বাংলাদেশের সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সকল পাথর কোয়ারীগুলো দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার ফলে জনজীবন অশান্তিতে। দিশেহারা হয়ে পড়েছে মানুষ। লাখো শ্রমিক নারী-পুরুষ বেকার দিন কাটাচ্ছে এবং এলাকায় বিভিন্ন অসুবিধায় জর্জরিত হচ্ছে। রীতিমত মানুষ খেতে পারছে না ৩ বেলা ডাল-ভাত। বাঁচবে কি করে সেই চিন্তা ভাবনায় ঘুরপাক খাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে সিলেট জেলার সকল পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় এখানকার মানুষের মাথায় হাত ছাড়া আর কিছুই করার নেই। বিশেষ করে এশিয়ার বৃহত্তম পাথর কোয়ারি ভোলাগঞ্জপুরোপুরি বন্ধ থাকায় লাখো শ্রমিক জনসাধারণ বেকায়দা জীবন যাপন ও তাদের সংসার নিয়ে খুব কষ্টে আছে।
ঘুরে দেখা বাস্তবিক চিত্র, কোটি কোটি টাকার মিল কারখানা স্টোন কাশারগুলো পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। কারণ পাথর ভাঙার মত পাথর স্টক না থাকায় এবং দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এখানকার শ্রমিক-মালিক ও ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে দুর্ভিক্ষের মত জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। যেটা আসলেই হতাশাজনক। এই পুরো এলাকার মানুষ পাথরের ওপর নির্ভরশীল। এখানকার মানুষ নিজের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমি থেকে পাথর উত্তোলন করেছে জীবন-জীবিকার তাগিদে।
এটাই এখানকার মানুষের রুটি-রুজির অবলম্বন। পাথর উত্তোলন করে সারাদেশে রপ্তানির পাশাপাশি দেশের বাইরেও রপ্তানি করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা জননেত্রী শেখ হাসিনার সমীপে আকুল আবেদন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা এখানকার মানুষের জীবন-জীবিকার অবলম্বন বন্ধ পাথর কোয়ারি খুলে দিয়ে দু’বেলা-দু মুঠো খেতে দিন। নয়তো আপনি এখানে শিল্প এলাকা ঘোষণা করে, লাখো শ্রমিক ও ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে হাসি ফোটান। আপনার পিতা এবং বাঙালির জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলুন।
তাহলে মানুষ উপকৃত হবে মানুষ অনায়াসে বাঁচতে পারবে। এখানকার মানুষের কাছে অভাব নামে কোন শব্দ ছিল না, এখন যা চলছে তা অভাব নয়। নীরব দুর্ভিক্ষ বললে কম হবে। কারেন্ট ওয়ার্ল্ডের এশিয়ার জরিপ অনুযায়ী এশিয়ার বৃহত্তম পাথর খনির উত্তোলনক্ষেত্র ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি। সিলেটের উত্তরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীতে অবস্থিত ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি। মূলত কোয়ারি খনন হতো শীতকালে। নদী শুকিয়ে গেলে পাথর তোলার উৎসব শুরু হতো।যেভাবে বৈশাখে ধানকাটার সময় নবান্নের উৎসব হয় জন্মের পর এগুলোই দেখে আসছে এই পাথর জনপদের মানুষজন।পাথরকে কেন্দ্র করেই এখানকার মানুষের একমাত্র জীবিকা ও মূল পেশা।
লাখ লাখ মানুষের রুটি-রুজির একমাত্র মাধ্যম ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি। সিলেট উত্তর অঞ্চলের শত বছরের পেশা যেটা বলা যায়। শত বছর আগে পাথরকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা তারের টানেল দিয়ে 'রুপওয়ে’। যারা ভোলাগঞ্জে এসেছেন তারা হয়তো দেখেছেন নদীর উপরে লোহার টাওয়ারে এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে 'রুপওয়ে'।ব্রিটিশরা তারের মাধ্যমে পাথর পরিবহণ করতো শিল্প নগরী ছাতকে। ছাতক থেকে পাথর যেতো বাংলাদেশের সকল রেলওয়েতে। তারপর পাথরকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য। পাথর ভাঙার ক্রাশিং মিল,পাথর পরিবহণের জন্য গাড়ী। এখানে কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের মহা মিলন মেলা।
এখানকার রুটি-রুজির মাধ্যম ২০১৪ সালে পাথর কোয়ারিগুলো বন্ধ করে দেন বাংলাদেশ সরকার। স্হানীয় মানুষেরা অনেক শান্তিপূর্ণ সভা আন্দোলন করেন।সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট দেয়া হয় স্মারকলিপি। সান্ত্বনা খুলে দেয়া হবে বন্ধ পাথর কোয়ারি; আশায় দিন কাটে পাথররাজ্যের মানুষের। আজও খুলে দেয়া হয়নি। সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যারা এসেছিলো কাজের জন্য, তারা চলে গেছে।তবুও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ১০-১৫ লাখ মানুষের চলার কষ্ট দূর হয়নি। কোয়ারি বন্ধ থাকলেও নদীটা খোলা ছিলো। নৌকায় স্যালো মেশিন বসিয়ে পাইপ দিয়ে নদীর তলদেশ থেকে পাথর আহরণ করা হতো।
২০১৮-১৯ সালে পরিবেশ ধ্বংসের অজুহাতে সরকার ধলাই নদী থেকেও পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। মহামান্য হাইকোর্ট নদীতে ১৪৪ ধারা জারি করে যা এখনো বহাল রয়েছে।পরে আবার ২০২১ সালে হাইকোর্ট সেই রায় দেন যে; পর্যটন ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের জন্য।
(এই এলাকার অধিবাসী জনসাধারণের একটাই প্রশ্ন। কেন এত ঝামেলা ? এর আগে কী শত বছর পরিবেশ ছিলো না? যারা ভোলাগঞ্জে আসছেন,সীমান্ত ঘেষা উত্তরে প্রতিবেশী দেশ ভারত, সেখানে যদি পাহাড়ের দিকে তাকান। তাহলে দেখা যায় পাহাড়ে ভারতীয়রা ডিনামাইট ফিট করে সিমেন্ট তৈরীর প্রধান কাঁচামাল চুনাপাথর মানে লাইমস্টোন আহরণ করে ট্রাকে বোঝাই করে এলসির মাধ্যমে বাংলাদেশে রপ্তানি করছে। এরা কি পরিবেশ বোঝে না?)
দীর্ঘদিন ভোলাগঞ্জ, শাহ আরপিন, উৎমাসহ কোয়ারীগুলো বন্ধ থাকায় উৎপাদন না হওয়ায় এখানকার মানুষ এবং শ্রমিকদের জীবনে স্বস্তি নেই। পরিবার-পরিজন নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। এর পরও সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ এই উপজেলায় পাথর কোয়ারি থাকার সুবাদে বসবাস করে। এখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যর দাম অনেক বেশি। এ অবস্থায় কর্মসংস্থান না থাকায় সেখানকার প্রচুর মানুষ কীভাবে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁচবে সেই চিন্তায় ব্যাকুল। একদিকে দীর্ঘদিনের পাথর কোয়ারীগুলো বন্ধ থাকায় এখানকার মানুষের কষ্টকর দিন। আর অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
বন্ধ পাথর কোয়ারীগুলো যদি অচিরেই খুলে দেয়া হয়; তাহলে মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরে আসবে। এখানকার মানুষের মুখে হাসি;অভাব-অনটনে চেহারা মলিন।
আগে যেখানে দিন প্রতি কাজ করে শ্রমিকরা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করত সেখানে আজ তারা কর্মহীন। ব্যবসায়ীসহ সব পেশার মানুষের দাবি পাথররাজ্যে অভাব; অতএব বন্ধ কোয়ারি খুলে দিন মানবতার জননী। এ অঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই পাথর কোয়ারী খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেবেন।
আর যদি সেটি না হয় তবে সরকার বিকল্প কোনো প্রতিষ্ঠান করে দেবেন যাতে এই এলাকার কর্মহীন হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ এমপিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বন্ধ কোয়ারি খোলার দাবি পাথর জনপদ খ্যাত কোম্পানীগঞ্জের শ্রমিক জনসাধারণের।
লেখক পরিচিতি: এম এ এইচ শাহীন। কবি ও সাংবাদিক