বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১৪ সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। রবিবার সকালে শূন্যরেখা পেরিয়ে তুমব্রু ক্যাম্পে আশ্রয় নেন তারা।
বিজিপির অস্ত্র ও গুলি বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হেফাজতে আছে। এ নিয়ে পরে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবে বিজিবি ৩৪ ব্যাটালিয়ন।
এদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ভেতরে গতকাল শনিবার রাতে শুরু হওয়া গোলাগুলি আজ দুপুর ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চলছিল। বিরামহীন গোলাগুলির ঘটনায় ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু, কোনারপাড়া, ভাজাবনিয়া ও বাইশফাঁড়ি এলাকার শত শত পরিবার যে যেদিকে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে।
মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে তুমব্রুতে একজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া বাইশফাঁড়ি সীমান্তে এক ব্যক্তির বাড়িতে গোলা এসে পড়ে আগুন ধরেছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, রাত থেকে এখনো মুহুর্মুহু গুলি ও মর্টার শেলের গোলা নিক্ষেপ চলছে মিয়ানমার সীমান্তে। এ ঘটনায় পশ্চিম পাড়ার ফরিদ আলমের বাড়িতে গুলি এবং কোনাপাড়া ইউনুছের বাড়িতে এসে পড়ে মর্টারশেলের খোসা। এতে বাড়ির টিন ছিদ্র হয়ে খোসাটি বাড়ির ভেতরে এসে পড়ে। তবে বাড়িতে কেউ না থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনার আগে থেকেই কোনারপাড়ার বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের বাসায় চলে গেছেন। নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ভয়ে লোকজন ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
তুমব্রু সীমান্তের বাসিন্দা শাহাজান মিয়া বলেন, ‘ব্যাপক মর্টার শেল ও গুলিবর্ষণ চলছে সীমান্তে। ফলে এখানকার মানুষ অন্যত্র সরে যাচ্ছেন। এখানে থমথমে অবস্থা। মানুষ রাত-দিন আতঙ্কে দিনযাপন করছেন। অনেকে বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না।’
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাত থেকে এখন পর্যন্ত (সকাল) সীমান্তে মর্টারশেল ও গুলিবর্ষণ থেমে নেই। এতে রাত থেকে দুই গ্রামের (কোনাপাড়া ও পশ্চিম পাড়ার) প্রায় তিন হাজার মানুষ নিরাপদে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। এ ছাড়া মিয়ানমারের ছোড়া মর্টার শেলের বিস্ফোরিত অংশ ও গুলি এসে পড়েছে স্থানীয় দুই বাড়িতে।’
‘সীমান্তে থমথমে অবস্থা। এখানকার বাসিন্দারা খুব বেশি আতঙ্কের মধ্য রয়েছে', যোগ করেন ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম।
এ বিষয়ে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (বিজিবি-২) অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘সীমান্তে আমরা সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থানে রয়েছি। কোনোভাবে নতুন করে অনুপ্রবেশ ঘটতে দেওয়া হবে না।’
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, সীমান্তের গোলাগুলির ঘটনায় ঘুমধুম সীমান্তে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে আছে। মিয়ানমারের সঙ্গে সংযুক্ত মহাসড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সীমান্তের লোকজনকে সতর্ক ও নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য বলা হয়েছে।
এ ছাড়া সীমান্তে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি, পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনী সবাই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলেও জানান বান্দরবানের জেলা প্রশাসক।