প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

পোষা প্রাণী পালনের ট্রেন্ড, প্যাকেট খাবারই ভরসা

১৮ অক্টোবর ২০২১ ১৫:৩৮:৫৬ | আপডেট: ২ years আগে
পোষা প্রাণী পালনের ট্রেন্ড, প্যাকেট খাবারই ভরসা

তাশরিফা তৃষা

দিন দিন যৌথ পরিবার কমছে, গড়ে উঠছে ছোট পরিবার। এর সঙ্গে নগরায়নের ফলে চাকরির উদ্দেশ্যে গ্রামের বাড়িতে থাকা পরিবার ছেড়ে শহরে থাকছেন অনেকেই। ফলে একাকীত্ব ও বিষণ্ণতা এড়াতে এখন পোষা প্রাণী লালন-পালন করতে আগ্রহী হচ্ছেন তারা।

যে কারণে, গত ১০ বছরে পোষা প্রাণী পালনে মানুষের আগ্রহ বেড়ে ২৫ থেকে ৬৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

আর এসব পোষা প্রাণীদের খাবারের জন্য রাজধানীর ২৬ শতাংশ কর্মজীবী ​​মানুষই প্রস্তুতকৃত খাবারের ওপর বেশি নির্ভরশীল।

বাচ্চা কিংবা প্রাপ্তবয়স্ক পোষা প্রাণী- বয়স অনুসারে বিভিন্ন ধরনের খাবার রয়েছে। হুইস্কাস, স্মার্ট হার্ট, লারা, ড্রুলস, রয়েল ক্যানিন, পেডিগ্রি এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আরও অনেক খাবার রয়েছে, যেগুলো এখন বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যায়।

মুরগি, টুনা মাছ, মাংস, কলিজা এবং দুধের স্বাদে প্যাকেজাত এসব খাবার পোষা প্রাণীদের কাছে পছন্দের। যেগুলো পরিবেশন করাও বেশ সহজ আর সময়সাপেক্ষ।

পেটস ফর লাইফের সহ-স্বত্বাধিকারী তাহেরা আক্তার বৃষ্টি দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বেলেন, আমরা থাইল্যান্ড থেকে পোষা প্রাণীর এসব পণ্য আমদানি করি এবং খুব যৌক্তিক মূল্যে বিক্রি করি, যাতে সব শ্রেণি পোষা পাণির মালিক তা কিনতে পারেন।

তিনি বলেন, কিছু অসাধু সরবরাহকারী ব্র্যান্ডের লোগো পরিবর্তন করে ভেজাল খাবার বিক্রি করছে, যা পোষা প্রাণীর জন্য খুবই ক্ষতিকর এবং এর কারণে অধিকাংশ পোষা প্রাণীর মৃত্যুও হয়। আমি পোষা প্রাণীর মালিক এবং প্রাণী প্রেমীদের বলবো, যেনো তারা ওইসব খাবারের ওপর অন্ধভাবে নির্ভর না করেন। এটি অতিরিক্ত খাবার হতে পারে, এর সঙ্গে তাজা বা সিদ্ধ মাছ, মাংসও পোষা প্রাণীদের খাওয়ানো উচিত।

রাজধানী ঢাকায় সবচেয়ে বেশি পালন করা হয় কুকুর, বিড়াল, কচ্ছপ, খরগোশ এবং কবুতর। এসবের প্রেমীরা তাদের পছন্দ, মানসিকতা এবং ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী তাদের প্রিয় পোষা প্রাণী নির্বাচন করে থাকেন। কিন্তু বিড়াল এবং কুকুর বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং পছন্দের পোষা প্রাণী।

ফার্সি বিড়াল, দেশি মিশ্র বিড়াল, মিশ্র জাতের বিড়াল, বেঙ্গল বিড়াল, মেইন কুন, বিদেশি শর্টহায়ার এবং রাগডল বিড়াল বাংলাদেশে পাওয়া যায়। কুকুরের মধ্যে পাওয়া যায় সরাইল হাউন্ড, পোমেরানিয়ান, ইন্ডিয়ান পারিয়া কুকুর, স্পিটজ, ল্যাব্রাডর এবং দেশি কুকুর।

ঢাকার কাটাবনে সারিবদ্ধ ১০০টিরও বেশি পোষা প্রাণী ও খাবারের দোকান রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন ধরনের খাবার পাওয়া যায়।

বার্ডস প্যালেস পোষা পাণির দোকানের মালিক বাবুল হাওলাদার (বাবু) বলেন, আমার দোকান থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০ প্যাকেট পোষা প্রাণীর খাবার বিক্রি হয়, যা থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করা। পশুর প্রতি মানুষের স্নেহ ও আবেগ দেখে আমি তৃপ্তি পাই। আমার দোকানে বিড়াল, কুকুর, পাখি এবং খরগোশের বিভিন্ন জাত রয়েছে। পুরুষ ও মহিলা উভয় গ্রাহকই এখানে পোষা প্রাণী এবং এদরে খাবার কিনতে আসেন।

তিনি বলেন, এ দোকান চালানোর তার ৪ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। নারীরা বিড়াল পালনে আগ্রহী, যেখানে পুরুষরা কুকুর পালন করতে চায়। উৎপাদিত খাবারে প্রোটিন থাকে যা পোষা প্রাণীদের সঠিক মাত্রায় পুষ্টি নিশ্চিত করে।

বাবুল হাওলাদার (বাবু) বলেন, বিদেশি জাতের পোষা প্রাণী সাধারণত দেশি গৃহজাত খাবার হজম করতে পারে না, এ জন্য তাদের আমদানিকৃত খাবারের প্রয়োজন হয়। তাদের সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি এবং সুশৃঙ্খল আচরণের কারণে মানুষ বিদেশি জাতের পোষা প্রাণীর মালিক হতে পছন্দ করে। কিছু দেশি প্রজাতির প্রাণীর মালিকও আমদানিকৃত খাবার কেনন, এই ভেবে যে, আমদানিকৃত খাদ্যাভাস তাদের পোষা প্রাণীর বন্য মনোভাব পরিবর্তন করতে পারে এবং সেগুলোকে ভাল আচরণ করতে শেখাবে।

পোষা প্রাণীর জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হলো ‘পেট ফর লাইফ’। যেখানে খাদ্য, কুকুর, বিড়াল, ছোট প্রাণী, সাজসজ্জা, পোষা প্রাণীর ব্যাগ এবং অন্যান্য পোষা প্রাণী সম্পর্কিত জিনিসপত্র পাওয়া যায়।

স্বাধীন কর্মজীবী নারী সুমিয়া আলম; যিনি একটি পোষা কুকুরের (ল্যাব্রাডর) মালিক। তিনি এক ফ্ল্যাটে একা থাকেন এবং অফিসে সারাদিন কাটিয়ে যখন তিনি বাসায় ফেরেন, তখন তিনি কারও সাথে কথা বলার বা সময় কাটানোর প্রয়োজন অনুভব করেন। মিশেল নামের তার পোষা প্রাণীটি তাকে ভালো সঙ্গ দেয় এবং সে মিশেলের সাথে খেলাধুলা করতেও পছন্দ করেন।

তিনি বলেন, আমার ৪ বছরের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর, আমি সম্পূর্ণ হতাশ হয়ে পড়ি এবং মানুষের প্রতি আমার বিশ্বাস প্রায় শেষ হয়ে যায়। তারপর আমি একটি পোষা প্রাণী রাখার সিদ্ধান্ত নেই এবং এভাবেই মিশেল আমার জীবনে এসেছিল। অফিসের চাপ থাকায়, বাসায় ফেরার পর আমি রাতে অধিকাংশ দিনই নিজের জন্য খাবার রান্না করতে পছন্দ করি না, তাই ফুডপান্ডা’র ওপর নির্ভর করি। সেইসাথে আমার পোষা প্রাণীটির জন্যও প্রস্তুতকৃত খাবারের ওপরই নির্ভর করি। প্রতি মাসে আমার পোষা প্রাণীর ৪ প্যাকেট খাবার দরকার হয়, যেগুলোর দাম ২ হাজার টাকা এবং এটি আমার জন্য যথেষ্ট ভাল।

পেট লাভারস বাংলাদেশ, ক্যাট সোসাইটি এবং পুচি ফ্যামিলি- এসব প্রাণী প্রেমীদের জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ। লাখ লাখ মানুষ এসব গ্রুপের সদস্য। এখানে প্রত্যেকেই তার নিজের পোষা প্রাণীর কার্যকলাপ, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি শেয়ার করেন। পোষা প্রাণীর মালিকরা তাদের পোষা প্রাণীকে তাদের সন্তানের মতোই মনে করেন।

বর্তমানে পোষা প্রাণীর লালন-পালন একটি ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে, নিজেকে ওই প্রবণতার সাথে যুক্ত করতেও পছন্দ করছে মানুষ।