রাজধানীসহ সারাদেশে আজ গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। গণমিছিলের মতো এই কর্মসূচিও জোরালোভাবে করতে চায় দলটি।
যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে কর্মসূচিতে অংশ নেবে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোও। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে গঠিত সমমনা জোটগুলোও এতে অংশ নেবে। কর্মসূচিতে বড় জমায়েত নিশ্চিত করতে দলগুলোর পক্ষ থেকে নানা প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।
এদিকে সারাদেশে বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচিকে ঘিরে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা হলে প্রতিরোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ একাধিক নেতা।
আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা সহিংসতা করলে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এ কথা বলেন তিনি।
এদিকে বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে জনদুর্ভোগ ও নৈরাজ্য বরদাশত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তরে মুজিব কর্নার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি একথা বলেন।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি এবং রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে সারাদেশে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে দলটি।
রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনের একপাশের সড়কে আজ চার ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি করবে বিএনপি। গতকাল রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন পুলিশের অনুমতি পাওয়ার কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত নয়া পল্টনে আমাদের কেন্দ্রৗয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করব। পুলিশের অনুমতিও আমরা পেয়েছি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এই কর্মসূচি করব।’
এর আগে দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালকে নিয়ে ডিএমপি কার্যালয়ে যান তিনি। তারা কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন।
আজ ঢাকাসহ ১০টি বিভাগীয় (সাংগঠনিক বিভাগসহ) সদরে এই গণঅবস্থান কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। সাতদলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটও আলাদাভাবে এই কর্মসূচি একযোগে পালন করবে। ব্যাপক প্রস্তুতিও নিয়েছে সংশ্লিষ্ট দল ও জোট নেতারা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগও বিএনপির কর্মসূচির বিপরীতে একইদিন শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচি, শোডাউন ও মিছিলের মধ্য দিয়ে মাঠ দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে ১১ জানুয়ারি বিএনপির ‘গণঅবস্থান কর্মসূচি’র দিন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের রাজধানীর প্রবেশদ্বার ও পাড়া-মহল্লাগুলোতে সতর্কাবস্থানে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, রাজধানীর পল্টন, প্রেসক্লাবসহ হাতে গোনা কয়েকটা এলাকা ছাড়া বিএনপিকে রাজধানীতে সেভাবে দাঁড়াতে দেবে না আওয়ামী লীগ। তবে সরাসরি কোনো আক্রমণেও যাবে না দলটির নেতা-কর্মীরা। বিএনপি নেতা-কর্মীরা মাঠে নামার আগেই তারা মাঠ দখলে রাখার চেষ্টা করবে বলে জানা গেছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকাসহ ১০ বিভাগীয় শহরের গণঅবস্থান কর্মসূচি সফল করতে আন্দোলনের মূল দল বিএনপি ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ের বিভিন্ন ইউনিট এরই মধ্যে গণসংযোগ, কর্মীসভা, লিফলেট বিতরণসহ প্রস্তুতিমূলক কর্মকাণ্ড শেষ করেছে।
আজ বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এ গণঅবস্থান কর্মসূচির সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো একই কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত রয়েছে। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।
ঢাকায় গণঅবস্থান কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস। দলের সাংগঠনিক বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির সিনিয়র নেতারা নেতৃত্ব দেবেন। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (সিলেট) ড. আব্দুল মঈন খান (রাজশাহী), নজরুল ইসলাম খান (ময়মনসিংহ), আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম), সেলিমা রহমান (বরিশাল), ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (রংপুর), বরকত উল্লাহ বুলু (কুমিল্লা), শামসুজ্জামান দুদু (খুলনা), আহমেদ আজম খান (ফরিদপুর) প্রমুখ।