বাংলাদেশে সম্ভবত প্রথম কোনো মেয়ে যে কিনা নিজের বিয়েতে নেচে ভাইরাল হয়েছেন। নয়া দামান্দ বললেই প্রথম যার কথা সবার মনে আসে। তিনি হলেন খুলনা মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজা ইসলাম সূচনা।
সূচনার বিয়ের অনুষ্ঠানে ১৫ মার্চ তার বন্ধু-স্বজনদের এই নাচের ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছিলো শখের বশে। পরদিন ‘ছায়াছবি’ প্রোডাকশনের পেজ থেকে গানটি আপলোড করা হলে লোকগানের মনকাড়া সুর আর পরিবার-পরিজন নিয়ে সূচনার সাবলীল পরিবেশনা ঝড় তোলে স্যোশাল মিডিয়ায়।
ভাইরাল হয়ে যায় সিলেটের লোকগীতি নয়া দামান্দ এর রিমিক্স ভার্সন। প্রবাসী শিল্পি মুজা ও তোশিবার এই গানের সাথে সূচনা ইসলাম ও অন্যদের নাচের এই ভিডিওটি এখন পর্যন্ত দেখা ও শোনা হয়েছে প্রায় পৌনে ১ কোটি বার।
সিলেটের আঞ্চলিক গানটির শিল্পী তোসিবা ও মুজা হলেও গানটি ভাইরাল হয় খুলনার মেডিকেল শিক্ষার্থী সূচনার নাচের সঙ্গে। এরপর গানটি টিকটক লাইকিতে তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। সর্বশেষ ভাইরাল হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজেন তিন চিকিৎসকের নৃত্যের পর।
মনোমুগ্ধকর গান ‘আইলারে নয়া দামান্দ আসমানেও তেরা, বিছানা বিছাইয়া দেও শাইল ধানের নেরা, দামান্দ বও দামান্দ বও।’ গানটির ভিডিওটিতে দেখা যায় সাদা-লাল শাড়ি পরে একটি মেয়ে সখী পরিবেষ্টিত হয়ে ঘুরে ঘুরে নাচ করছেন।
সূচনা জানান, বিয়ের আগে রং খেলার দিন তাদের ওই নাচের ভিডিওটি ধারণ করা হয়।
আর দশটা বিয়ের প্রোগ্রামের মতই ছিলো বিষয়টি। তবে এই ভিডিও প্রকাশের পর সেটি যে এতটা ভাইরাল হবে তাও বুঝতে পারেননি সূচনা।
কোনো পূর্বপরিকল্পনা ছিল না তাদের। বিয়ের আগে রং খেলার আগের দিন রাতে বোন সাদিয়া, ইরানি আর বান্ধবী মনীষা, বর্ণালী, বৃষ্টি, শর্মী, মিম আর কাজিনদের নিয়ে বসে বসে সূচনা ভাবছিলেন পরদিন ছাদে গিয়ে কোন গানে নাচ করবেন তারা।
ঠিক তখন মুজো-তোসিবার নয়া দামান্দ গানটি বাজছিলো সূচনাদের বাসায়। গানটি মনে ধরে তাদের। সিদ্ধান্ত নেন পরদিন এই গানের সঙ্গেই নাচ করবেন। ছোট ছোট কিছু স্টেপ প্র্যাকটিস করে সকালবেলা সবাই সাদা ম্যাচিং পোশাক পরে চলে যান ছাদে।
রৌদ্রজ্জ্বল সকালে গানটির সঙ্গে নেচে গেয়ে রং খেলায় মেতে ওঠেন সূচনা ও তার স্বজনরা। সূচনার মা পারুল আক্তারকেও দেখা যায় সাদা-নীল শাড়ি পরে মেয়ের আনন্দের সঙ্গী হতে।
তাদের এই নাচের ভিডিও ধারণ করেন নির্মাতা সানি রহমান। এরপর তিনি সেটি এডিট করে ‘ছায়াছবি’ প্রোডাকশনের পেজে আপ করেন। আপলোড করার সাথে সাথেই সাড়া ফেলে গানটি। ছাড়িয়ে যায় মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ।
রং খেলার পরদিন ছিলো সূচনার মেহেদি'র অনুষ্ঠান। সূচনা ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন মেহেদি উৎসবে। এর মধ্যেই সূচনাকে সবাই বলতে থাকেন ‘তুমিতো হিট।’
গানটিতে ভাইরাল হওয়ার পর শ্বশুরবাড়িতেও বিশেষ সমাদর পান সূচনা। শ্বশুরবাড়ির ছোট ছোট বাচ্চাদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় তিনি।
সূচনার ভাষায়: ‘আমি যাদের মামী-চাচী তারা আমাকে বলে তুমিতো অনেক ফেমাস হয়ে গেছো। তুমি যখন মার্কেটে যাবা বা বাইরে যাবা তখনতো সবাই তোমার অটোগ্রাফ চাইবে।’
‘মেডিকেল কলেজের অনেক সিনিয়র-জুনিয়রদের কাছেও অনেক অ্যাপ্রিসিয়েশন পাচ্ছি। এসব খুব ভালোলাগে।’
স্বামী আহমেদ সাইফ মুনতাসীর এর কাছ থেকেও প্রতিনিয়ত পাচ্ছেন সমর্থন।
ভাইরাল বউ নিয়ে ভীষণ খুশি সূচনার শাশুড়িসহ শ্বশুরবাড়ির সবাই। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত নানা মজার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে এই নববধূকে।
সূচনা বলেন: ‘অনেক সময় দেখা যায় আমার ভাশুর ও ননদদের কাছে ফেসবুক মেসেঞ্জারে ভিডিওটি শেয়ার করে অন্যরা বলছেন এটা দেখো অনেক ভালোলাগবে। তখন গর্ব করে তারা বলতে পারেন এটাতো আমাদের বাড়ির বউ।’
সূচনার বাব-মাও ভীষণ খুশি মেয়ের এই খ্যাতিতে।
সাধারণ মানুষেরও বিস্তর ভালোবাসা পেয়েছেন সূচনা। যোগ করেন: ‘ফেসবুকে অনেক মেসেজ রিকোয়েস্ট আসে। সেখানে সবাই লেখে আপু আপনার জন্য অনেক ভালোবাসা। অনেক দোয়া।’
ভবিষ্যতে কিছু করলে ঈশ্বরের আশীর্বাদে এই দোয়া নিয়ে এগিয়ে যেতে চান সূচনা।
তবে নেতিবাচক মন্তব্যও অনেক পেয়েছেন তিনি। সেসব বিষয় একেবারেই আমলে নিচ্ছেন না নতুন সংসারে ব্যস্ত সূচনা।
এই নাচ এবং গান নিয়ে কোনো ধরনের ভুল বোঝাবুঝি বা বিতর্ক না হোক সেটাই তার চাওয়া।
সবার কাছ থেকে যে পরিমাণ ভালোবাসা পেয়েছেন সেই ভালোবাসা নিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে চান সূচনা।
সূচনার সুরে সুর মিলিয়ে ভিডিও চিত্রটির নির্মাতা সানি রহমান বিজনেস পোস্টকে জানান: একেবারে শখের বশেই গানটি বানানো হয়েছিলো।
তিনি বলেন: ‘নয়া দামান্দের ভিডিও নির্মাণের গল্পটি বলতে গিয়ে প্রথমে আমি বলবো; এটি বিয়ের কালার ফেস্টে ধারণ করা ভিডিও। বিয়ের রং ফেস্টে বিয়ের কনে, তার বোন এমনকি তার মা’ও এই গানে পারর্ফম করেছেন। তাদের সহজ ও সাবলীল মুভমেন্টগুলো আমি বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে ধারণ করি। এটি এডিট করি আমাদের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করার পর ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। মুজো-ভাই ও তোশিবা আপুর গাওয়া গানটি ভিডিওটিকে অনেক বেশি সুন্দর করেছে।’
সিলেটের মূল এই লোকগানটির গীতিকার শ্রীমতি দিব্যময়ী দাশ। তিনি কবি রসিক লালের স্ত্রী ও একুশে পদকপ্রাপ্ত পন্ডিত রামকানাই দাশ ও সুষমা দাশের মা। দিব্যময়ীর কাছ থেকে গানটি নিয়ে ইয়ারুন নেসা ১৯৭২-৭৩ সালে সিলেট রেডিওতে পরিবেশন করেন।