নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ আটজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক মুহা. মাহবুবুল আলম আংশিক জবানবন্দি দেন।
কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান এ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
এর আগে এদিন খালেদা জিয়ার পক্ষে সময় আবেদন করে শুনানিতে বলা হয়, চার্জগঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হয়েছে। যা আজ শুনানির জন্য রয়েছে জানিয়ে সাক্ষ্য পেছানোর আবেদন করেন আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার। এদিন এ আইনজীবীই খালেদা জিয়ার পক্ষে হাজিরা দেন।
কিন্তু আদালত সময় আবেদন নামঞ্জুর করে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করার আদেশ দেন। মামলার বাদী মাহবুবুল আলম সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেন। আংশিক সাক্ষ্য হওয়ার পর আবারও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তা পেছানোর আবেদন করেন। আদালত সময় আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ২০ জুন সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।
এর আগে গত ১৯ মার্চ একই আদালত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ আটজনের বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলায় চার্জগঠন করেন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- তৎকালীন মুখ্য সচিব কামাল উদ্দীন সিদ্দিকী,বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সিএম ইউসুফ হোসাইন, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এমএএইচ সেলিম । এদের মধ্য প্রথম তিনজন পলাতক রয়েছেন।
২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলাটির তদন্তের পর ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলার অপর তিন আসামি বিচারকালীন মারা গেছেন।
চার্জশিটের বৈধতা চ্যলেঞ্জ করে খালেদা জিয়া হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে ২০০৮ সালের ৯ জুলাই হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন। ২০১৫ সালের ১৮ জুন হাইকোর্ট রুল ডিচার্জ করে স্থাগিতাদেশ প্রত্যাহার করেন।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর হাতে ‘তুলে দেওয়ার’ অভিযোগে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতির অভিযোগে মামলাটি করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে অর্থ আত্মসাতের দুর্নীতি মামলায় সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় আদালত। তিনি ওইদিন মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর কারাগারে থাকাবস্থায় চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের মামলায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের রায় দেয় আদালত। দণ্ডিত হওয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় একই বছর ৩০ অক্টোবর আপিলে হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার সাজা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রায় দুই বছর জেলে থাকার পর সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে দুটি শর্তে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয় ২০২০ সালের ২৫ মার্চ। তখন দেশে করোনা মহামারি চলছিল। এরপর থেকে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাস অন্তর অন্তর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।