আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরেই সংঘর্ষে জড়িয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের বিজয় গ্রুপের দুটি অংশ। এতে ১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের মোড়ে এ সংঘর্ষ শুরু হয়ে চলে রাত পৌনে ২টা পর্যন্ত। পরে প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত বিজয় গ্রুপের দুটি অংশের নেতাকর্মীরা একে অপরকে দোষারোপ করছেন।
জানা যায়, গত বছর ৩১ জুলাই চবি ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পাওয়া ও নেতৃত্ব দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিজয় গ্রুপ দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি পক্ষ আলাওল এবং এ এফ রহমান হলের অবস্থান নেয়। আরেক পক্ষের সদস্যরা সোহরাওয়ার্দী হলে থাকেন। সোহরাওয়ার্দী হলের নেতৃত্ব দেন শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নজরুল ইসলাম ও পদবঞ্চিত দেলোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন নেতা। আর আলাওল এবং এ এফ রহমান হলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াছ।
দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ার পরেও সোহরাওয়ার্দী হলে অবস্থান নেওয়া নজরুল-দেলোয়ার গ্রুপের বেশ কয়েকটি কক্ষ এখনো এ এফ রহমান ও আলাওল হলে রয়েছে। তবে কয়েকদিন আগে আলাওল হলের ৪৪২ নম্বর কক্ষটি দখল নিয়েছে ইলিয়াছের অনুসারীরা।
এ নিয়ে রাত ১০টার দিকে ওই দুই পক্ষের মধ্যে তর্কতর্কি হয়। এর জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় উভয় পক্ষই রামদা, লাঠিসোঁটা নিয়ে একে অপরের ওপর চড়াও হয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে অন্তত ১২ জন আহত হন। আহত নেতাকর্মীদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক শুভাশিস চৌধুরী বলেন, মারামারির ঘটনায় ১২ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের শরীরে ইটপাটকেল নিক্ষেপের চিহ্ন ছিল। একজনের আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী হলের বিজয় গ্রুপের নেতা ও সহসভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আলাওল হলে আমাদের পক্ষের ৫৭টি কক্ষ রয়েছে। ইলিয়াসের অনুসারীরা তার মধ্যে একটি কক্ষের তালা ভেঙে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য দখলে নিয়েছে। রাত ১০টার দিকে আমরা যখন কক্ষ ফেরত চাইতে যাই আমাদেরকে তিরস্কার করা হয়েছে। আমরা যখন শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম, তখন ইচ্ছাকৃতভাবে ইলিয়াসের অনুসারীরা আমাদের ওপর হামলা করে। এরপর আমরা প্রতিহত করেছি।’
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বিজয়ের নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াস জানান, এ ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
বিজয়ের আরেক নেতা মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, ‘আমরা ফুল দেওয়ার জন্য শহীদ মিনার যাচ্ছিলাম। হঠাৎ সোহরাওয়ার্দী হলের নেতাকর্মীরা আমাদের গতিরোধ করে হামলা করে। এস এম ফয়সাল ও অনিক দাস নামের দুই নেতাকে কুপিয়ে জখম করে। ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের ওপর এ হামলা চালানো হয়েছে।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করছেন। তাদেরকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’