সরকার নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে সিটি নির্বাচনে জনগণের কোনো আগ্রহ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় বিএনপি কোনো প্রার্থী না দিলেও আগামী পাঁচ সিটি করপোরেশনে সাজানো নির্বাচন হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রতিষ্ঠাতা শফিউল আলম প্রধানের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দলটির একটি অংশের আয়োজিত অনুষ্ঠানে ফখরুল এসব কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, ‘তারা (সরকার) রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সরকারের নিয়ন্ত্রণে। দেশে নির্বাচন নিয়ে জনগণ আগ্রহী নয়। নির্বাচন ব্যবস্থাকে তারা (সরকার) ধ্বংস করে দিয়েছে। দেখেন আপনারা আজ নির্বাচনের অবস্থা কেমন? এই যে মেয়র ইলেকশন হচ্ছে, বেশির ভাগ সিটি করপোরেশনে বিরোধী দল কোনো প্রার্থী দিচ্ছে না।’
তিনি বলেন, সিলেটে অত্যন্ত জনপ্রিয় মানুষ আরিফ (আরিফুল হক চৌধুরী) দুইবার মেয়র হয়েছেন এবং সিলেটের মানুষ তাকে আবারও মেয়র হিসেবে চায়। সেই আরিফ শনিবার জনসভা করে বলেছেন যে এ নির্বাচন কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না, নির্বাচনই হবে না। তারা ব্লু প্রিন্ট করে ফেলেছে। এ নির্বাচনে যাওয়ার অর্থই হয় না। সিলেট নগরীর জনগণ তাদের প্রিয় নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় চোখের পানি ফেলেছে। তিনি (আরিফ) স্পষ্টভাবে বলেছেন, এই নির্বাচন অর্থহীন হবে এবং এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, সব জায়গায় একই অবস্থা। আজ প্রতিটি নির্বাচনকে একই অবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুরো নির্বাচন ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানটাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে। এটাই হচ্ছে এ ধরনের কর্তৃত্ববাদী যারা, এ ধরনের ফ্যাসিবাদী যারা তাদের একটা হাতিয়ার। নির্বাচন একটা টুল, দেখাবে নির্বাচন হচ্ছে। সুতরাং আমরা খুব পরিষ্কার, স্পষ্ট ও দৃঢ়ভাবে বলছি যে এ সরকার থাকলে কোনো নির্বাচন হবে না। শেখ হাসিনা সরকার থাকলে কোনো নির্বাচন হবে না। একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন নিয়ে এমন একটা অবস্থা হয়েছে, তাদের যে জোট আছে, ১৪ দলের এক শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির আমাদের অত্যন্ত সম্মানিত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব রাশেদ খান মেনন, তিনি কিছুদিন আগে বলেছেন, পরিকল্পিত নির্বাচন চাই না। ম্যাসেজ ইজ ভেরি ক্লিয়ার যে আওয়ামী লীগ পরিকল্পিত নির্বাচন করে, সেই নির্বাচন তিনি চান না। আরেকজন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন যে এখানে মন্ত্রীরাই সিন্ডিকেট তৈরি করে, তারাই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে। এসব আমার কথা নয়, সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন।
এছাড়া রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
খেলাপী ঋণ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, পত্রিকায় আজ এসেছে যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক তার রিপোর্টে বলছে বাংলাদেশ ইজ চ্যাম্পিয়ান অব ডিফল্ট লোনস, এই যে খেলাপি ঋণ, এটাতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ান হয়ে গেছে। এক নম্বরে শ্রীলঙ্কা ছিল, শ্রীলঙ্কাকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। খেলাপি ঋণ কেন হবে না? যারা ঋণ নেয়, শোধ করে না। তারা তো তাদের অ্যাডভাইজার মন্ত্রী, আমি নাম বলব না। হাজার হাজার কোটি টাকা তারা ঋণ নিয়ে রিসিডিউল করছে বছরের পর বছর ধরে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, আর আমাদের ছোটখাটো ব্যবসায়ীরা যদি একটা-দুইটা ডিফল্ট হয় তো তার বিরুদ্ধে মামলা হয়ে যাচ্ছে, তাকে কারাগারে নিয়ে যাচ্ছে। এই সরকারের অপকর্ম বলে শেষ করা যাবে না। এনাফ ইজ এনাফ। এই সরকার যদি একটা মুহূর্ত আর দেশের পরিচালনায় থাকে, দেশ আরও খারাপের দিকে যাবে।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ যে কমিটমেন্টগুলো করেছিলো, জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি করেছিলো প্রত্যকটা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। আওয়ামী লীগ হচ্ছে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের দল, আওয়ামী লীগ হচ্ছে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর দল, আওয়ামী লীগ হচ্ছে স্বাধীনতার বিরুদ্ধের দল।