রিফাত ইসলাম
রাইড-শেয়ারিং ও ফুড ডেলিভারি সেবা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশি টেক স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান সহজ। চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর থেকে প্রতিষ্ঠানটির এ দুটি সেবা বন্ধ হতে যাচ্ছে।
মুনাফা অর্জনের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
দ্য বিজনেস পোস্ট'র সঙ্গে আলাপকালে কোম্পানির ফুড ডেলিভারি সার্ভিস শাখার একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, 'ইতোমধ্যেই আমাদের ট্রাক বুকিং পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও কিছু পরিষেবা বন্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। কারণ কোম্পানি মুনাফা অর্জনের জন্য সংগ্রাম করছে।'
রাইড-শেয়ারিং ও ফুড ডেলিভারি পরিষেবা বন্ধ করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কোম্পানিটি প্রায় ৫০ জন কর্মীকে বরখাস্ত করেছে বলে জানা গেছে।
প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকজন কর্মী দাবি করেছেন, ৩০ অক্টোবরকে শেষ কর্মদিবস উল্লেখ করে তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বুধবার প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মী বলেন, 'আমি তিন বছর ধরে তাদের ফুড ডেলিভারি শাখার একজন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করছি। আমাদের বেশকিছু অপারেশন বন্ধ করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আমাদের কাছে টার্মিনেশন লেটার এসেছে।'
প্রতিষ্ঠানটি তাদের ট্রাক ভাড়া পরিষেবা, টিকিট বুকিং, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো অন্যান্য বিভাগ থেকেও কর্মীদের ছাটাই করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
দ্য বিজনেস পোস্ট'কে দেওয়া এক বিবৃতিতে সহজ জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড বর্তমান পরিষেবাগুলো এবং ভবিষ্যত সম্ভাব্য পরিষেবা নিয়ে কৌশলগত উদ্যোগ পর্যালোচনা করছে।
প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, 'সেই পর্যালোচনার অংশ হিসেবে, আমরা আমাদের ট্রাক বুকিং বন্ধ করে দিয়েছি।'
সহজের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফরহাত আহমেদ বলেন, 'করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আরোপিত লকডাউন চালকদের অফলাইনে নিয়ে গেছে। এটা রাইড শেয়ারিং শিল্পকে বদলে দিয়েছে। সরকারের নিয়ম মেনে মহামারির সময় আমরা আমাদের রাইড শেয়ারিং পরিষেবা বন্ধ রেখেছিলাম। আমরা এখন পুনর্মূল্যায়ন করছি, কিভাবে এবং কখন এটি চালু করতে হবে।'
তবে কর্মীদের ছাঁটাই এবং কোম্পানির রাইড-শেয়ারিং এবং ফুড ডেলিভারি পরিষেবা বন্ধ করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার শেষ উপায় হিসেবে ১ অক্টোবর পর্যন্ত ফুড ডেলিভারি সেবায় বড় ধরনের ছাড় দিয়েছিল সহজ। কিন্তু তাতেও গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি।
কোম্পানির রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের সাথে জড়িত রাইডাররা জানিয়েছেন, ২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারি শুরু হলে রাইড শেয়ারিং বন্ধ হওয়ার আগে থেকেই সহজ অ্যাপ থেকে তুলনামূলকভাবে কম কল পেতেন তারা।
রাইড শেয়ারিং ড্রাইভার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমি গত বছর অ্যাপটি ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছিলাম কারণ এই অ্যাপে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় কোনো কল পাইনি। এছাড়াও সহজের ডিজিটাল ওয়ালেট পেমেন্ট সিস্টেমের কারণে আমাদের উপার্জনের টাকা হাতে পেতে অনেকটা সময় লাগতো।
সহজের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মালিহা কাদির এবং হেড অব মার্কেটিং গ্রেস কান্তা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তারা।
২০১৪ সালে অনলাইনে টিকিট কেনার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল সহজ। এরপর প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করে এবং লঞ্চ এবং মুভির টিকিটসহ অন্যান্য টিকিট সেবাও যোগ করে।
২০১৮ সালের মার্চে ঢাকায় রাইড শেয়ারিং পরিষেবা চালু করে সহজ। ওই বছর অক্টোবরে রাজধানীতে খাদ্য সরবরাহ সেবাও চালু করে প্রতিষ্ঠানটি।
গত বছরের ১৬ মে করোনা মহামারির মধ্যে সহজ হেলথ নামে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা চালু করে প্রতিষ্ঠানটি। এর মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের কাছ থেকে ভিডিও কলের মাধ্যমে পরামর্শ এবং চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ সরবরাহ করতে শুরু করে তারা। তাদের প্ল্যাটফর্মে শীর্ষ হাসপাতালের শতাধিক ডাক্তার এবং শতাধিক ফার্মেসি রয়েছে বলে দাবি করছে প্রতিষ্ঠানটি।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন গেট ভেনচারসের কাছ থেকে ১৫ মিলিয়ন ডলার তহবিল পায় সহজ। আর তাতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সবচেয়ে ভালো অর্থায়িত স্টার্টআপের তালিকায় স্থান পায় প্রতিষ্ঠানটি।