প্রচ্ছদ ›› মতামত-বিশ্লেষণ

অর্থনীতিতে এবারের নোবেল পুরস্কার ব্যাংক ব্যবস্থাপনার জন্য হুঁশিয়ারি: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

টিবিপি ডেস্ক
১১ অক্টোবর ২০২২ ১৬:১০:০৫ | আপডেট: ১ year আগে
অর্থনীতিতে এবারের নোবেল পুরস্কার ব্যাংক ব্যবস্থাপনার জন্য হুঁশিয়ারি: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

চলতি বছরে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বাংলাদেশসহ অনেক দেশের ব্যাংক ব্যবস্থাপনার জন্য হুঁশিয়ারি বার্তা বহন করছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। 

এ বিষয়ে তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

দ্য বিজনেস পোস্টের পাঠকদের জন্য স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

২০২২ সালের অর্থনীতির নোবেল পুরষ্কার এ বছর আর্থিক খাতের বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য যে তিনজন অর্থনীতিবিদ নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তারা সবাই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে ব্যাংকিং খাতের ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেছেন। তিনজনের বয়সই সত্তুরের কাছাকাছি এবং এ বিষয়ে তাদের গবেষণার শুরু আশির দশকের প্রথম থেকে। শুধু উন্নত দেশের জন্যই নয়, স্বল্পোন্নত দেশের ব্যাংকিং খাতের ব্যবস্থাপনার নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও তাদের গবেষণা থেকে দিকনির্দেশনা পাওয়া যেতে পারে।

এর আগেও আর্থিক খাতের বিশ্লেষণের জন্য ১৯৯৭ সনে দুজন এবং ২০১৩ সনে তিনজন অর্থনীতিবিদকে যৌথ ভাবে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের সবারই গবেষণা ছিল শেয়ার বাজারের গতি-প্রকৃতি ও উত্থান-পতন নিয়ে। ওই সব বিশ্লেষণ শেয়ার বাজারের বিপর্যয় ঠেকাতে বা এ নিয়ে সঠিক পূর্বাভাষ দিতে খুব কাজে দেয় নি বলে মনে করা হয়। কারণ শেয়ার বাজারের কেনা-বেচার ধরণ শুধু অর্থনীতির যৌক্তিক আচরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না, যে কারণে স্নায়ু-অর্থনীতি বা neuro-economics নামে নতুন ধারার অর্থনীতি নিয়ে এখন গবেষণা হচ্ছে।

কিন্তু এবারের নোবেল বিজয়ীদের কাজ আর্থিক খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভূমিকা নিয়ে এবং তাদের বিশ্লেষণ অনেক বেশি বাস্তবমুখী, যা ব্যাংক ব্যবস্থার সম্ভাব্য ধস ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তারা যে বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন তার মধ্যে আছে ব্যাংক ব্যবস্থার প্রতি আমানতকারীদের আস্থার শঙ্কট, ঋণ মঞ্জুর করার ব্যাপারে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার গুরুত্ব, ব্যাংকের তারল্য ও মূলধন ঘাতটির বিষয়ে সতর্কতা, সঙ্কটাপূর্ণ ব্যাংককে বাঁচিয়ে রাখতে আমানতের উপর যথেষ্ট অঙ্কের বীমার ব্যবস্থা এবং যথা সময়ে সতর্ক না হবার খেসারত হিসাবে পরবর্তীতে দেউলিয়া ব্যাংককে বাঁচাতে সরকারের বড় অঙ্কের ব্যায়ের বোঝা বহন।

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের জন্য এই সবগুলো বিষয়েই সতর্কতা জরুরি। যতদূর মনে পড়ে আমাদের ব্যাংকগুলোতে গচ্ছিত আমানতপ্রতি মাত্র এক লক্ষ টাকা বীমাকৃত। ইতোমধ্যে ব্যাংকের দেউলিয়া হয়া থেকে উদ্ধার করার ঘটনা দেখা গেছে, অনেক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার দক্ষতার ঘাতটি নিয়েও অনেক আলোচনা হয়েছে ও হচ্ছে। কিন্তু অবস্থার খুব উন্নতি হচ্ছে বলা যাবে না। ব্যাংকে টাকা আমানত রাখার তেমন কোনো বিকল্প নাই বলে ব্যাংক খাতের সমস্যা সহজে দৃষ্টিগোচর হয় না; কিন্তু যখন কোনো বিপর্যয় ঘটে তখন তার জন্য পুরো অর্থনীতিকে অনেক মূল্য দিতে হয়।

এবারের নোবেল পুরস্কার অনেক দেশের ব্যাংক ব্যবস্থাপনার জন্য হুঁশিয়ারি বার্তা বহন করে এনেছে।