প্রচ্ছদ ›› মতামত-বিশ্লেষণ

আমি 'শান্ত' হতে চাই

মেহেদী হাসান
০২ এপ্রিল ২০২২ ১৫:২৩:১৪ | আপডেট: ২ years আগে
আমি 'শান্ত' হতে চাই
সাইফুল ইসলাম শান্ত

আমার যেতে ইচ্ছে করে
নদীটির ঐ পারে
যেথায় ধারে ধারে

বাঁশের খোঁটায় ডিঙি নৌকা
বাঁধা সারে সারে।

মা, যদি হও রাজি,
বড় হলে আমি হব
খেয়া ঘাটের মাঝি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ’মাঝি’ ছড়াটির কয়েকটি লাইন, যা হয়তো অনেকেই পড়েছেন। ছোটবলোয় অনেকেরই অনেক ধরনের ইচ্ছে থাকে, তাই বলে আমি মাঝি হতে চাইনি কখনো, সিনেমার নায়ক হতে চেয়েছিলাম, তাই বলে নায়ক হওয়া এতো সহজ না, তাই হয়েছি সংবাদকর্মী।

তবে এখন আমি 'শান্ত' হতে চাই। তার পুরো নাম সাইফুল ইসলাম শান্ত। হয়তো অনেকেই জানতে চাইবেন, কে এই শান্ত? নিশ্চয়তা দিচ্ছি ওকে চিনতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না আপনাদের। কেননা, দেশের অন্যতম দৈনিক প্রথম আলোসহ বেশকিছু গণমাধ্যমে শান্তকে ’ ’হাঁটাবাবা’ উপাধি দিয়েছে। কেনই-বা হাঁটাবাবা হলেন শান্ত এবার সেটি জানুন।

ইতোমধ্যেই শান্ত একটি বড় রেকর্ড করে ফেলেছেন। দেশের ৪র্থ ব্যক্তি হিসেবে শান্ত পাঁয়ে হেঁটে পুরো ৬৪ জেলায় ঘুরেছেন। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে দেশের সব জেলায় হাঁটা শুরু করেন শান্ত। খেলাধুলার পরিভাষায় যাকে বলে ‘লং ডিসটেনস হাইকিং। গত ২৯ মার্চ ৭৫ দিনে ৩০০১ কিলোমিটার হেঁটে সে কক্সবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌঁছায়।

শান্তর এই ৭৫ দিনের ভ্রমণ যে খুব একটা সহজ ছিল না, তা তার সাথে কথা বলেই বুঝলাম। শান্ত প্রায়ই ফোন দিতো, ফেসবুকে লিখতো বিভিন্ন জেলায় তার সাহায্য প্রয়োজন হলেও কাঙ্খিত সাড়া পেতো না। ঝড় কিংবা বৃষ্টি কিছুতেই হার মানাতে পারেনি তাকে। জয় তার চাই-ই চাই। অবশেষে সফল হয়েছে শান্ত।

সাইফুল ইসলাম শান্ত ৬৪ জেলায় এই হাঁটার উদ্দেশ্য শুধু হাইকিং বা রেকর্ড তৈরি করা নয়। তিনটি বিষয়ে সে সচেতনতা তৈরির কাজ করছেন। জীবন বাঁচাতে রক্তদান, প্লাস্টিক ব্যবহারে সতর্কতা এবং বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলে মানুষকে সচেতন করেছে দীর্ঘ এই ভ্রমণকালে। শান্তর এই অ্যাডভেঞ্চারে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে ষড়জ অ্যাডভেঞ্চার।

বাংলাদেশ নানা সমস্যাও সম্ভাবনার দেশ। যে দেশের তরুণদের অন্যতম লক্ষ্যই হলো পড়ালেখা করে কোনো মতে একটা চাকুরি জুটিয়ে টিকে থাকা। সেখানে শান্তর মতো দেশ দেশান্তরে ঘুরে মানুষকে সচেতন করা এতোটা সহজ কাজ নয়, তবু সে যেটা করেছে। তোমাকে সেলুট হাঁটাবাবা।

একজন সংবাদকর্মী হয়ে দেশের অনেক অঞ্চল ঘুরেছি কিন্তু পুরো দেশটা যে এখনও দেখা বাকি। তাই আমি শান্ত হতে চাই। হেঁটে হেঁটে দেশটাকে দেখতে চাই।

শান্ত একটা কথা প্রায়ই বলে, ভাই আপনি আমাকে এই লাইনে না আনলে হয়তো এই অর্জন হতো না। সেটা হতো কিনা সেটা জানি না, তবে আমি অ্যাডভেঞ্চার ভালোবাসি। টুকটাক রানিং করে শরীর ফিট রাখার চেষ্টা করি। সেই থেকেই শান্তর সাথে পরিচয়। আর এসব অ্যাডভেঞ্চারে যে মানুষটি সবসময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তিনি হলেন- উচ্ছাস মাহমুদ জাকারিয়া। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন তিনি। হাঁটা কিংবা রানিং সবকিছু যার আত্মায় মিশে আছে।

আমার মনে হয়, এদেশে আরও অনেক শান্ত প্রয়োজন। শুধু পড়ালেখা করে চাকুরির পেছনে না ছুটে কারও কারও দৌড়বিদ হওয়া প্রয়োজন, কারও সাঁতারু হওয়া, কেউবা হেঁটে হেঁটে দেশ ভ্রমণ করবে। শুধু ক্রিকেট দিয়ে নয়, অলিম্পিকে গিয়ে স্বর্ণপদক এনে দেশের নাম পৌঁছে দেবে পৃথিবীর বুকে এরা। আর এজন্য প্রয়োজন-সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, তাহলেই তরুণরা এগিয়ে আসবে।

লেখক: মেহেদী হাসান, সংবাদকর্মী