প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ যশোর জেলা স্টেডিয়ামে এক জনসভায় বক্তৃতা দেবেন। এর মধ্যে যশোরে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমির প্রেসিডেন্ট প্যারেডে যোগ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বিএএফ একাডেমিতে পাসিং আউট কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেছেন। এ দিন দুপুর ২টার দিকে তিনি যশোর জেলা স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি।
করোনাকালীন অচলাবস্থার পর ঢাকার বাইরে আজ প্রথমবারের মতো সরাসরি জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ এই জনসভার আয়োজন করেছে। ফলে যশোর এখন একটি উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে।
জেলা শহরের শামসুদ্দিন স্টেডিয়ামে এ সমাবেশে যোগ দিতে, এরইমধ্যে দূর-দূরান্ত থেকে যশোরে জড়ো হচ্ছেন নেতাকর্মীরা। দলীয় প্রধানের জনসভায় বিপুল জনসমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। নেতাকর্মীদের আশা শেখ হাসিনার এই সফরের মধ্য দিয়ে আসবে গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা। করোনার বাধা কাটিয়ে দীর্ঘ প্রায় ৩ বছর জেলা সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
যশোরের সর্বস্তরের মানুষের দাবি, স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও কালনায় মধুমতি সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। ফলে যশোরসহ এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থা এবং মানুষের জীবনযাত্রায় উন্নয়ন ঘটেছে। এ উন্নয়ন ও দিন বদলের নেতৃত্ব দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ করতে এবং তার মুখে আগামীর বার্তা শুনতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
এ দিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যশোরবাসীর দীর্ঘদিনের বাকি চাওয়া-পাওয়া পূরণ করবেন, এমন প্রত্যাশাই এই অঞ্চলবাসীর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যশোর সদর ৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের নিজ এলাকা শহরের কাজীপাড়া থেকে একটি বিশাল মিছিল ৮টা ৪৫ মিনিটে স্টেডিয়াম অভিমুখে যায়। ভুভুজেলা বাজিয়ে নেচে নেচে-গেয়ে মিছিলটি জনসভার স্থান যশোর শামস-উল হুদা স্টেডিয়াম অভিমুখে যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মিছিলে সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের ছবি সম্বলিত সাদা গেঞ্জি এবং লাল-সবুজ টুপি পরিহিত অসংখ্য মানুষ অংশ নেন।
এ ছাড়া যশোর শহরের রতন করবার বিবি রোড এবং অন্যান্য এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে জনতা সমাবেশস্থলের দিকে রওনা দিয়েছে। ফলে যশোরে প্রধানমন্ত্রীর আগমন এবং জনসমাবেশ ঘিরে নিশ্চিত নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে প্রশাসন। জনসভাস্থলে পাঁচ স্তর এবং শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে যশোর জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পুলিশ সুপার ফিরোজ কবীর বলেন, ‘জনসভাস্থলে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করা হয়েছে। গোটা যশোর জেলার ৮ উপজেলা গোয়েন্দা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে। বিভিন্ন স্তরে চৌকস অফিসার ও ফোর্স দায়িত্ব পালন করছেন।’
যশোর জেলা পুলিশের মুখপাত্র গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ রুপি সরকার বলেন, ‘জনসভা উপলক্ষে গোটা যশোর জেলাকে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে আনা হয়েছে। শহরতলি থেকে শুরু করে গোটা এলাকায় প্রশিক্ষিত ফোর্স নিযুক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর জন্য পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাবেষ্টনী প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে কয়েক শ’ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। কয়েকটি ডগ স্কোয়াড টিমও কাজ করছে। পাঁচ স্তরের বাইরেও গুগল ও স্যাটেলাইট সহায়তা নিয়েও নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা জুড়ে রাস্তায় নিয়োজিত থাকছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।’
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সমগ্র যশোর জেলা ইতোমধ্যেই নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার। তিনি বলেছেন, ‘বৃহস্পতিবার এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। সাদা পোশাকেও অনেকে ডিউটিতে নিয়োজিত রয়েছেন।’
‘প্রধানমন্ত্রীর আগমন ও জনসমাবেশে যদি কোনো পুলিশ সদস্য দায়িত্বে বিন্দুমাত্র অবহেলা করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজ ডিউটিতে নিয়োজিত সব পুলিশ সদস্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন,’ বলেও জানান প্রলয় কুমার জোয়ারদার।
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা সবাই ডিউটিতে অবশ্যই উত্তম পোশাক পরিধান করবেন। যেহেতু বাংলাদেশ পুলিশ একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী, সুতরাং আমাদের প্রত্যেকেরই সেটা মেনে চলতে হবে।’
দলীয় সূত্র জানায়, আজ যশোর, ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম এবং ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে আওয়ামী লীগের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশে সশরীরে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এর আগে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে একদিনের সফরে আজ যশোর যাবেন। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমির প্রেসিডেন্ট প্যারেডে যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী বিএএফ একাডেমিতে পাসিং আউট কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করবেন।