প্রচ্ছদ ›› মতামত-বিশ্লেষণ

আমেরিকার পরবর্তী টার্গেট কে?

সোহেল রানা
১৩ জুন ২০২২ ১৬:৩৭:৫৪ | আপডেট: ১ year আগে
আমেরিকার পরবর্তী টার্গেট কে?

‘সন্ত্রাসবাদের ধারণাটিও এখন পশ্চিমের চোখ দিয়ে দেখা, পশ্চিমের কলম দিয়ে লেখা’।

‘চীন বিশ্বাস করে বিশ্ব ব্যবস্থার শীর্ষে তাদের না থাকা ঐতিহাসিকভাবে ভুল এবং অন্যায়। সেই বাস্তবতা তারা বদলাতে চায় । আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চীন গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসাবে দেখা দিয়েছে’।

২০২০ সালে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকায় দীর্ঘ এক লেখায় তৎকালীন মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান জন র‌্যাটক্লিফ একথা বলেন।

হ্যাঁ, বিশ্ব যখন প্রস্তুত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-পরবর্তী ভূরাজনৈতিক কাঠামোর জন্য, স্বাভাবিকভাবেই চীনের উত্থান আমেরিকার জন্য সত্যিই মাথাব্যাথার কারণ! কেননা, তারা বিশ্বব্যাপী তাদের প্রভাব ধরে রাখতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে!

কয়েক দশক আগে যেমন যুক্তরাষ্ট্র-সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বন্দ্ব বিশ্বকে ধ্বংসের দারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছিল। এখন, মার্কিন-চীন দ্বন্দ্ব আবারও বিশ্বের জন্য হুমকিতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি তাইওয়ান আর হংকং নিয়ে যেভাবে দুদেশ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে তাতে গোটা এশিয়াতেই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।

এ মাসে সিঙ্গাপুরে নিরাপত্তা সম্মেলন ‘সাংগ্রি–লা ডায়ালগ’ এ চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেঙ্গহি তো বলেই বসলেন, ‘কেউ যদি চীন থেকে তাইওয়ানকে বিভক্ত করার সাহস করে, তাহলে চীন অবশ্যই যুদ্ধ শুরু করতে দ্বিধা করবে না। তা যেকোনো মূল্যেই হোক না কেন’।

আর মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন হুমকি দিয়ে বলেন, ‘চীন যদি তাইওয়ান আক্রমণ করে, তবে ওয়াশিংটন তাদের রক্ষা করবে’।

বোঝাই যাচ্ছে তাইওয়ানকে ঘিরে দুদেশের অবস্থান কতটা দৃঢ়! চীন বোঝাতে চাইছে তাইওয়ানকে ব্যবহার করে চীনকে দমন করার বিষয়টি কখনোই জয়ী হবে না। আর অন্যদিকে তাইওয়ান প্রণালিজুড়ে মার্কিনিরা তাদের ভাষায় ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতার’ ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে!

তবে চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন নীতি সব সময়ই মারমুখি ও আগ্রাসী ছিলো। শুধু চীন নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের সামনে যে যে রাষ্ট্রগুলো মাথা নোয়াবে না, তাদের আধিপত্যবাদকে স্বীকার করবে না, তাদের সবার প্রতিই সে আগ্রাসী। সেসব দেশ তার ভাষায় ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’। কেননা, ‘সন্ত্রাসবাদের ধারণাটিও এখন পশ্চিমের চোখ দিয়ে দেখা, পশ্চিমের কলম দিয়ে লেখা’।

পশ্চিমা সম্রাজ্যবাদের আগ্রাসী ভূমিকার কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ হত্যা কাণ্ডের শিকার হয়েছে। আর অপ্রত্যক্ষ কারণে নিহত হয়েছে আরও কয়েক কোটি মানুষ।

মার্কিনীদের পররাষ্ট্র নীতি সম্পর্কে ‘অল দ্য নিউজ দ্যাট’স নট ফিট টু প্রিন্ট’ শিরোনামের নিবন্ধে বিখ্যাত মার্কিন বুদ্ধিজীবী নোয়াম চমস্কি উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি হলো, ‘মাফিয়া প্রিন্সিপাল (নীতি) । এই নীতি অনুযায়ী মাফিয়া ডনের মতোই যুক্তরাষ্ট্র ভয়ভীতির মাধ্যমে আগ্রাসী শাসন চালিয়ে যেতে চায়’।

On Western Terrorism: From Hiroshima to Drone Warfare বইয়ে সোভিয়েত বনশোদ্ভুত মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক আদ্রে ভিচেক বলেন, ‘পশ্চিমারা বিশেষকরে আমেরিকা ও ইউরোপ, যেভাবে চীনকে বিচার করে থাকে তা পশ্চিমা উগ্রতা তাড়িত ও উসকানিমূলক’।

মজার ব্যাপার হলো, তথাকথিত তাইওয়ান, তিব্বত কিংবা হংকং ইস্যু পশ্চিমের গণমাধ্যমের পাতা থেকে কখনও সরে না কিন্তু ভুলেও কখনও কাশ্মীর কিংবা ইয়েমেন বা ইরাকের গণহত্যার ইস্যু সেখানে স্থান পায় না বললেই চলে।

সম্প্রতি উইক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের অজুহাতে রাশিয়াকে একঘরে করার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব। ইতোমধ্যে মস্কোর বিরুদ্ধে এ যাবৎকালের সবচেয়ে কঠোর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপও করেছে তারা।

এই যুদ্ধের প্রভাবে পুরো বিশ্বের অর্থনীতি টালমাটাল হলেও, বিশ্ববাজারে তেল, গ্যাস, খাদ্যসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়লেও, সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ না খেয়ে মরবার উপক্রম হলেও, রাশিয়া কিন্তু সফলভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

ডলারের বিপরীতে রুবলের দাম বেড়েছে স্মরণকালের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলও তাদের কবজায় এখন!

‘রাশিয়া ইস্যুতে পশ্চিমারা মূলত দুই দলে বিভিক্ত এখন। একদল “শান্তি শিবির” বা শান্তির পক্ষের দল, যারা এই যুদ্ধ বন্ধ এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আলোচনা শুরু করতে চায়। অন্য দলের নাম, “ন্যায়বিচারের দল”, যারা মনে করে রাশিয়াকে তার আগ্রাসনের জন্য চড়ম মূল্য দিতে হবে’। এই খবর ছাপা হয়েছে দি ইকোনোমিস্ট ম্যাগাজিনে।

আর চলতি মাসের ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পুতিনস ওয়ার ইজ এ সাকসেস...’ , তবে সাথে একটা কথা যুক্ত করে দেয়া হয়েছে, ‘বিশ্ব অর্থনীতিকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে…’।

সে যাই হোক না কেন! ইউরোপ ভেঙে যাক বা না যাক; পুতিন হেরে যাক বা না যাক; কিয়েভের পতন হোক বা না হোক; আমেরিকা কিন্তু তার প্রাথমিক টার্গেট পূরণে মোটামুটি সফল! সেটা কি বলেন তো? অস্ত্রের বাজার চাঙ্গা করা! আ-হা, কোভিড পরবর্তী বিশাল ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হবে যে!

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো জোটের মধ্যে যে ঝিমানো অবস্থা তৈরি হয়েছিল, পুতিনই সেটাকে চাঙ্গা করে দিয়েছে!
কেননা, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের সিদ্ধান্তের পর পুতিন এক ভাষণে বলেন, ‘এর প্রতিক্রিয়ায় এই দুই দেশের সীমান্তে সামরিক ঘাঁটি তৈরি করবে রাশিয়া’।

তবে পুতিন সবসময়ই দাবি করে আসছেন, ন্যাটো জোটকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে পশ্চিমা বিশ্ব। কেননা পূর্ব ইউরোপে ন্যাটো তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করেনি। রাশিয়ার দীর্ঘদিনের অভিযোগ, পূর্ব ইউরোপে ন্যাটো বিস্তার ঘটাবে না বলে ১৯৯০ সালে দেয়া একটি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

তবে ন্যাটো বরাবরের মত রাশিয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। নিজেদের আত্মরক্ষামূলক জোট হিসেবে উল্লেখ করেছে তারা।

এ প্রসঙ্গে ন্যাটো সম্পর্কে পশ্চিমা স্কলার চমস্কির মূল্যায়নটা এখানে না উল্লেখ করলেই নয়, ‘পঞ্চাশের দশকে আমেরিকার পরিকল্পকেরা খুবই চিন্তিত ছিলেন যে ইউরোপ হয়তো আরেকটা তৃতীয় শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হতে পারে। তাদের এই চিন্তা দূর করার জন্যই একটা পথ হিসবে গড়ে তোলা হয় ‘ন্যাটো’।

ন্যাটোতে মূলত প্রস্তাব করা হয়েছিল ইউরোপকে রাশিয়ার ও তার জোটের সম্ভাব্য আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য। কিন্তু ১৯৮৯ সালের পরে ন্যাটো টিকে থাকার প্রশ্নটা খুব নাটকীয় রূপ নেয়। মানে রাশিয়ার পতনের পর এই জোটটি ভেঙে ফেলার কথা থাকলেও এটার আরও সম্প্রসারণ হয়। পুর্বের দেশগুলোর দিকে এগিয়েছে এটি’।

আর এই নিয়েই পুতিনের যত আপত্তি। খাল কেটে কেউ কুমির আনবে? রাশিয়া তার চারপাশে অস্ত্র আর গোলাবারুদ দিয়ে অবরুদ্ধ হতে নিশ্চয়ই চাইবে না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যুদ্ধ ছাড়া পুতিনের সামনে আর অন্য কোনও পথ খোলা ছিল না। এই কথা পশ্চিমারাও ভালো করেই জানতো! তাই, ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ লাগিয়ে পুতিনকে ব্যস্ত রাখার পরিকল্পনায় আমেরিকা সফল –একথা বলাই যায়।

তবে পুতিনও কৌশলী কম নন! উইক্রেন আক্রমণের শুরুর দিকে যখন পশ্চিমারা তাকে নানা হুমকি ধামকির মধ্যে রেখেছিল তখন তিনি পালটা হুমকি দিয়ে বলেন, ‘পৃথিবীর মানচিত্রে রাশিয়া না থাকলে পৃথিবী থাকার দরকার কি?’

তার এই আত্মবিশ্বাসী হুমকির প্রশংসা খোদ সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও করে বলেন, ‘পুতিনের কৌশল খুবই স্মার্ট’!

হ্যাঁ যা বলছিলাম! চমস্কির ভাষায়, ‘ন্যাটো মূলত আমেরিকার নেতৃত্বে চালিত একটা বিশ্ব সেনাবাহিনীর মতো, যারা মোটামুটি আনুষ্ঠানিকভাবেই সারা দুনিয়ার তেল গ্যাস সমূদ্রসীমা কিংবা দেশের ভেতর দিয়ে পাইপলাইন যাওয়া আসার সিদ্ধান্তের মালিক’।

যাই হোক আপাততো রাশিয়াকে নিয়ে আমেরিকার প্ল্যান তো সফল! এবার পরবর্তী টার্গেট কে?

কেন, আবারও সেই চীন!

সম্প্রতি ভারতীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নেতৃস্থানীয় চার গণতন্ত্রের দেশ - অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে গঠিত কৌশলগত জোট- কোয়াড নিয়েও চীনের সাথে সদস্যদেশগুলোর বাকবিতন্ডা তো কম হয়নি!

অবিরতভাবে চীনা সম্প্রসারণবাদ অব্যাহত থাকা এবং সেই সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলার দৃঢ় সংকল্প নিয়েই আমেরিকার নেতৃত্বে কোয়াড নামের আঞ্চলিক জোট গঠিত হয়েছিল।

এই গ্রুপের উদ্দেশ্যই হলো চীনা সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে বাঁধা হিসেবে কাজ করা। মূলত ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় চীনের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক তৎপরতা ঠেকাতে ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে এই জোট গড়ে তোলা হয়।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এই জোটের ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘এই জোট ‘প্রশান্ত মহাসাগর বা ভারত মহাসাগরের সামুদ্রিক ফেনার মতো’ বিলীন হয়ে যাবে।

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে কোয়াড বৈঠকে চার দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের কাছে একটা প্রশ্ন তোলা হয়- ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের সঙ্গে সংঘাত অনিবার্য কি না। জবাবে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘কোনো কিছুই অনিবার্য নয়। তবে চীন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের ভেতরে ও আঞ্চলিকভাবে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক আচরণ করছে। আমি মনে করি, এ ব্যাপারে আমরা নিজেদের উদ্বেগগুলো প্রকাশ করেছি’।

এ বছরের ২৪ মে টোকিওর কান্তেই প্রাসাদে সর্বশেষ কোয়াড সম্মেলন চলাকালেই রাশিয়া ও চীন একঝাঁক যুদ্ধবিমান নিয়ে জাপানের আকাশসীমার কাছে মহড়া চালায়।

রাশিয়াকে কোনঠাসা করার সমস্ত প্রচেষ্টার মধ্যেই আবার চীনের বিরুদ্ধে আক্রমাণাত্নক নীতি গ্রহন করেছে ওয়াশিংটন। মস্কোর ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা না মানার অভিযোগ এসেছে চীনের বিরুদ্ধে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা না মানলে বেইজিংকেও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে হুশিয়ারি ওয়াশিংটনের।
কিছু কথা এখানে বলে নেয়া দরকার যাতে বিষয়টা পরিষ্কার হয়!

বিশ্বের শীর্ষ তেল ও গ্যাস রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়া। প্রতিদিন ৮০ লাখ ব্যারেল তেল বিশ্ববাজারে রপ্তানি করে রাশিয়া, যার ৬০ শতাংশই যায় ইউরোপে। তেল ছাড়াও বিশ্বের শীর্ষ গ্যাস রপ্তানিকারক মস্কো। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট গ্যাসের আমদানির ৪৫ শতাংশই রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল।

জ্বালানির পাশাপাশি রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম গম রপ্তানিকারক দেশ। বিশ্বের গম রপ্তানির ১৮ শতাংশই রাশিয়ার দখলে।

ওপরদিকে সব ধরনের যন্ত্রাংশের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ কৃষি পণ্য রপ্তানিকারক দেশ চীন। বিশ্বের খাদ্যপণ্যের ৪ ভাগের এক ভাগ একাই উৎপাদন করে চীন।

তাই, বিশ্লেষোকরা মনে করেন, নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধ দিয়ে চীন ও রাশিয়াকে একঘরে করতে পারলে পুরোবিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্য তৈরি হবে। শীর্ষ জ্বালানি, খাদ্য ও যন্ত্রাংশ উৎপাদনক রাশিয়া ও চীনকে বিশ্ববাজার থেকে দূরে রাখতে পারলে এসব পণ্যের দাম বেড়ে যাবে বহুগুন, যার ফায়দা নেবে মার্কিন কোম্পানিগুলো।

ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিকল্পনার নেতিবাচিক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্ববাজারে। রাশিয়ার ওপর অবরোধ দেয়ায় বেড়ে গেছে গমসহ সব ধরনের খাদ্য পণ্যের দাম। এছাড়া আফ্রিকার দেশগুলোতে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। সময় মতো খাদ্য আমদানি না করতে পারলে দেশগুলোতে শীঘ্রই দূর্ভীক্ষ দেখা দেবে বলে জানিয়েছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ও জাতিসংঘ।

পাশাপাশি ভোগান্তির বাইরে নয় ইউরোপের জনগণও। সেখানে দেখা দিয়েছে মূদ্রাস্ফিতি ও অর্থনৈতিক সংকট। রাশিয়ার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞা দিলে ইউরোপে অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন খোদ ইউরোপের বিশেষজ্ঞরাই।

পশ্চিমা বিশ্বের রাশিয়ার ওপর একের পর এক এসব অবরোধে টালমাটাল বিশ্বের অর্থনীতি। এরপর চীনের সঙ্গে সংঘাত শুরু হলে অঘোষিত বিশ্বযুদ্ধের দিকেই এগোবে পৃথিবী।

চীন-মার্কিন সম্পর্কের স্বরূপ কি, তা বোঝাতে গিয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং-ই ২০১৮ সালে নিউ ইয়র্কে বলেছিলেন, ‘একটা গ্লাস ভাঙা সহজ, কিন্তু জোড়া লাগানো কঠিন।……… আমাদের গ্লাসটা এখনও পুরোপুরি ভেঙে যায়নি ঠিকই, কিন্তু যে ফাটল ধরেছে তার দাগ থেকেই যাবে’।

তাই, বলাই যায়, আপাততো চীন মার্কিন সংঘাতের অবসান হচ্ছে না! কেননা চীনই এই মূহুর্তে আমেরিকার সবচেয়ে বড় ভূ-রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ!

 

  সোহেল রানা
  লেখক, সাংবাদিক ও সমাজকর্মী