প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় থাকা রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎ করেছে মিয়ানমারের প্রতিনিাধি দল। আজ বুধবার প্রথম দিনে নোয়াখালীর ভাসানচরসহ কক্সবাজারের টেকনাফের ২৮ পরিবারের ৯০ জনের বেশি রোহিঙ্গার তথ্য যাচাইর করেছে তারা। অন্তত পাচঁদিন এ কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
বুধবার বেলা ১১টায় টেকনাফ স্থলবন্দরের রেস্ট হাউসে শুরু হওয়া রোহিঙ্গাদে তথ্য এ যাচাই-বাচাই বিকেল সাড়ে ৬টায় পর্যন্ত চলমান ছিল। এসময় অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সামছু দৌজ্জা এবং সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
তবে এর আগে স্পিড বোটে মিয়ানমারের মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্সের মংডুর আঞ্চলিক পরিচালক অং মাইউ নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল টেকনাফ পৌরসভাস্থল নাফ নদে মিয়ানমার ট্রানজিট জেটিতে পৌঁছান।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাসে করে লেদা-নয়াপাড়া ক্যাম্পের বসবাসকারী ২৮ পরিবারের ৯০ জন রোহিঙ্গাকে ধাপে ধাপে টেকনাফ স্থলবন্দরের ভেতরে রেস্ট হাউসের পাশে প্যান্ডেলে নিয়ে আসা হয়। এরপর তাদের একে একে সবাইকে জিজ্ঞেসাবাদ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তালিকার বিষয়টির বাইরেও পুরো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটির রুট ম্যাপ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে এই বৈঠক মানে প্রত্যাবাসন শুরু নয়।
মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক অংশ নিতে আসা টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা মো. জাফর জানান, ‘মিয়ানমার থেকে আাসা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আামদের ডাকা হয়েছে। আমার মতো আরও অনেকে এসেছেন। মূলত মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের সাথে আলোচনা হবে।’
টেকনাফের মৌচনি ক্যাম্পের খালেদ হোসেন ও তার স্ত্রী ইমতিয়াজের সঙ্গে তিন ঘণ্টা ধরে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক হয়। ক্যাম্পে ফিরে এসে খালেদ হোসেন বলেন, ‘মিয়ানমার প্রতিনিধি দল তিন ঘণ্টা আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। আমাদের কাছে প্রতিনিধি দল জানতে চান আমরা মিয়ানমারের বাসিন্দা কি না, সে হিসেবে কি দলিল-পত্র আছে? জবাবে, আমরা তাদের কাছে সেদেশে থাকা অবস্থায় আমাদের যেসব দলিলপত্র-পরিবারের পুরোনো ছবি রয়েছে সেগুলা তাদের কাছে হস্তান্তর করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের গ্রাম কুলার বিলের আশপাশে কিকি গ্রাম রয়েছে সেগুলো বর্ণনা তুলে ধরেছি। তারা (মিয়ানমার প্রতিনিধি দল) সেগুলো ফরমে নোট করে। এ ছাড়া আমাদের গ্রামের চেয়ারম্যান, মেম্বারের নামের পাশাপাশি শহরের সড়কের নামসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের নামও বলেছি। মনে হচ্ছে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া হিসেবে প্রথমে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমরা নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই- এতে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু আমাদের রোহিঙ্গা স্বীকৃতি, ভিটা-মাটিসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে কেবল নিজ দেশে যেতে প্রস্তুত।’
বৈঠকে এক পর্যায়ে বিকেলে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ সামছু-দৌজা বলেন, ‘এখনো কাজ চলমান আছে, আগে কাজ শেষ হোক, পরে আমরা বিস্তারিত জানাব। মিয়ানমার প্রতিনিধি দল এখানে কয়েকদিন থাকবে। কত পরিবারের সাক্ষাৎ নেবে সেটা পরে জানা যাবে। তারা আমাদের কিছু রোহিঙ্গা পরিবারের তালিকা দিয়েছে, আমরাও তালিকা দিয়েছি। তালিকায় থাকা পরিবারের এক্সটেন্ড (নতুন জন্ম নেওয়া) সদস্যদের ভেরিফিকেশন করা হচ্ছে মূলত।’
প্রতিবার প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হলে ক্যাম্পে প্রত্যাবাসন বিরোধী কার্যক্রম চোখে পড়ে এ ব্যাপারে ক্যাম্প প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নিয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করা আছে, তারা সেটি দেখবে।’
আরআরআরসি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ আট লাখের বেশি রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের কাছে পাঠিয়েছে। ওই তালিকা থেকে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ১৪০ জনকে বাছাই করা হয়। এর মধ্যে ৭১১ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমারের সম্মতি মিললেও বাকি ৪২৯ জনের ব্যাপারে মিয়ানমারের আপত্তি ছিল। মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলটি ওই ৪২৯ জন রোহিঙ্গার তথ্য যাচাইয়ের জন্য টেকনাফে এসেছে। এরই অংশ হিসেবে টেকনাফ স্থলবন্দরের রেস্ট হাউজে রোহিঙ্গাদের তথ্য যাচাই করা হয়।