প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

দেশে বাড়ছে স্পোর্টস বাইকের চাহিদা

০১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৩:৪৮:৩৯ | আপডেট: ২ years আগে
দেশে বাড়ছে স্পোর্টস বাইকের চাহিদা

মোহাম্মদ নাহিয়ান

দেশে ক্রমেই বাড়ছে স্পোর্টস মোটরবাইকের চাহিদা। আগামী এক দশকে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের সঙ্গে স্থানীয় বাজারে এর চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে প্রস্তুত রয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।

প্রতিবছর ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ চাহিদা বাড়ছে এই মোটরবাইকের। দারুণ এসব বাইক মূলত শহুরে এবং যুব সমাজের একটি বড় অংশকে আকৃষ্ট করছে।

এসব মোটরবাইকের আকর্ষণীয় আকৃতি আর অপ্রতিরোধ্য গতির কারণে দুচাকার এ যান এখন স্বপ্নে পরিণত হয়েছে উদীয়মান তরুণ ও যুবকদের কাছে।

সম্প্রতি নজরুল সাদ নামের এক তরুণ ইয়ামাহা আর১৫ ভি৩ হলুদ রঙের একটি বাইক কিনেছেন এটির অত্যাধুনিক ডিজাইনের কারণে।

তিনি জানান, চালিকা শক্তি, আধুনিক ও নজকাড়া ডিজাইন এবং নতুন সংযোজিত ফিচারের কারণে অন্য সাধারণ বাইকের তুলনায় স্পোর্টস মোটরসাইকেল তার পছন্দ।

সাদের মতো অনেক বাইকারের দাবি, স্পোর্টস বাইক একদিকে যেমন তাদের উদ্বেলিত আর পরিপূর্ণ আনন্দ দেয়, তেমনি এটি চমৎকার ব্যক্তিত্বেরও প্রকাশ করে।

সুমন আহমেদ নামের এক বাইকারের দাবি, স্পোর্টস মোটরসাইকেল যে কোনো জায়গায় তাকে এগিয়ে রাখে। শুধুমাত্র এসব বাইকই পারে চালককে অপরাজিত ও রোমাঞ্চকর অনুভুতি দিতে।

স্পোর্টস বাইক বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্রমেই এসব বাইকের চাহিদা বাড়ছে, প্রতিবছর বিক্রির পরিমাণ প্রায় ১ লাখ। তাদের দাবি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটতি আর গতিসীমার কারণে এখনও পুরোপুরি বাজার ধরতে পারেনি এসব বাইক।

সূত্র বলছে, দফায় দফায় লকডাউনের কারণে এসব বাইক স্থানীয় বাজারে বিপণনে কিছু বাধার সম্মুখীন হলেও, স্পোর্টস বাইক শিল্প এরই মধ্যে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখিয়েছে।

টিভিএস অটো বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার রায় বলেন, “আমাদের কাছে বাজারের আকার সম্পর্কে সঠিক তথ্য নেই। কিন্তু বার্ষিক বিক্রির প্রবৃদ্ধি প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। বার্ষিক স্পোর্টস বাইক বিক্রির পরিমাণ ১ লাখ ইউনিটের বেশি।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে স্পোর্টস বাইকের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এটির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। টিভিএস এ্যাপাচি এর সকল মডেলই স্পোর্টস ক্যাটাগরির। আমরা আমাদের গ্রাহকদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি।”

রাজধানীর শনির আখড়ার ক্রিসেন্ট এন্টারপ্রাইজ সাউথের সেলস এক্সিকিউটিভ অনন্ত জান্নাত বলেন, “আজকাল তরুণদের সাধারণ বাইকের চেয়ে স্পোর্টস বাইকই পছন্দ। ইয়ামাহা আর১৫ ভি৩ এর চাহিদা এর সমগোত্রীয় অন্য বাইকগুলোর চেয়ে বেশি।

তিনি আরও বলেন, “আমরা সপ্তাহে ৬ থেকে ৭টি ইয়ামাহা আর১৫ ভি৩ বিক্রি করছি। আর গত বছর সপ্তাহে ২-৩টি বাইক বিক্রি করেছি।”

“বর্তমানে থাইল্যান্ড, ভারত এবং ইন্দোনেশিয়া বাংলাদেশে আর১৫ রপ্তানি করে। এসব দেশের উপর নির্ভর করে বাইকের দাম।”

আশুলিয়ার জাপান বাইক সিটির সহকারী ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবদুল বাতেন অন্যান্য ডিলারদের মতো আশাবাদী। তিনি বলেন, “গত কয়েক বছরে আমাদের বিক্রয় দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমানে এর চাহিদা বাড়লেও লকডাউনে এর সরবরাহ মারাত্মক ব্যাহত হয়েছে।”

শো-রুমগুলোতে বিভিন্ন ধরনের স্পোর্টস বাইক রয়েছে। তাদের মধ্যে সুজুকি জিএসএক্স-আর১৫০ বাইক প্রেমীদের কাছে সবচেয়ে পছন্দের।

বাইক ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ১৬৫ সিসি সক্ষমতার বাইকের চেয়ে আরও বেশি গতির এ ধরনের যানবাহন তারা আমদানি করতে পারছেন না।

ইন্দোনেশিয়ান আর১৫, লিফান কেপিআর ১৬৫, জনটেস জেটটি১৫৫-ইউ ওয়ান, জনটেস জেটটি১৫৫-জি ওয়ান এবং জনটেস জেটটি-১৫৫ ইউ, এসব মোটরটাইকেল রাজধনীর মাটিকাটার মোটো সলিউশন নামের শো-রুমে দেখা গেছে।

বিক্রয় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা নাসিফ আহমেদ খান বলেন, “লকডাউনের মধ্যেও গ্রাহকরা তাদের পছন্দের স্পোর্টস বাইক সম্পর্কে জানতে মোবাইল ফেনে যোগাযোগ করতেন।”

বর্তমানে বিক্রি ভালো বলেও জানান তিনি।

বনানীর তারো বাংলার প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা নাদিম আনাম উতশো বলেন, “তরুণরাই আমাদের প্রধান গ্রাহক। আমরা ইতালীয় ব্র্যান্ড টেরো জিপি১ ভি৩ এবং চায়না-অ্যাসেম্বল্ড স্পোর্টস বাইক বিক্রি করি। যার দাম ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা।”

এ খাতের সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, স্পোর্টস বাইক চালানোর জন্য মসৃণ রাস্তার প্রয়োজন। এটি করা গেলে বিক্রি বাড়বে। এছাড়া শহরে বহুবর্ষজীবী গ্রিডলকও চালকদের গতিতে লাগাম টানছে।

স্পোর্টস মোটরসাইকেলের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে, ইয়ামাহা আর১৫ ভি৩, হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর, কাওয়াসাকি নিনজা ১২৫, সুজুকি জিএসএক্স অর ১৫০, ইয়ামাহা এমটি ১৫, আপরিলিয়া আর এস ৪ ১২৫, কেটিএম আরসি ১২৫, ইয়ামাহা এম-স্লাজ ১৫০, কেটিএম ডিউক ১২৫ এবং সুজুকি গিজজার এসএফ।

বর্তমানে একটি ভালো মানের একটি স্পোর্টস বাইক বিক্রি হয় ৫ লাখ টাকার উপরে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য বলছে, ২০১০ থেকে ২০২১ এর মে পর্যন্ত নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৩২ লাখ ৫৮ হাজার ৬৯৭টি। এর মধ্যে ৩ লাখ ১১ হাজার ৬টি নিবন্ধিত হয়েছে ২০২০ সালে।

ফরচুর বিজনেস ইনসাইটস প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে বিশ্বে মোটরসাইকেল বাজার ছিল ২৭৮.০৭ বিলিয়ন ডলারের। তবে করোনা মহামারির কারণে সকল অঞ্চলেই তা হোচট খেয়েছে।

চলতি বছর স্পোর্টস বাইকের বৈশ্বিক বাজার ৮.৮ শতাংশ বা ২৯৮.৫৮ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পাবে, যা ২০২২ সালে ৪৮৫.৬৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

ওয়ালটনের অতিরিক্ত অপারেটিভ ডিরেক্টর মো. মুস্তাফিজুর রহমান দ্য বিজনেস পোস্ট'কে বলেন, “আমাদের দেশে স্পোর্টস বাইকের চাহিদা দিন দিন বাড়েই চলেছে। এটি বিবেচনায় নিয়ে স্থানীয় বাজারের জন্য আমাদের স্পোর্টস বাইক তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে আমরা ই-বাইক নিয়ে কাজ করছি এবং আগামী দিনে আমরা স্পোর্টস বাইক তৈরিতেও কাজ করব।”