প্রচ্ছদ ›› জাতীয়

হাটে নেই ভারতীয় গরু, লাভে খামারিরা

টিবিপি ডেস্ক
০৯ জুলাই ২০২২ ১৪:২৬:৫৭ | আপডেট: ৩ years আগে
হাটে নেই ভারতীয় গরু, লাভে খামারিরা

এবার পশুর হাটগুলো কোনো ভারতীয় গরুই নেই, এতে দেশের খামারিরা ভালো লাভ পাচ্ছেন। এর আগে
মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী দাবি করেছিলেন, বাংলাদেশ এখন গবাদি পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ৷ ঈদের পশুর হাটে সত্যিই এবার ভারতীয় গরু নজরে পড়ছে না৷

শুক্রবার মন্ত্রী ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, আমাদের জানা মতে একটি ভারতীয় গরুও এবার আসেনি৷ ভারত থেকে গরু আমদানির কোনো অনুমতি নেই৷

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৪ সালে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে ভারতীয় গরু আসা বন্ধ করে দেয়৷ আর সেটাই হয়েছে বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ৷ এখন বাংলাদেশ গবাদি পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গরুর মাংস রপ্তানিও শুরু করেছে৷

এবার কোরবানির ঈদে গবাদি পশুর যে চাহিদা তার চেয়ে বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে৷ চাহিদার চেয়ে কোরবানির পশু বেশি৷ সরকারি হিসেব বলছে, দেশে এবার দেশে কোরবানির জন্য ৯৭ লাখ ৭৫ হাজার গরু-ছাগলের চাহিদা রয়েছে৷ কিন্তু প্রস্তুত আছে এক কোটি ২৫ লাখ ২৪ হাজার৷

বিবিএস-এর জরিপ

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সর্বশেষ যে হিসেব দিয়েছে তাতে দেশে গরু ছাগলের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে৷ গত মাসে তারা কৃষি শুমারির প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখন গরু-ছাগলে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ৷

শুমারির ফল থেকে জানা যায়, দেশে এখন গরুর সংখ্যা দুই কোটি ৪০ লাখ ১৪ হাজার ১৪৪, ২০০৮ সালে যা ছিল ২ কোটি ৫৭ হাজার ৮৫৩৷ এক যুগের ব্যবধানে গরু বেড়েছে ৪০ লাখের বেশি৷ অন্যদিকে দেশে বর্তমানে ছাগলের সংখ্যা এক কোটি ৬২ লাখ ৯৫ হাজার ২০০, যা এক যুগ আগে ছিল এক কোটি এক লাখ ৫৯ হাজার ৫০৯৷ এক যুগে ছাগল বেড়েছে প্রায় ৬১ লাখ৷

২০২০ সালে বিবিএস এই কৃষি শুমারি পরিচালনা করে, যার প্রাথমিক রিপোর্ট চলতি বছরে তারা প্রকাশ করে৷ বিশ্লেষকরা বলেছেন গত দুই বছরে পশু সম্পদের আরো উন্নতি হয়েছে৷

গত এক যুগে ভেড়ার উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণ৷ বর্তমানে ভেড়ার সংখ্যা ১৩ লাখ ৪১ হাজার ৬১৯টি৷ ২০০৮ সালে ছিল চার লাখ ৭৮ হাজার ১৭৷ মহিষের সংখ্যাও বেড়েছে শতকরা ৩০ ভাগ৷ এখন ছয় লাখ ২৯ হাজার ৬৪০টি মহিষ আছে৷ ২০০৮ সালে এই সংখ্যা ছিল চার লাখ ৩১ হাজারের মতো৷ আর সব মিলিয়ে দুধ দেয় এমন গরু, মহিষ ও ছাগল আছে ১৮ লাখের মতো৷
যেভাবে আসে সাফল্য

গাজীপুরের গিয়াসউদ্দিন সরকার ২০১৫ সালে মাত্র একটি গরু দিয়ে শুরু করেন তার গরুর ফার্ম ‘সাফ গ্রিন অ্যাগ্রো'৷ তার খামারে এখন ১৬০টিরও বেশি গরু রয়েছে৷ তিনি একই সঙ্গে মাংস এবং দুধ উৎপাদন করেন তিনি৷ প্রতিদিন দুধ পান ৭০০ লিটার৷ তিনি বলেন, ‘‘একটি খামার দুই-তিন বছরের মধ্যেই লাভে চলে যায়৷” এইরকম সাফল্যের কাহিনি বাংলাদেশে এখন প্রত্যেক এলাকায়ই পাওয়া যাবে৷ তার কথা, "সরকার যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলে এখন ছোট খামারিরাও দুধ এবং মাংস দেশের বাইরে রপ্তানি করতে পারবে৷”

২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে সেখান থেকে গরু আসা বন্ধ করে দেয়৷ আর সেটাই বাংলাদেশের জন্য শাপে বর হয়েছে৷ চাহিদা মেটানোর জন্য বাংলাদেশে গবাদি পশুর লালনপালন বেড়ে যায়৷ আর সেটাই বাংলাদেশকে এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে৷ বাংলাদেশে এখন ছোট-বড় মিলিয়ে ২০ লাখ খামার আছে৷

এর আগে প্রতি বছর ভারত থেকে প্রতি বছর ৩০ লাখের মতো গরু-ছাগল আসতো বৈধ এবং অবৈধ পথে৷ শুধু কোরবানির ঈদেই আসতো ২০-২২ লাখের মতো৷ মিয়ানমার থেকেও আসতো৷ ২০১৮ সালেও ভারত থেকে এক লাখ ৫০ হাজার গরু আসে৷ কিন্তু এখন চিত্র পুরোই পাল্টে গেছে৷ উল্টো প্রতি বছর দেশি গরুরই একটি অংশ অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে৷

সূত্র: ডয়চেভেলে