প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

গ্রিন টি: আরামদায়ক পানীয়র চেয়েও বেশি কিছু

২২ অক্টোবর ২০২১ ১৬:২৮:৩৮ | আপডেট: ২ years আগে
গ্রিন টি: আরামদায়ক পানীয়র চেয়েও বেশি কিছু

আরিফুর রহমান তুহিন

গ্রিন টি একটি জনপ্রিয় পানীয়। স্বাস্থ্যকর প্রভাবের জন্য বর্তমানে এটি সর্বজন সমাদৃত। স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিদের কাছে উর্ধ্বমুখী চাহিদার প্রেক্ষিতে জনপ্রিয় আরামদায়ক পানীয়তে পরিণত হয়েছে এটি।

ক্রমবর্ধমান চাহিদা পরিপ্রেক্ষিতে চা উৎপাদনকারীদের পাশাপাশি ব্র্যান্ডেড গ্রিন টি আমদানিকারকরা আরও বাজার অংশ দখল করতে চাইছেন।

গ্রিন টি উৎপাদন এবং আমদানি জোরালোভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে কারণ উৎপাদক এবং আমদানিকারকরা তাদের পোর্টফোলিওতে এটি যুক্ত করছে এবং ভোক্তাদের চাহিদা পূরণ করছে।

এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতি বছর গ্রিন টি ব্যবহার প্রায় ২০ শতাংশ হারে বাড়ছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২০ সালে গ্রিন টি আমদানি ৭৬.৪৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৬৪ হাজার কিলোগ্রামে দাঁড়িয়েছে। এর আগের বছর আমদানির পরিমাণ ছিল ৩৪ হাজার কিলোগ্রাম। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৩৫ হাজার কেজি গ্রিন টি আমদানি করা হয়েছে।

এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মোট ব্যবহারের মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ গ্রিন টি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়।

কেন ব্যবহার বাড়ছে

কাজী অ্যান্ড কাজী টি'র নির্বাহী তৌসিফ আহমেদ দ্য বিজনেস পোস্ট'কে বলেন, 'আজকাল মানুষ তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে বেশি সচেতন। এজন্য স্বাস্থ্য সুবিধাসমূহ বিবেচনা করে গ্রিন টি'র দিকে ঝুঁকছে।'

তিনি বলেন, 'দেশের মোট গ্রাহকদের প্রায় ৩ শতাংশ গ্রিন টি এবং বাকি ০.৫০ শতাংশ অর্গানিক টি পান করে।'

কাজী অ্যান্ড কাজী টি একমাত্র কোম্পানি, যারা গ্রিন টি এবং অর্গানিক টি উৎপাদন করছে এবং দুটি অংশেই সবচেয়ে বড় মার্কেট শেয়ার দখল করে আছে।

করোনা মহামারি চলাকালীন গ্রীন টি'র ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পায় কারণ করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য লোকজন ঘন ঘন লেবু, আদা এবং অন্যান্য মশলা দিয়ে তৈরি চা পান করেছে।

তাওসিফ নামে এক ব্যক্তি বলেন, 'গ্রিন টিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এজন্য অতিরিক্ত ওজন সম্পন্ন মানুষ ওজন কমাতে গ্রিন টি পান করেন। অন্যদিকে কেউ ডাক্তার বা পুষ্টিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী এটি পান করেন।'

ঢাকার রমনার বাসিন্দা মনিরুজ্জামান বলেন, 'কয়েক মাস আগে, আমার কার্ডিয়াক অ্যাটাক হয়েছিল এবং ডাক্তার আমাকে নিয়মিত গ্রিন টি পান করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তখন থেকেই আমি এটা পান করছি।'

তিনি জানান, গ্রিন টি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে এবং মেটাবলিজম হার বাড়িয়ে মেদ ও ওজন কমাতে সহায়তা করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে অধ্যাপক ডা. মো: সাইদুল আরেফিনের মতে, গ্রিন টি স্বাস্থ্যের জন্য একটি উপকারী পানীয়। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে এবং এটি পানকারীদের কোলেস্টেরল কমিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে।

তবে রোগা ও পাতলা ব্যক্তিদের গ্রিন টি এড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন সাইদুল আরেফিন।

এদিকে জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতা গ্রিন টি ব্যবহার আরও বৃদ্ধি করেছে।

দ্য বিজনেস পোস্ট'র সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো: আশরাফুল ইসলাম বলেন, গ্রিন টি'র ব্যবহার বেড়েছে। কিন্তু এটির বাজার এখনও তেমন বড় নয়।

তিনি আরও বলেন, 'কেউ কেউ এটাকে ফ্যাশন হিসেবে নিয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেতে সময় লাগবে। জনসাধারণ এখনও লিকার চা পছন্দ করেন।;

গ্রিন টি'র দাম

কাজী অ্যান্ড কাজী অর্গানিক গ্রিন ৪০টি ব্যাগ সমৃদ্ধ প্যাকেট ১৭০ টাকায়, ফিনলে ৫০টি ব্যাগ সমৃদ্ধ প্যাকেট ১১০ টাকায়, ৫০টি ব্যাগসহ জাফলং গ্রিন টি ২৩০ টাকায় এবং ১২৫ গ্রাম গ্রিন টি ১১০ টাকা দামে বিক্রি করা হয়।

সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে গ্রিন টি 

একসময় সুপার শপ এবং পশ এলাকায় গ্রিন টি পাওয়া যেত। তবে এখন বেশিরভাগ টি-স্টলে গ্রিন টি পাওয়া যায়।

মিরপুরের এক মুদি দোকানের মালিক মো: আলমাস বলেন, 'মাত্র কয়েক বছর আগে আমার দোকানে গ্রিন টি'র তেমন কোনো গ্রাহক ছিল না। এখন আমি প্রতিদিন গ্রিন টি প্যাকেট বিক্রি করছি।'

আলমাস জানান, গ্রিন টি'র চাহিদা প্রতিদিন বাড়ছে। ভোক্তারা এখন বিভিন্ন স্বাদযুক্ত চায়ের ব্যাপারেও জিজ্ঞাসা করেন।

গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে বাজারে বিভিন্ন ধরনের গ্রিন টি পাওয়া যায়। এগুলো হল আদা চা, তুলসী চা, মেডলি চা, অর্থোডক্স ব্ল্যাক টি, অর্থোডক্স গ্রিন টি, জেসমিন গ্রিন টি এবং হোয়াইট টি।

কিছু মুদি দোকান ও সুপার শপ পরিদর্শন করে দ্য বিজনেস পোস্ট দেখতে পায়, গ্রিন টি'র বাজারে কাজী অ্যান্ড কাজী, জাফলং, ইস্পাহানি ও ফিনলে আধিপত্য বিস্তার করছে। এর মধ্যে কাজী অ্যান্ড কাজী বাজারের শীর্ষে রয়েছে।

সংবাদদাতার সাথে অভিজ্ঞতা শেয়ার করে রাজধানীর গ্রিন রোড এলাকার একটি টি স্টলের মালিক এখলাসুর রহমান বলেন, 'প্রথমদিকে যখন কোম্পানিগুলো গ্রিন টি বিক্রি করার জন্য আমার কাছে আসে, আমি সেগুলো উপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু এখন আমি প্রতিদিন ভালো সংখ্যক গ্রিন টি বিক্রি করছি।'

ওরিয়ন গ্রুপের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান জাফলং টি কোম্পানির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, 'মানুষের আচরণ এবং সামর্থ্য পরিবর্তিত হওয়ার সাথে সাথে যারা ঢাকার বাইরে বসবাস করছে তারাও গ্রিন টি গ্রহণ করছে।'

তিনি আরও বলেন, 'ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে মিল রেখে আমরা চীন থেকে গ্রিন টি আমদানি করে আমাদের ব্র্যান্ডের নামে এটি বাজারজাত করছি।'