মহাকালের বিস্তীর্ণ পটভূমিতে এক ব্যতিক্রমী রবির কিরণে উজ্জ্বল হয়ে আছে পঁচিশে বৈশাখ। ইংরেজির ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে এবং ১২৬৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে জন্ম নেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সারদাসুন্দরী দেবীর কোল আলো করে ধরাধামে জন্ম নেন তিনি।
পৃথিবীতে আগমনের শুভক্ষণকে ব্যক্ত করতে কবিগুরু লিখেছিলেন- ‘তোমার প্রকাশ হোক কুহেলিকা করি উদ্ঘাটন/সূর্যের মতন। /রিক্ততার বক্ষ ভেদি আপনারে করো উন্মোচন।/উদয়দিগন্তে ওই শুভ্র শঙ্খ বাজে/মোর চিত্তমাঝে/চির-নূতনেরে দিল ডাক/পঁচিশে বৈশাখ।’
বাঙালির জীবনের যত ভাবনা, বৈচিত্র্য আছে, তার পুরোটাই লেখনী, সুর আর কাব্যে তুলে ধরেছেন কবিগুরু। তার সাহিত্যকর্ম, সংগীত, জীবনদর্শন, মানবতা, ভাবনা- সবকিছুই সত্যিকারের বাঙালি হতে অনুপ্রেরণা জোগায়। এ বছর কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘সমাজ সংস্কার ও রবীন্দ্রনাথ।’
কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও বাণী দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনাদর্শ ও তার সৃষ্টিকর্ম শোষণ-বঞ্চনামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে চিরদিন বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করবে।
রবীন্দ্রনাথ ১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে নদিয়া, পাবনা, রাজশাহী ও উড়িষ্যার জমিদারি তদারকি শুরু করেন। তিনি কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে দীর্ঘসময় অতিবাহিত করেন। ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে শিলাইদহ ছেড়ে চলে আসেন বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের উপকণ্ঠে শান্তিনিকেতনে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে তিনি বিকাশের চূড়ান্ত সোপানে পৌঁছে দিয়েছেন।
১৯১৩ সালে প্রথম বাঙালি এবং এশীয় হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বজনীন হয়ে উঠেছে তার মাধ্যমে। শুধু সৃজনশীল সাহিত্য রচনায় নয়- অর্থনীতি, সমাজ, রাষ্ট্র নিয়ে তার ভাবনাও তাকে অত্যন্ত উঁচু স্থানে নিয়ে গিয়েছে।
বাংলাদেশের মানুষের কাছে রবীন্দ্রনাথ প্রেরণাদায়ী পুরুষ। যে কোনো অস্থিরতায়, আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথের কবিতা, গান আন্দোলনরত মানুষকে দেখায় পথের দিশা। বাংলা ভাষার প্রধানতম এই কবি ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের বাংলায় ২২ শ্রাবণ মৃত্যুবরণ করেন।
কর্মসূচি: রবীন্দ্রনাথের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বিশ্বের নানা প্রান্তে বিভিন্ন আয়োজন রেখেছেন তার অগণিত ভক্ত। বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে সরকার। এবার রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হবে রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত নওগাঁর পতিসরে।
এ ছাড়াও বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহ্জাদপুর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কবির চিত্রশিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলা একাডেমিও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অন্যদিকে ছায়ানট আয়োজন করেছে ২ দিনব্যাপী রবীন্দ্র-উৎসবের। এ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন নাট্যদল কবিকে নিয়ে মঞ্চস্থ করবে নাটক।