প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী, বাড়ছে আমদানি ব্যয়

১৯ অক্টোবর ২০২১ ১২:৩৩:৩০ | আপডেট: ২ years আগে
ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী, বাড়ছে আমদানি ব্যয়

মেহেদী হাসান

গত তিন মাস ধরেই টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বাড়ছে, এতে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল্য পরিশোধে বাড়তি চাপ সামাল দিতে হচ্ছে দেশীয় আমদানিকারকদের।

তারা বলছেন, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় আমদানি খরচ বেড়েছে। এ প্রবণতা দেশের বাজারে আমদানি করা পণ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ১৭ অক্টোবর আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার ছিল প্রতি ডলারে ৮৫.৬৫ টাকা, যা ১৪ অক্টোবর ছিল ৮৫.৬০ টাকা। আর গত ২ অক্টোবর এ মিনিময় হার ছিল ৮৪.৮১ টাকা।

গত তিন মাসে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ০.৮৪ টাকা।

অবশ্য, কিছু ব্যাংক ইচ্ছাকৃতভাবে ডলারের সংকট সৃষ্টি এবং আমদানির জন্য এলসি খোলার ক্ষেত্রে উচ্চ হার আরোপ করছে বলেও অভিযোগ করেছেন আমদানিকারকরা।

তারা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত। কারণ, বাণিজ্যিক ব্যাংকের এলসি খোলার বিপরীতে ডলারের হার অতিরিক্ত নেয়া উচিত নয়।

টি কে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের গ্রুপ ডিরেক্টর মোহাম্মদ মোস্তফা হায়দার দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে আমদানি খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে।

তিনি বলেন, চলমান ডলার সংকটের সুযোগ নিয়ে বেশিরভাগ ব্যাংক এখন লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে ডলারের উচ্চ হার আরোপ করছে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মার্কিন ডলারের হারের ক্রমবর্ধমান প্রবণতার কারণে আমদানির ব্যয় বেড়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম-ভিত্তিক এক শিল্পপতি দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, ব্যাংকগুলো এখন আমদানিকারকদের কাছ থেকে দ্রুত অর্থ আয় করছে। তার আশঙ্কা, বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা অর্থ মন্ত্রণালয় যদি অবিলম্বে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে, তাহলে শিল্প পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে এবং শিল্পায়নের গতিও বাধাগ্রস্ত হবে।

কিন্তু ব্যাংকাররা বলেন, দেশের অর্থনীতি এবং ব্যবসা পুনরায় চালু হওয়ায় আমদানির মূল্য পরিশোধের পরিমাণ বাড়ায় মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত, এলসি খোলার পরিমাণ দাঁড়িযেছে ১০.৭৭ বিলিয়ন ডলারে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৫.৩১ শতাংশ বেশি।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসাইন বলেন, বিশ্ববাজারে পণ্যের ক্রমবর্ধমান দাম আমদানি ব্যয় বাড়িয়েছে, কিন্তু আমদানির পরিমাণ বাড়েনি।

তিনি বলেন, এটি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের চিত্র নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান প্রবণতার কারণে আমদানি ব্যয় বেড়েছে।

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি অভ্যন্তরীণ বাজারেও প্রভাব ফেলবে, ফলে মুদ্রাস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউল হাসান বলেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়া এবং আমদানির অর্থ পরিশোধে বিলম্ব সুবিধা শেষ হওয়ার কারণেও বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। 

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে টানা চতুর্থ মাসের মতো রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। কারণ, কঠোর নিষেধাজ্ঞার পর অবৈধ ক্রস বর্ডার লেনদেন ‘হুন্ডি’ পদ্ধতির ব্যবহার বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ গত বছরের তুলনায় ১৯.৭৪ শতাংশ কমে তা নেমে এসেছে ১.৭২ বিলিয়ন ডলারে।

ডলার বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক

টাকার অবমূল্যায়ন মোকাবেলায় চলতি বছরের আগস্ট থেকে ব্যাংকে মার্কিন ডলার বিক্রি শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত, দেশের ব্যাংকিং খাতে ১ হাজার ১৯৩ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর আগে জুলাই পর্যন্ত ২০৫ মিলিয়ন ডলার কিনেছিল। গত অর্থবছরে, দেশীয় ব্যাংক থেকে ৭.৯৩ বিলিয়ন ডলার কিনে বাংলাদেশ ব্যাংক।