প্রচ্ছদ ›› জাতীয়

সরিষা চাষীরা প্রণোদনা পান সবচেয়ে বেশি

মেহেদী আল আমিন
৩০ নভেম্বর ২০২২ ১৪:১৬:১০ | আপডেট: ১ year আগে
সরিষা চাষীরা প্রণোদনা পান সবচেয়ে বেশি

অন্যান্য রবি মৌসুমের ফসলের তুলনায় সরিষা বীজ চাষীরা সবচেয়ে বেশি সরকারি প্রণোদনা পাচ্ছেন, যা এ বছর সারা দেশে এ তৈলবীজ চাষের দ্রুত সম্প্রসারণের মূল কারণ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই-এর) তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশ ২০২৩ অর্থবছরে সরিষা চাষীদের জন্য প্রণোদনা হিসেবে ৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৪৩.৩৮ কোটি বা ৯৫.৬৪ শতাংশ ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

১০ লাখ সরিষা চাষী এ প্রণোদনা পাওয়ার কথা, এবং ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত ৯.৫৬ লাখ কৃষক ইতোমধ্যেই তা পেয়েছেন। এ উদ্যোগের ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে সরিষা ক্ষেতে।

২৮ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৪.৯৫ লাখ হেক্টর জমি সরিষা চাষের আওতায় এসেছে, যা অন্যান্য বছর ছিলো প্রায় ৩.৫৯ লাখ হেক্টর। গত বছরের তুলনায় এই তৈলবীজের চাষ বেড়েছে ৩৭.৮৬ শতাংশ।

সরকার ২০২৩ অর্থবছরে ৬.৭ লাখ হেক্টর জমি সরিষা চাষের আওতায় আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে ১১.১১ লাখ টন।

গত অর্থবছরে কৃষকরা ৬,১০৬ লাখ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করেছিলেন এবং এ থেকে ৮,২৪৩ লাখ টন বীজ উৎপাদন করেছেন। গতবছর সয়াবিন, তিল এবং সূর্যমুখীসহ দেশে মোট ১২.৩১৮ লাখ টন তেলবীজ উৎপাদন হয়েছে।

সূত্র জানায়; বর্তমানে বাংলাদেশ ভোজ্যতেলের চাহিদার ১০ শতাংশেরও কম উৎপাদন করে এবং মূলত আমদানির ওপর নির্ভরশীল। সেজন্য সরকার দেশে তেলবীজ উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

সরকারি পরিকল্পনা অনুসারে, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত তেলবীজ থেকে প্রয়োজনীয় পণ্যের কমপক্ষে ৪০ শতাংশ চাহিদা মেটাতে চায় সরকার। এক্ষেত্রে সরিষা চাষ সম্প্রসারণের জন্য অধিক উপযোগী।

বিজনেস পোস্টের সাথে আলাপকালে ডিএই-এর অতিরিক্ত পরিচালক (ফিল্ড সার্ভিস উইং) মোহাম্মদ আবদুহু বলেন, “তৈলবীজ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আমাদের একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা যতটা সম্ভব আমদানি নির্ভরতা কমাতে চাই। সরিষার বীজের উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে এবং আগামী দিনে তা আরও বাড়বে।”

এ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা আমাদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তেল বীজ উৎপাদনকে উৎসাহিত করছি। আর সরিষার বিপুল সম্ভাবনা আছে। আমন ও বোরো ধান চাষের ব্যবধানে সরিষা চাষ করা যায়।”

কী অবস্থা অন্যান্য প্রণোদনার?

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রণোদনা প্রায় ৩৫ কোটি টাকা মূল্যের যা গম চাষে বরাদ্দ করা হয়েছিল। এর ফলে মোট ২.৫০ লাখ গম চাষি প্রণোদনা পাচ্ছেন। তাদের মধ্যে ১.৭০ লাখ কৃষক প্রণোদনা পেয়েছেন অর্থাৎ ৬৮.০৯ শতাংশ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে।

তৃতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণ প্রণোদনা পাচ্ছেন ভুট্টা চাষিরা। সরকার ১ লাখ ৩৫ হাজার ভুট্টা চাষিকে ১৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এর মধ্যে ১৪,৭৬০ জন কৃষক প্রণোদনা পেয়েছেন এবং ১০.৯৩ শতাংশ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে।

ভুট্টার পরেই রয়েছে সূর্যমুখী। মোট ৭০ হাজার সূর্যমুখী চাষি প্রণোদনা হিসেবে পাচ্ছেন ১৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা। তাদের মধ্যে ৪৩,৪৬০ জন কৃষক এ পর্যন্ত প্রণোদনা পেয়েছেন। যা বরাদ্দকৃত টাকার ৬২.০৯ শতাংশ।

আর ১ লাখ মুগ চাষির জন্য বরাদ্দ ৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৬৩০ জন কৃষক টাকা পেয়েছেন। এ পর্যন্ত ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ কৃষকের মাঝে অর্থ বিতরণ করা হয়েছে।

অন্যান্যের মধ্যে চিনাবাদামের জন্য ৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা, শীতকালীন পেঁয়াজের জন্য ৪ কোটি ৬ লাখ টাকা, খেসারিতে ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, মসুর ডালের জন্য ২ কোটি ৪ লাখ এবং সয়াবিন চাষের জন্য ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলের মধ্যে চাষ করা রবি মৌসুমের ১০টি ফসলের জন্য সরকার ১৩৬.৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। কৃষকরা প্রণোদনা হিসেবে পাচ্ছেন বীজ ও তিন ধরনের সার।

ডিএই প্রতি বিঘা জমি বাবদ গমের জন্য ২০ কেজি, ভুট্টার জন্য ২ কেজি, সরিষার জন্য ১ কেজি, সূর্যমুখীর জন্য ১ কেজি, চিনাবাদামের জন্য ১০ কেজি, সয়াবিনের জন্য ১ কেজি, পেঁয়াজের জন্য ১ কেজি, মুগের জন্য ৫ কেজি, মসুরের জন্য ৫ কেজি এবং খেসারির জন্য ৮ কেজি বীজ সরবরাহ করছে।

একজন কৃষক শুধুমাত্র এক ধরনের ফসলের জন্য প্রণোদনা পাবেন। একইভাবে একজন কৃষক শুধু একটি ফসলের জন্য সার পেতে পারেন।

গম, সরিষা, সূর্যমুখী, সয়াবিন এবং শীতকালীন পেঁয়াজ চাষীরা ১০ কেজি এমওপি এবং ১০ কেজি ডিএপি সার পাবেন এবং মসুর ডাল, মুগ ডাল, খেসারি চাষীরা ১০ কেজি ডিএপি এবং ৫ কেজি এমওপি পাবেন। একজন ভুট্টা চাষি পাবেন ২০ কেজি ডিএপি এবং ১০ কেজি এমওপি।