথাযথ ব্যবহার এবং জেন্ডার বৈষম্য হ্রাসের হার পর্যালোচনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এটি পঞ্চম বাজেট। তিনি আজ “উন্নয়ন অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা” শীর্ষক ৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। এটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৪তম বাজেট।
আ হ ম মুস্তফা কামাল তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মোট বাজেটে জেন্ডার সম্পৃক্ত বরাদ্দের পরিমাণ ২,৬১,৭৮৭ কোটি টাকা যা মোট বাজেটের ৩৪.৩৭ শতাংশ এবং জিডিপি’র ৫.২৩ শতাংশ। তিনি জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি’র পরিমাণ ৫০,০৬,৭৮২ কোটি টাকা।
জেন্ডার বাজেটকে তিনটি থিমেটিক এরিয়ায় ভাগ করে বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এবছরের জেন্ডার বাজেটে ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি’ খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এ খাতে জেন্ডার সম্পৃক্ত মোট বাজেটের ৫৮.৪ শতাংশ, ‘উৎপাদন, শ্রমবাজার ও আয়বর্ধক কাজে নারীর অধিকতর অংশগ্রহণ’ খাতে ৮.১ শতাংশ এবং ‘সরকারি সেবা প্রাপ্তিতে নারীর সুযোগ বৃদ্ধি’ খাতে ৩৩.৫ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ছয়টি মন্ত্রণালয় ও ছয়টি বিভাগের জন্য বাজেট প্রস্তাব করা হয়। এগুলো হলো; প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, খাদ্য মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।
দ্বিতীয় অংশে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শ্রমবাজার ও আয়বর্ধক কাজে নারীর অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নয়টি মন্ত্রণালয় ও দুইটি বিভাগের জন্য বাজেট প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়,আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় , যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
জেন্ডার বাজেটের তৃতীয় অংশে সরকারি সেবা প্রাপ্তিতে নারীর সুযোগ বৃদ্ধির ওপর জোর দেয়া হয়। এতে ১২ টি মন্ত্রণালয় ও ৯ টি বিভাগের জন্য জেন্ডার বাজেটের প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রধামন্ত্রীর কার্যালয়, নির্বাচন কমিশন, আইন ও বিচার বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রথমবারের মত ৪টি মন্ত্রণালয়ের জন্য জেন্ডার বাজেট প্রস্তাব করেন। ঐ বছর নারী উন্নয়নে বরাদ্দ ছিলো ২৭ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা।
পরবর্তীতে ২০১০-১১ অর্থবছরে জেন্ডার বাজেটে ১০টি মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ২২১ কোটি টাকা, ২০১১-১২ অর্থবছরে ২০টি মন্ত্রণালয়ে ৪২ হাজার ১’শ ৫৪ কোটি টাকা, এবং ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৫টি মন্ত্রণালয়ে ৫৪ হাজার ৩’শ ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪০টি মন্ত্রণালয়কে অন্তর্ভুক্ত করে জেন্ডার বাজেট প্রণয়ন করা হয়। এরপর ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জেন্ডার বাজেটে মোট ৪৩ টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের জন্য জেন্ডার বাজেট প্রণয়ন করা হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তারই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য একাদশ বারের মতো জেন্ডার বাজেট উপস্থাপন করেন।