প্রচ্ছদ ›› জাতীয়

যে ৫ জাতের গরু পছন্দের শীর্ষে

টিবিপি ডেস্ক
০৮ জুলাই ২০২২ ১০:৪৫:৫৫ | আপডেট: ৩ years আগে
যে ৫ জাতের গরু পছন্দের শীর্ষে

দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। তাইতো, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কোরবানির পশুর হাটগুলো জমে উঠেছে। কিন্তু এসব হাটে নানা জাতের গরু থাকলেও বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে কয়েকটি জাত মানুষের কাছে বেশি জনপ্রিয়।

শাহীওয়াল গরু:
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে পাকিস্তানের সিন্ধুতে এই গরুর জন্ম।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. মো. শাহিনুর আলম বলেন, এ জাতের গরু বহুদিন ধরে বাংলাদেশেই উৎপাদন হচ্ছে। দেখতে অনেকটা লাল রঙের, আর বেশ বড়।

শাহীওয়াল জাতের গরু ধীর ও শান্ত প্রকৃতির। শাহীওয়াল জাতের গরু আকারে বেশ লম্বা এবং মোটাসোটা ভারী দেহ।

সাধারণত এ জাতের গরুর দেহের রং ফ্যাকাসে লাল। তবে কখনো গাঢ় লাল বা লালের মাঝে সাদা ও কালো ছাপযুক্ত হয়।

গাভীর ওজন ৪৫০-৫৫০ কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন ৬০০-১০০০ কেজি।

হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান গরু:
হোলস্টাইন অর্থ সাদাকালো ডোরাকাটা আর স্থানের নাম ফ্রিসল্যান্ড এর সাথে মিলিয়ে এ গরুর নাম হয় হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান।

বাভারিয়া (বর্তমান জার্মানি) এবং ফ্রিসল্যান্ড (বর্তমান নর্থ হল্যান্ড) এ গরুর আদি উৎস স্থান। হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান গরুকে তাদের সাদা-কালো রঙের কারণে সহজেই চেনা যায়।

ফ্রিজিয়ান জাতের গরু মাংসের জন্য পালা হয় না। কিন্তু তারপরও বাজারে মাংসের সরবরাহের বিরাট অংশই ফ্রিজিয়ান গরুর। কারণ এটি আকারে বেশ বড়। বিশ্বে যত গরু পালন করা হয়, তার ৫০ শতাংশের বেশি ফ্রিজিয়ান জাতের।

একটা হোলস্টাইন জাতের পূর্ণ বয়স্ক ষাঁড়ের ওজন ১১০০ কেজি পর্যন্ত হয় এবং উচ্চতা ৫৫- ৭০ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়।

ব্রাহমা গরু:
বাংলাদেশে যেসব ব্রাহমা জাতের গরু রয়েছে তার প্রায় সবই কৃত্রিম পদ্ধতিতে প্রজনন করা গরু।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কৃত্রিম প্রজনন বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. ভবতোষ কান্তি সরকার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্রাহমা জাতের গরুর সিমেন বা বীজ বা শুক্রাণু এনে সরকার কয়েকটি জেলায় স্থানীয় খামারিদের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে এই জাতের গরু উৎপাদন শুরু করে।

বাংলাদেশে ২০০৮ সালে প্রথম প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর 'বিফ ক্যাটল ডেভেলপমেন্ট' নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে ব্রাহমা উৎপাদন কর্মসূচি শুরু করে।

শুরুতে ১১টি উপজেলায় তিন বছরের জন্য এ কর্মসূচি চালু হলেও এখন প্রায় ৫০টির মত জেলায় চলছে এ কর্মসূচি।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. সরকার বলেছেন, ব্রাহমা গরু মূলত মাংসের জাত বলে পরিচিত।

দুধের জন্য এই গরুর তেমন খ্যাতি নেই। ব্রাহমা গরু দেখতে অনেকটাই দেশি গরুর মতো, কিন্তু আকৃতিতে বেশ বড় হয়। এই গরুর মাংসের স্বাদ দেশি গরুর মতো।

এর গায়ে চর্বি কম হয়, যে কারণে পুষ্টিগুণ বেশি। প্রাণী পুষ্টি ও জেনেটিক্স বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রাহমা গরুর আদি নিবাস ছিল ভারতে।

সাধারণত একটি পূর্ণবয়স্ক ব্রাহমা জাতের ষাঁড়ের ওজন ৮০০ কেজি থেকে ১০০০ কেজির বেশি হতে পারে, আর একটি পূর্ণবয়স্ক ব্রাহমা জাতের গরুর ওজন হবে ৫০০কেজি থেকে ১০০০ কেজি।

মীরকাদিম:
মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিম জাতের গরু দেখতে ধবধবে সাদা। কিছুটা লালচে আর আকর্ষণীয় বাঁকা শিং। বাজারে এ গরুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের কাছে। তবে চাহিদার তুলনায় এই জাতের গরুর সরবরাহ কমে গেছে।

এই গরুর মাংস হয় নরম ও তেলতেলে। তবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, দেশে মীরকাদিম জাতের ভালো ষাঁড়ের সংকট আছে, যে কারণে এই জাতের উন্নয়ন প্রক্রিয়া ধীরে হচ্ছে।

রেড চিটাগং ক্যাটেল:
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে রেড চিটাগাং ক্যাটেল বা অষ্টমুখী লাল গরু বা লাল বিরিষ সংক্ষেপে আরসিসি আমাদের দেশের অধিক পরিচিত একটি গরুর প্রজাতি।

রেড চিটাগাং ক্যাটেলের প্রধান চারণস্থল চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম। এছাড়াও এটি কুমিল্লা ও নোয়াখালিতে পাওয়া যায়। দেখতে লাল বর্ণের।

দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩০ সে.মি. এবং উচ্চতা প্রায় ২৪ সে.মি. হয়ে থাকে। প্রাপ্ত বয়স্ক ষাঁড়ের ওজন প্রায় ২০০ থেকে ৪০০ কেজি হয়ে থাকে।

গরুর ওজনের প্রায় অর্ধেক পরিমাণ খাদ্য উপযোগী মাংস। গরুর এ বিশেষ প্রজাতি জনপ্রিয় হওয়ার এক বিশেষ কারণ হল, এর মাংস খুবই সুস্বাদু।

সূত্র: বিবিসি বাংলা